
মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের বিক্ষোভ মিছিল
ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ, আমদানী কারক ও স-রুম গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং দ্রব্যমূল্য কমানো, বর্তমান বাজারদরের সমন্বয় করে রিকশা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ, রিকশা ও ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মৌলভীবাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন।
১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের চৌমুহনাস্থ কার্যালয় থেকে মিছিল সহকারে শত শত রিকশা শ্রমিক পাতাকুড়িরর সামনে সমাবেশ করে। জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনয়িনের সভাপতি মোঃ সোহেল মিয়া, সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া, সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক জসিমউদ্দিনের নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে রিকশা শ্রমিকদের সমস্যা সংকটের কথা তুলে তা সমাধানের দাবি জানান। পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ শ্রমিকদের সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং শ্রমিকদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন।
বক্তারা বলেন, রিকশা-ভ্যান শ্রমিকরা প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত প্রখর রোদ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অমানুষিক পরিশ্রম করে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে দুঃখ কষ্টের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে জমি-জমা হারিয়ে জীবিকার তাগিদে শহরে রিকশা-ভ্যান চালিয়ে যাত্রী সাধারণের সেবা প্রদানের মাধ্যমে জীবন ও জীবিকা রক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত। তার উপর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বাজারে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। এরকম সময়ে শহরে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ তৎপরতা শ্রমিকদের আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
অথচ গত ৪ এপ্রিল/২০২২ উচ্চ আদালতের এক রায়ে মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত তিন চাকার যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলেও আঞ্চলিক সড়কে ও শহরের মধ্যে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচলে কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। তারপরও সম্প্রতি ব্যাপকভাবে ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ভ্যান ধরপাকড় চলছে। এরকম সময়ে শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা না করে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ চরম অমানবিক। অথচ ব্যাটারি চালিত এসকল রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইক বিক্রিতে কোন বাঁধা নেই, এমন কি এখনও শোরূম খোলে এসব পরিবহণ বিক্রি হচ্ছে। জীবন ও জীবিকা রক্ষার্থে শহরের নি¤œ আয়ের লোকজন এবং রিকশা চালকরা ব্যাটারি ও মোটর চালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই সকল রিকশার অধিকাংশের মালিকই হচ্ছেন রিকশা চালক নিজে, যারা এনজিও ও মহাজনের নিকট হতে উচ্চ সুদে ঋণ করে অথবা নিজের শেষ সহায়-সম্বলটুকু বিক্রি করে ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন। মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার বদলে ব্যাটারি ও মোটর চালিত এই রিকশায় শ্রমিকরা যেমন তুলনামূলক সহজে কম পরিশ্রমে যাত্রী পরিবহণ করতে পারছেন তেমনি অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী সাধারণের কাছে স্বল্প খরচে আরামদায়ক পরিবহণ হিসেবে এই সকল রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার কারণে বর্তমানে দেশের অনেক জেলায় এমন কি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর, জুড়ী, বড়লেখা উপজেলাতেও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান অবাধে চলছে, এমনকি অনেক উপজেলাতে পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে।
অথচ একই সময়ে মৌলভীবাজার শহর হতে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদের তৎপরতা চলছে। নিরিহ, দরিদ্র, অবহেলিত রিকশা শ্রমিকদের রুটি রোজীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে রিকশা উচ্ছেদের তৎপরতা চললেও ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান বিক্রিতে কোন রকম বাঁধা-নিষেধ নেই। নানা অজুহাতে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ শত শত রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে ফেলবে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন পিপিএম বলেন, শহর জুড়ে ব্যাটারি চালিত রিকশা, টমটম ও সিএনজির যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারনে যানজট লেগে থাকছে। তাই এসব রিকশা চলবে গলির রাস্তায় শহরে নয়, যানঝট মুক্ত ও পরিচ্ছন্ন শহর রাখতে ও জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সচেতন সহযোগি কামনা করেন তিনি।
আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শাটডাউন দুর্ভোগে সাড়ে ছয় লক্ষাধিক গ্রাহক
মো.শাহজাহান মিয়া