
আকিব শিকদার ছবি: সংগৃহীত
ইটচাপা হলুদ ঘাসেরা
বাঁশবনে গুই সাপের হাঁ-করা মুখ দেখে অকস্মাৎ
যারা দেয় আপ্রাণ দৌড়
আমি তাদের শঙ্কাচ্ছন্নতায় মুচকি হাসি। সন্ধ্যার অশ্বত্থ শাঁখে
নাকী সুর শুনে জুতো খুলে ছুঁড়েছিলাম ঢিল
শাঁখচুন্নিদের- সেই সুবাদে খোয়া গেছে
বাঁ পায়ের একপাটি নাগড়া চটি। যাক, দুঃখ নেই তাতে।
একটা সময় ছিল-
গোরস্তানের মাঠে ঝুঁকে থাকা তাল গাছটায়
পারিনি চড়তে কিছুতেই
অথচ এখন তরতর উঠে যাই
দেবদারুর চূড়ায় তোয়াক্কা না করে বিষ পিঁপড়ের কামড়। সময়
মানুষকে করতে শেখায় সব।
আকাশে উড়ছে শকুন
বাতাস দ্বিখÐকর চিৎকারে। ওরা মৃত্যু ভালবাসে
এবং চায় ভেজাতে চঞ্চু জীবন্তের রক্তে। আমাদের চৌদিকে
গাঢ় আগুনের আঁচ, বরফে মশাল
জ্বলছে ভীষণ দাউ দাউ।
আমার কণ্ঠে তাই বজ্রপাতের মতো
তুমুল হুংকার, হাতের পতাকা যেন জ্বলে ওঠা বাতিস্তম্ভ।
আমাদের মুমূর্ষু মানুষগুলো
জলে ডুবে যেতে যেতে হঠাৎ আঁকড়ে ধরে তৃণ উঠে বসবেই
একদিন, আর আমি বলে রাখিÑইট চাপা হলুদ ঘাসেরা
ইট ঠেলে নিশ্চিত মাথা তুলবেই আকাশে।
অন্ধগুহার ক্ষ্যাপাটে
এদেশ আমার চামচিকার গন্ধবিদগ্ধ
অন্ধগুহা, গলিতে গলিতে যার
নিঃসহায় মানুষজন শুকনো জিভ বের করা ক্লান্ত জন্তু।
যুদ্ধার্জিত স্বাধীন নাগরিকেরা যে দেশের
অশ্বমেধের ঘোড়া, চোখ কানামাছি করা কলুর বলদ, থাকবেইÑ
দেখেও না দেখার ভান ধরে।
বালির উপর গড়ায় কারও রক্ত, যার মানবিক মূল্য
পায় যদি সে গাড়ির চাকায় ছিচকানো নোংড়া জলের সমানÑ
ধন্য জীবন। দুশ্চিন্তা রেখা কপালে সবার
ফুটে আছে ফুটিফাটা চোত-বোশেখি জমির মতন, ক্রন্ধনজয়মন্ত্র
ভুলে গেছে বাসিন্দারা সেই কবে।
তবু কেউ কেউ এরই মাঝে
এমনি চাটুকার, গায় শুনা গান প্রভুদের শেখানো সুরে, আর হাসেÑ
নিঃসীম তুষামুদি অট্টহাসি।
এসব দেখেই ক্ষ্যাপাটে আমি
তুলি অস্ত্র নিজেরই বুকের দিকে। স্বেচ্ছায় করি লন্ডভন্ড
আদিগন্ত রেললাইন ভীষণ ক্রোধে, ভাঙি নিজেরই হাতে গড়া
সীমান্ত নিজের।
এদেশ আমার চামচিকার গন্ধ বিদগ্ধ
অন্ধগুহা, আর এর বাসিন্দারা! কি বলবো, সহজ কথায়
ঘৃণা করতেও ঘেন্না লাগে। ঢের ভালো
এর থেকে আঙিনায় ভাঙা উনুনের পাশে ছায়ের গাদায়
লেজ গুটিয়ে চক্ষুবুজা একলা কুকুর।