শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

পার্থিবের কৃষ্ণ ভাবনা

মুক্তগদ্য

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ২৮ এপ্রিল ২০২৩

পার্থিবের কৃষ্ণ ভাবনা

পার্থিবের কৃষ্ণ ভাবনা

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী মহাশয়ের ‘ছেলেদের মহাভারত’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘আমাদের মহাভারত’ রাজশেখর বসুর ‘মহাভারতের সারানুবাদ’, স্টার জলসা, সনি টেলিভিশন প্রভৃতিতে প্রচারিত সিরিয়াল মহাভারত, আর ঠাকুমার মুখে শোনা মহাভারত সব মিলে নয় বছরের পার্থিবের কাছে কৃষ্ণ এক অতি পরিচিত প্রিয় নাম। শুধুই কি নাম। কৃষ্ণের ছবি আঁকা হয়ে গেছে তার মনে। কৃষ্ণের ভূবন ভুলানো হাসি। বাঁশের বাঁশি। বাঁশির সুর। সুদর্শন চক্র। চক্রের দাপট। কৃষ্ণের বিশ্বরূপের বিক্রম সবই এখন তার ছোট মনে মোটা দাগের ছবি।

কংস, কারাগার, বাসুদেব, দেবকী, নন্দঘোষ, যশোধা,বলরাম,শকুনি, অর্জুন ,ধৃতরাষ্ট্র,ভীম নামগুলো পার্থিবের অতিপরিচিত। মনেই হয় না ছয় সাত হাজার বছরের পুরানো ঘটনা। প্রতিদিন মহাভারতের চরিত্রগুলোই আমাদের আশে পাশেই বিরাজ করছে। দাবার ছক নিয়ে খেলতে বসে বড়বোনকে বলছে, বড়দিভাই, চল না লুডু খেলি। লুডুর চৌকার মধ্যে পাশা পাশা ভাব আছে। আমি শকুনি মামার মত ছয় বলেই চৌকা ফেলব। দেখিস ছয়ই উঠবে। ভয়ই হচ্ছে, শকুনি না হোক, ভবিষ্যতে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠিরের মত জুয়াড়ি না হয়ে ওঠে! লুকোচুরি খেলায় বলছে আমার চোখ বাঁধতে হবে না, তোরা বিশ্বাস কর আমি ধৃতরাষ্ট্রের মত থাকব। গান্ধারীর চোখ কিন্তু বাঁধা, বড়দিভাই, ঠাম্মা তুমরা গান্ধারীর মত চোখ বাঁধ। এই হল আমাদের বাসার নিত্যলীলা।

আমাদের বাসার নিচতলার বাসিন্দা কৃষ্ণ বাবু। পেশায় দুধ বিক্রেতা। দুধের ফেরিওয়ালা বলা যেতে পারে। কারণ তিনি গোয়ালা বা ঘোষ নন। তার নিজের গাভী নেই। অন্যের খামার থেকে দুধ কিনে এনে তা প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি করেন। আমাদের বাসার কৃষ্ণ। তাই তাকে নন্দ ঘোষের বংশধর বলতে পারলাম না। তবুও কৃষ্ণ । গোয়ালা নন কিন্তু দুধ বেচা তার পেশা। দেবকীনন্দনের মত তার সুদর্শন চক্র নেই, তবে দ্বিচক্রজান একখানা আছে। সেটাতেই চলে তার দুধের বিপনন। যমুনা পাড়ি দিতে হয় না ,তাই বলে ঘরে বসে থাকেন না। দ্বিচক্রজানে চড়ে কিন ব্রিজের উপর দিয়ে সুরমা পাড়ি দেন। কলির এ কৃষ্ণ খুব পরিশ্রমী।

পার্থিবের সঙ্গে কৃষ্ণ বাবুর দেখা সাক্ষাৎ হয়। কথা হয় না তেমন। কেবল হাই-হ্যালো। কিন্তু প্রশ্নের স্তুপ জমেছে তার কোমল মনে। মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর আমাদের বাসার কৃষ্ণ কোন মিল নেই কেন ? কাজের কোন মিল নেই, তবে তার নাম কৃষ্ণ কেন ? এই কৃষ্ণের গায়ের রং; না সাদা না কালো। না আছে বাঁশি, না আছে গাভী। না আছে ভাই বলরাম, না আছে রাখাল বন্ধু। না আছে রথ না আছে সুদর্শন চক্র। মহাভারতের কৃষ্ণের মত সুন্দর পোশাক, সাজ-সজ্জ্বা কিছুই নেই।

কৌতুহল মেটাতে কৃষ্ণ বাবুর বাসার অন্দর মহলটা দেখা চাই। কৃষ্ণ বলে কথা, বাহিরের চাল চলন দেখেই কি কৃষ্ণ চেনা যায় ? সে সুযোগ পেয়ে গেল পার্থিব। একদিন মায়ের সাথে কৃষ্ণ বাবুর বাসায় প্রবেশ করল পার্থিব। অবাক কান্ড কৃষ্ণ বাবুর বাসাতো তার বাসার মতই। মহাভারতের ফুল, পাখি, ঝরণা ,সিংহাসন কিছুই নজরে পড়ছে না। কৃষ্ণ বাবুর স্ত্রীকে দেখল। না! উনিতো রুক্স্মিনী নন। সাদা দেয়ালের ঠাকুর ঘরে মহাভারতের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ঝুলছেন। আর আমাদের বাসার কৃষ্ণ বসে ভগবান কৃষ্ণের প্রার্থনা করছেন। পার্থিবের ছোট মাথা আর কুলাতে পারল না। বাসায় এসে ঠাকুমাকে তার কৃষ্ণ কাহিনী বল্ল।

 ঠাকুমা বল্লেন,

যে ই কৃষ্ণ , সে ই কৃষ্ণ , ভজ নিষ্ঠা করি।

তাতেই সহায় হোন, আপনি শ্রী হরি।

ঠাকুমা পার্থিবকে বসালেন। তার অস্থির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। শান্ত হও দাদু ভাই। তুমিই কৃষ্ণ। কৃষ্ণ যখন অর্জুনকে বিশ্বরূপ দেখালেন তখন কী দেখলে মনে নেই ? চন্দ্র –সূর্য্য, দেব-দানব, মানুষ ,পশু-পাখি, গাছ-পালা ,আগুন-পানি সবই কৃষ্ণতেই মিলিয়ে গেল । কৃষ্ণ ছিলেন, থাকবেন। পার্থিব বল্ল –কিন্তু তিনি যে ব্যাধের তীরের আঘাতে মারা গেলেন।

আরে বোকা, মানুষরূপে জন্ম নিলে সকলকেই মরতে হয়। জন্মের উদ্দেশ্যেই যে মৃত্যু। তবে মহামানব, দেবতা ,ভগবানের অবতার বলে কয়ে মরেন। আমাদের মত টুপ- টাপ মরে যান না। কৃষ্ণ মরার পূর্বেই তাঁর মৃত্যু কিরূপে হবে তার বিবৃতি দিয়েছেন ব্যাসদেব। মরলে কি হবে, অসুররা স্বস্তির কারণ পাবে না। কারণ ভগবান মহাভারতে বলেছেন, তিনি বার বার পৃথিবীতে আসবেন। পৃথিবীর বুকে যখনই অধর্ম বাড়বে তখনই তিনি অসাধু লোকের বিনাশ আর সাধুদের পরিত্রাণ করতে আসবেন। ধর্ম সংস্থাপন করবেন।

এইবার কিন্তু কৃষ্ণের আসতে দেরী হয়ে যাচ্ছে ঠাম্মা। পাড়ায় পাড়ায় অসৎ ছেলে-বুড়োতে ভরে আছে। আর কুকুরগুলো ! বের হলেই আক্রমণ করে। কৃষ্ণ যেভাবে বকাসুর,পুতোনা রাক্ষ্মসী বধ করেছেন সেভাবেই আমাদের পাড়ার কুকুরগুলোকে মারবেন। ঠাম্মা তুমি কৃষ্ণের কাছে একটু প্রার্থনা কর তাই যেন হয়। বাবার কাজের জায়গাতেও অনেকগুলো কুকুর পথ আগলে রাখে। বাবাও কুকুরগুলোকে ভয় পান। আমার সাথে মন দিয়ে খেলতে পারেন না। শুধুই  দুঃশ্চিন্তা করেন। দুষ্ঠু কুকুরদের হাত থেকে কিভাবে বাঁচবেন। আমাদের রক্ষা করবেন। ওদেরকেও শাস্তি দিতে বল। বাবার দুঃশ্চিন্তা দূর করতে বল কৃষ্ণকে।

জান ঠাম্মা, কৃষ্ণের অ্যাকশন আমার খুব প্রিয়। শত্রু ধরা পড়েছেতো মরেছে। কোন ছাড় নেই। শিশুপালকে কিভাবে মেরেছেন দেখেছো। এক থেকে একশ পর্য্ন্ত গুণেছেন । শিশুপাল কথা শুনেনি। পাপ করেই চলেছে। তাই রাজসভাতেই চক্র দিয়ে মাথা কেটেছেন শিশুপালের।

ঠিক বলেছিস দাদুভাই। কৃষ্ণ আমাদের মাঝেই আছেন। কিন্তু মহাভারতের কৃষ্ণ রূপে নেই। কৃষ্ণ যখন তখন চক্র হাতে কংস, জরাসন্ধ এদের বধ করছেন না। আধুনিককালে কৃষ্ণ নামধারীদের অভাব নেই। কৃষ্ণ নামের ভার সইবার ক্ষমতা নেই এদের অনেকের মধ্যে। শত্রু বধের চক্র দূরে থাক ,ধর্মচক্রেই এদের মতি নেই। দু একজন কুচক্রী কৃষ্ণ চাইলেই পাওয়া যাবে আশেপাশে। বাবা মা সন্তানের জন্মের সময় কত সাধ করে নাম রেখেছে কৃষ্ণ। আর যাই হোক নামের গুণে উদ্ধার পাবে সন্তান। আহা ! সেই কৃষ্ণ হয়েছে উল্টো। নাম শুনলে মানুষ ভয় পায়। চুরি বাটপারী আর জালিয়াতিতে কলির কোন কোন কৃষ্ণ মহাভারতের শকুনিকেও হার মানিয়েছে । আমরা এসব চিন্তা বাদ দিব দাদুভাই। শুধু মন প্রাণ দিয়ে ভগবান কৃষ্ণকে ডাকব।

নাতি- ঠাকুমার মহাভারত আলাপ এক সময় শেষ হয়। কিন্তু এ আলাপ কি শেষ হওয়ার ?

মহাভারত মহাকাব্য থেকে ভগবান কৃষ্ণ কি বেরোবেন না ? পৃথিবীর নিপিড়িত নির্যাতিত মানুষের হাজার হাজার বছরের কৃষ্ণ কৃষ্ণ রোদন কী তাহলে বিফলে যাবে ?

যদি ভগবান কৃষ্ণ সহায় না হোন, তবে কৃষ্ণভক্তরা কি তাঁকে ডাকবে না ? কৃষ্ণ নাম জপ ভুলে যাবে। হাজার বছরের বাস্তবতা কখনই তা প্রমাণ করে না। কলি কালে ভক্ত প্রহল্লাদ নেই। তবে জন্মলব্ধ ধর্মীয় বিশ্বাস ছেড়ে দেয়া লোকের সংখ্যা হাতে গুণা যায়। বাপ দাদার ধর্মীয় বিশ্বাস টিকিয়ে রাখতে জীবন দেয় অধিকাংশ মানুষ। কৃষ্ণ ভক্তরা মনে করেন, যা কিছু অহর্নিশ ঘটছে সবই কৃষ্ণের ইচ্ছায়। হিন্দু রোহিঙ্গার ঘরে জন্মেছে তাই বৌদ্ধরা মারছে। সবই কৃষ্ণের ইচ্ছা। তিনিই সময় হলে তরাবেন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু হয়ে জন্মেছে, তাই নির্যাতিত হচ্ছে রামু,কুমিল্লা,শাল্লা, নড়াইলে। সবই তাঁর ইচ্ছা। ভগবান কৃষ্ণই বিচার করবেন। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যের কবিরা কৃষ্ণের চক্রের রুদ্ররূপের ভয়ানক ক্ষতি করেছেন। রাসলীলায় কৃষ্ণ বিভোর, রাধার প্রেমের মূল্য দেয়াই কৃষ্ণের একমাত্র কাজ ! তাদের অলস মস্তিষ্কের রচিত পদ কৃষ্ণ ভক্তরা এখন গিলছেন। কুরুক্ষেত্র বা অন্য যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণ কখনও রাসলীলার কথা ভেবেছেন বলে মনে হয়না। কিন্তু অবুঝ কৃষ্ণ ভক্ত, কৃষ্ণের তাবৎ উপদেশ বেমালুম হয়ে শুধু রাধা প্রেমের কথা ভাবছে। ভিটে ছাড়া হয়ে ভাঙ্গা ভিটেতে উপুড় হয়ে রাধাকৃষ্ণের যুগল ছবি নিয়ে কাঁদছে। অত্মরক্ষার কথা ভুলে গেলে কৃষ্ণ রক্ষা করবেন কি ?

তাই এ বছরের কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপিত হোক এই প্রার্থনার মধ্য দিয়ে-

হে কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু, যজ্ঞ আর মন্ত্র থেকে বের হয়ে আস প্রভু। সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নাম। সারা বিশ্ব আজ কুরুক্ষেত্র। অর্জুনের মত যোদ্ধা নেই। কুরুরা আজ শতকে নেই বেড়েছে বিলিয়নে। পান্ডুরা আজ বিলুপ্ত। তাই আজ অপনাকেই আপনার নামের যথার্থতা প্রমাণ করতে হবে ভগবান। আর ফুল নয়, বাঁশি নয়, সুর নয়  চক্র আর গদা সজ্জিত হয়ে আপনাকেই লড়তে হবে ভগবান।

আরও পড়ুন: বারহাট্টায় ফসল কর্তন উৎসব ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত

রম্যলেখক

শীর্ষ সংবাদ:

ঈদ ও নববর্ষে পদ্মা সেতুতে ২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা টোল আদায়
নতুন বছর অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে: প্রধানমন্ত্রী
কলমাকান্দায় মোটরসাইকেলের চাকা ফেটে তিনজনের মৃত্যু
র‌্যাব-১৪’র অভিযানে ১৪৫ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক
সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত প্রকৃতি কন্যা জাফলং ও নীল নদ লালাখাল
কেন্দুয়ায় তিন দিনব্যাপী ‘জালাল মেলা’ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত
ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী চড়কসহ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত
কেন্দুয়ায় আউশ ধানের বীজ বিতরণ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
কলমাকান্দায় দেশীয় অস্ত্রসহ পিতাপুত্র আটক
ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামগঞ্জে জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে গোবরের তৈরি করা লাকড়ি গৃহবধূরা
ফুলবাড়ীতে এসিল্যান্ডের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন চাঁদা দাবি: থানায় জিডি দায়ের
ফুলবাড়ীতে সবজির দাম উর্ধ্বমূখী রাতারাতি দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ভোক্তা
ধর্মপাশায় সরকারি রাস্তার গাছ কেটে নিলো এক শিক্ষক
সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়ায় রামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা বহিস্কার
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ীতে অনশন
মসিকে ১০ কোটি টাকার সড়ক ও ড্রেনের কাজ উদ্বোধন করলেন মেয়র
কলমাকান্দায় নদীর পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক যতীন সরকারের জন্মদিন উদযাপন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ যতীন সরকারের ৮৮তম জন্মদিন আজ
১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে এমএলএম mtfe বন্ধ
কলমাকান্দায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লো তিন মাদক কারবারি
আটপাড়ায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১০৩ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
নকলায় ফাঁসিতে ঝুলে নেশাগ্রস্থ কিশোরের আত্মহত্যা
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস
কলমাকান্দায় আগুনে পুড়ে ২১ দোকানঘর ছাই

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 809