বর্ষাকাল আইলেই আমরা আশ্রয়নের ঘর ছাইড়্যা স্কুল ঘরে আশ্রয় লই
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার ১৪নং মোজাফরপুর ইউনিয়নের অর্ন্তগত বড়তলা আশ্রয়ন প্রকল্প-১ও ২। বড়তলা গ্রামের সামনে মহুরিয়া গ্রামের পাশে জালিয়ার হাওরের পশ্চিম তীরে রাজি নদীর কোল গেষে গড়ে উঠেছে এই আশ্রয়ন প্রকল্প। ভুমি ও গৃহহীন ভাসমান মানুষের আশ্রয় করে দিতে আগাশিয়া বিল মাটি দিয়ে ভরাট করে নির্মিত হয় বড়তলা আশ্রয়ন প্রকল্প-১ ও ২।
৮০-৯০ টি পরিবারের জন্য ঐ প্রকল্পে নির্মাণ করা হয় আধা-পাকা টিন সেট ঘর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রায়ন প্রকল্পের অধীনে এই
প্রকল্পের কাজ বাস্তাবায়ন করা হয়ে। নানা প্রকার সুবিধা ও অসুবিধার মধ্যে বর্তমানে এই প্রকল্পে ৪০-৪৫ টি পরিবার বসবাস করছেন। বসবাস কারি পরিবারের সদস্যরা বলছেন নানান সুখ-দুঃখের কথা। শেখ মো: সোনা মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমরার তাহনের জন্য সুন্দর ঘর বানাইয়া দিছেন। কিন্তু বর্ষাকাল আইলেই আমরা আশ্রয়নের ঘর ছাইড়া বড়তলা ও মহুরিয়া প্রাইমারি স্কুল ঘরে গিয়া আশ্রই লই।
তিনি বলেন আমরার ঘরের ভিট একহাত পানির নিচে তল অইয়া যায়। ঐ প্রকল্পে বসবাসকারী মো: লিটন মিয়া, মো: রাজু মিয়া, আনোয়ার হোসেন বলেন, বর্ষাকালের কথা মনে অইলে আমরার মাঝে আতংক দেহা দেয়। আমরার সাজানো ঘর- সংসারের খাট, চৌকি, ডেকডেক্সি, পাডি-বালিশ ও গরু-ছাগল লইয়া নৌকা দিয়া বড়তলা ও মহুরিয়া স্কুল ঘরে গিয়া আশ্রয় লই। ঘরগুলি বানানোর সময় আর দুইহাত উচা কইরে ভিট বানাইলে আমরার কপালে এত দুঃখ অইতো না।
তারা বলেন আশ্রয়ন ঘরে আশ্রয় লইয়াও বারো মাস থাকতে পারিনা। আমরা প্রধান মন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করি আমরার আশ্রয়নের ঘর গুলি ভাঙ্গিয়া উচা কইরা বানাইয়া দেওয়ার জন্য। যাতে বর্ষাকালে আমরার আশ্রয়নের ঘরের ভিটে পানি না উডে। ঐ প্রকল্পে বসবাসকারী মো: গিয়াসউদ্দিন, মো: পানজু মিয়া ও মানিক মিয়া বলেন, আমরার হগলের সমস্যা একটাই বর্ষাকালে ঘরের ভিট দেড়-দুই আত পানির নিচে থাহে। আমরা ঘর ছাইরে অন্য যায়গাই যায়। তিন- চার মাস পর আশ্বিন- কার্তিক মাসে আবার আইয়া ঘর-দরজা পরিষ্কার কইরা নতুন ভাবে সংসার সাজাই। আশ্রয়ন প্রকল্পের বসবাসকারীর সবাই বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দয়ালু।
তিনি সারাদেশেই অসহায় গরিব মানুষের জন্য সুন্দর-সুন্দর ঘর বানাইয়া দিছেন। কিন্তু আমরার কপালের এই দুঃখ দূর করার জন্য অনুরোধ করতাছি। যাতে আমরার ঘর গুলি ভাঙ্গিয়া উচা কইরে বানাইয়া দেওনের অডার দেন। আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা আশ্রয়ন প্রকল্পের মধ্যে একটি মসজিদ, একটি প্রাইমারি স্কুল ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার দাবি জানান।
আশ্রয়ন প্রকল্প পসঙ্গে মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকির আলম ভুঞা বলেন, এই প্রকল্পের কাজটি আমার পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর চৌধুরীর আমলে হয়েছে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজের পরিকল্পনায় সঠিক না থাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের ভিট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এগুলো উচু করা খুবই জরুরি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: আজিজুর রহমান বলেন, ঐ প্রকল্পের মাঝেই আমরা আরো ছয়টি নতুন ঘর তৈরি করেছি। এই ঘরগুলোর ভিট আগের ঘরগুলোর চেয়ে কিছুটা উচু করেছি। তবে আগের ঘর গুলির ভিট সংস্কারের মাধ্যমেই উচু করতে হবে। মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গির চৌধুরী বলেন, সে সময়ে সেনাবাহিনীর তথ্যাবায়নে প্রকল্পের সমুদ্বয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কতটুকু উচু করার দরকার ছিল তা তো তারাই চিন্তা করেছেন। এই মাপ সম্পর্কে তো আমাদের কোন ধারণা নাই।
কেন্দুয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালালের ভাষ্য, এই প্রকল্পের কাজ তখন কীভাবে করা হয়েছে তাতো আমি জানিনা । তবে প্রকল্পে বসবাসকারীদের কথা শুনেছি। বর্ষাকাল এলেই ঘরের ভিট পানির নিচে তলিয়ে যায়। এই ঘরের ভিট উচু করতে নতুন করে একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি করে প্রয়োজনীয় বরাদ্য পেলেই সংস্কার করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্বাস্থ্যসেবাখাতে প্রয়োজন সফটওয়্যার ও অবকাঠামোর উন্নয়ন