নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মহাদেও নদী থেকে নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করায় ইজারা বাতিল করা হয়েছে!
গত বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ স্বাক্ষরিত আদেশে উপজেলার ওমরগাঁও, হাসানোয়াগাঁও ও বিশাউতি পযন্ত ৬ নম্বর বালু মহালের ইজারা বাতিল করা হয়। বালু মহালের নিষেধাজ্ঞা জারি করে ও লাল নিশান দিয়ে সরকারের অনুকূলে নেয়া হয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ সাংবাদিকের জানান , ‘তফসিল বর্হিভুত স্থান থেকে বালু-পাথর উত্তোলন, কোন অননুমোদিত ড্রেজার ব্যবহার, নির্ধারিত মাত্রার অধিক গভীরতায় বালু-পাথর উত্তোলন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত, বালু পরিবহনে জনগণের চলাচলে বিঘ্নসহ ইজারা চুক্তির ১৫, ১৭, ১৯, ২০, ২৭ ও ৩১ নম্বর শর্তবলির বিধিবিধান লঙ্ঘন,পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫,খনিজ সম্পদ বিধিমালা ২০১১, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১১ এর ১১(২) অনুচ্ছেদ ৬৩ নম্বর শর্ত মোতাবেক ওমরগাঁও, হাসানোয়াগাঁও এবং বিশাউতি পযন্ত বালু মহালের ১৪২৯ বঙ্গাব্দের ৩০ চৈত্র পযন্ত মেয়াদের ইজারাদেশ বাতিল করা হয়েছে। বালুমহালটি এখন সরকারের অনুকূলে আনয়ন করা হয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কলমাকান্দার মহাদেও নদীর ওমরগাঁও, হাসানোয়াগাঁও এবং বিশাউতি মৌজায় ৩৫ দশমিক ১৫ একর বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়। ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকায় ইজারা পান দুর্গাপুরের গুদারিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. চাঁন মিয়া নামের এক ব্যক্তি। ইজারাদার ইজারাকৃত নিদিষ্ট জায়গা থেকে বালু উত্তোলন না করে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ভারতের মেঘালয় সীমান্তবর্তী পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাত মহাদেও, সন্নাসীপাড়া, চিকনটুপ, বরুয়াকোনা, পাতলাবনসহ নদের বিভিন্ন এলাকা থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলন করে। এতে করে এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্টের পাশাপাশি নদীর গতিপথ পরিবর্তন, নদের তীরের বাড়ি ঘর, ফসলি জমি, বাগান, স্থানীয় বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জা, রাস্তা-ঘাটসহ বেশ কিছু স্থাপনা ভেঙে যাচ্ছে। অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধের দাবিতে মহাদেও নদী রক্ষা কমিটি, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা, বাপা, পবা, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন,বাংলাদেশ গারো লিঙাম ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, ট্রাইব্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নসহ স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছিল। এনিয়ে বিভিন্ন সময়ে একাধিক পত্রিকায় ও একাধিক বেসরকারি টিভি চ্যানেলে এ সংক্রান্ত খবর প্রচার করা হয়েছিল।
সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর মহাদেও নদ রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরে অভিযোগ তদন্ত করতে কলমাকান্দা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় (১০ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার ইজারা বাতিল করা হয়।
মহাদেও নদ রক্ষা কমিটির সভাপতি লুয়ের নংমিন ও গারো লিঙাম ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পিটারসন কুবি বলেন, ‘মহাদেও নদের বালু আমাদের কাছে রীতিমতো দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রভাবশলীরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে আমাদের আদিবাসী অনেক পরিবারের বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বাজার, রাস্তা-ঘাট ভেঙে গেছে। ইজারা বাতিল করায় আমাদের মাঝে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ জন্য জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে যেন আর ইজারা না দেয়া হয় দাবি করছেন।
এ ব্যাপারে ইজারাদার চান মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এবিষয়ে রবিবার (১৩ নভেম্বর) বিকালে কলমাকান্দা উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. শহীদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ডিসি স্যারের ইজারা বাতিলের চিঠি পেয়ে উপজেলার ওমরগাঁও, হাসানোয়াগাঁও ও বিশাউতি পযন্ত ৬ নম্বর বালু মহালের প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করে ও লাল নিশান দিয়ে সরকারের অনুকূলে নেয়া হয়েছে। যারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন: কেন্দুয়ায় শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে নানা আয়োজন