ঝিনাইগাতীর এক কালের খরস্রোতা মহারশী নদী এখন মরাখালে পরিণত
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলায় এক কালের খরস্রোতা মহারশী নদী এখন মরাখালে পরিণত হয়েছে।বে-দখল হয়ে যাচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া মহারশী নদীর দু’পাড়ের শত শত একর জমি। অপরদিকে মহারশী নদীটি পানি শূন্য হয়ে পড়ায় পানির অভাবে সন্ধ্যাকুড়া থেকে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে।মহারশী নদীটি ভরাটের কারণে চরম অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে ও ফসলী মাঠে পরিণত হয়েছে। ফলে নদীটিতে পানি না থাকার ফলে মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে।
অথচ সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের মহারশী নদীকে ইতোপূর্বে বলা হতো মৎস্য সম্পদের ভান্ডার। দেশের মাছের চাহিদার এক বিরাট অংশের জোগান হতো মহারশী নদী থেকেই। মহারশি নদী ভরাট হয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ও অপরিকল্পিত মাছ আহরন এবং অত্যাধিক রাসায়নিক সার কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদি কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন ক্রমেই কমে আসতে আসতে এখন এমন পর্যায়ে এসেছে যে, হাট-বাজারে এখন আর দেশীয় প্রজাতির মাছ চোখেই পড়েনা। অবশ্য প্রাকৃতিক এসব মাছের বংশবিস্তারে বিপর্যয়ের আরো নানা কারণ রয়েছে বলে পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না থাকায় এবং নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় মহারশী নদীটি বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। অথচ মাত্র দুই দশক আগেও ভাটি এলাকার অনেক লোক পাল তোলা নৌকায় এই নদী পথেই ঝিনাইগাতীতে হাট-বাজার করতো। যে দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। বর্তমানে শীর্ণ রূপ নিয়েছে মহারশী নদীতে। ফলে প্রাকৃতিক মৎস্য সম্পদও ধ্বংস হয়ে গেছে, তেমনি ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। বৃষ্টি না হওয়ার ফলে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে কিছু কিছু মাছের ডিম শুকিয়ে গেছে মাছের পেটেই।
সামান্য বৃষ্টিতে পানি এলেও প্রাকৃতিক মাছ কৈ, মাগুর, শিং, মাগুর, টেংরা, পুটি, দারকিনা, মলা, ঢেলা, চিংড়ি ইত্যাদি ছোট মাছ ছাড়াও প্রাকৃতিক বড় বড় মাছ পাওয়া যেত এ নদীতে। কিন্তু কালক্রমে বর্তমানে চলছে দেশীয় প্রজাতির মাছের তীব্র আকাল। যেখানে মাত্র ক’বছর আগেও কিছু কিছু প্রাকৃতিক মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন আর সেই সব মাছ যেন দেখাই যাচ্ছে না। বলতে গেলে এসব মাছের পোনার দেখাও মিলছে না।
ফলে এসব এলাকার বিপুল সংখ্যক মৎস্যজীবি হয়ে পড়েছে বেকার। স্থানীয় লোকজন জানায়, যেখানে আদিকাল থেকেই গারো পাহাড়ী এলাকার মহারশী নদীতে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক মাছ পাওয়া যেত, সেখানেই চলছে এখন চরম মাছের আকাল। অতীতে এসব উৎস থেকে আরোহিত মাছ এখানকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানেও চলে যেত। আর এ সংকট দূর করতে সরকার দেশব্যাপী মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে প্লাবন ভূমিতে পোনা অবমুক্ত করে মাছ চাষ সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ঝিনাইগাতীতেও কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। কিন্তু তা কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে এ নিয়ে সচেতন মহলের রয়েছে ব্যাপক সন্দেহ। “প্লাবন ভূমিতে মৎস্য চাষ, দিন বদলের সু-বাতাস” এই শ্লোগান ঝিনাইগাতীতে কতটুকু বাস্তবায়িত হয়, নাকি কাগজ-পত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার সংশ্লিষ্ট বিভাগের। তবে বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিদের আশংকা আগামী বছর ঝিনাইগাতীতে প্রাকৃতিক মাছের সংকট আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
তাছাড়া রাসায়নিক সার ও কীটনাশক যথেষ্ট ব্যবহারও প্রাকৃতিক মাছের ধ্বংসের অন্যতম কারণ বলে সচেতন মহলের ধারণা। কৃষকরা জানান, মহারশী নদীর দু’পাড়ের কয়েক হাজার একর জমির ফসল উৎপাদন মহারশী নদীর পানির সেচের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রায় একযুগে বালুখেকোরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীটিকে মরা খালে পরিণত করে ফেলেছে। ফলে পানির অভাবে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে ইরি-বোরো চাষাবাদ।
অথচ নদীর নাব্যতা বাড়ানোর ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেই কোন মাথা ব্যথা। যেটুকু পানি রয়েছে তাতেই সেচ দিয়ে চাষাবাদ করা যেত, যদি সেচের মাধ্যমে অনবরত বালু সময়মতো পানি তোলা না হতো এমন মন্তব্য করছেন কৃষকরা। অথচ এ ব্যাপারে স্থানীয় কৃষি বিভাগেরও নেই কোন মাথা ব্যথা। ফলে অত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছে কৃষকরা। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম মহারশী নদীটি অবিলম্বে খননের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ঝিনাইগাতীতে কারিতাস সিডস প্রকল্পের ৫ বছর ব্যাপী উপজেলা পযার্য়ে কর্মসূচীর সমাপনী সভা