ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত জাফলং ও লালাখাল
নৈস্বর্গিক খাসিয়া জৈন্তার সবুজ সমারুহ বেষ্টিত উঁচু-নিচু কালো পাহাড়-টিলা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণা ধারা, সারিবদ্ধ চা বাগান, প্রাচ্যের রাণী হিসেবে খ্যাত প্রকৃতিক কন্যা জাফলং। পাহাড়ের চুুড়া বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণার স্বচ্ছ জলের সংস্পর্শে ঘুমন্ত পাথরের ঝি-ঝি শব্দ, শত বছর পুরোনা ঐতিহাসিক জৈন্তিয়া রাজ্যের নিদর্শন নারীর রাজ্য খ্যাত জৈন্তিয়া রাজার আবাসস্থল।
নীল নদ ক্ষেত সারী নদী, বর্ষায় না আসলেও অল্প বৃষ্টিতে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে পর্যটন স্পট গুলো। আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদের ছুটিতে ভ্রমণপ্রিয় মানুষজন বন্ধুবান্ধব পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসবেন দু’টি পাতা একটি কুড়ির দেশ সিলেট। তাই অন্যান্য সময়ের মতো এবারও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ভ্রমণপিপাসুদের নজর কাড়তে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জৈন্তাপুর,গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন।
সবুজ শ্যামল আর অপরূপ সাজে সজ্জিত প্রাচ্যের রাণী সিলেটের জাফলং, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরধার করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়কের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়জিত রয়েছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ। তবে এবারে সিলেটের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রগুলো স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নেই কোনো বিড়ম্বনা, তাই বিপুল পরিমাণ পর্যটকদের সমাগমের আশা রয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ট্যুরিষ্ট গাইড, হোটেল-রেস্তোরার মালিক পক্ষের।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে পর্যটনকেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি আবাসিক হোটেল, মোটেল, রির্সোট, রেস্টুরেন্ট ও দোকানগুলো সাজানো হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন আমেজে। ইতিমধ্যেই জৈন্তাপুর, জাফলং এলাকার অধিকাংশ হোটেল-মোটেল বুকিং হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। হোটেল জাফলং পয়েন্ট এর প্রপাইটর ও এফবিসিআই’র সদস্য জাফলং হোটেল মোটেল’র সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু বলেন, আমরা পর্যটকদের স্বার্থে ঈদ স্পেশাল বিভিন্ন প্যাকেজ দিয়েছি, জাফলং ভ্রমনে আসা পর্যটকরা স্বল্পমূল্যে তাদের চাহিদা মত রাত্রি যাপন ও খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পর্যটকদের সেবায় যেন কোনো কমতি না হয় সে বিষয়ে আমরা বিশেষ নজর রেখেছি। সিলেটের মধ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলায় পড়েছে বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্র। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, মায়াবী ঝর্ণা, পান্তুমাইসহ পর্যটনস্পটের আশপাশের এলাকাতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঈদের আগের দিন থেকে পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত জাফলং টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ সেবা সাপ্তাহ ঘোষনা দেওয়া হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলায় রয়েছে প্রতিবেশী মেঘালয় রাজ্যের ক্যালেরিয় থেকে প্রভাহিত নীল নদখ্যাত সারী নদী, লালাখাল চা বাগান, আকাশের সাথে হেলান দেওয় মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষা শ্রীপুর পিকনিক স্পট। রয়েছে ছড়িয়ে চিটিয়ে থাকা প্রাচিন জৈন্তিয়া রাজ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শণ, এছাড়াও সিলেট শহরে রয়েছে শাহজালাল (রা.) ও শাহপরাণ (রা.) মাজার।
জাফলং টুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ মোঃ রতন শেখ পিপিএম জানান, এবারের ঈদ উৎসব পালন করতে আসা দর্শনার্থী নির্বিগ্নে জিরো পয়েন্ট এলাকায় ঘুরা- ফেরা করবে, এর জন্য আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছি, হোটেল-মোটেল, টুরিস্ট গাইড সহ এসব সেবার সাথে জারা ঝড়িত সবার সাথে আমরা মতবিনিময় করে সেবার মান সুরক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের সেবা দিতে পর্যটন স্পটে সার্বক্ষণিক টুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত থাকবে।
জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তাজুল ইসলাম পিপিএম’র সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, এ বৎসর ঈদ ও বাংলা নববর্ষে ছুটি এক সাথে হওয়াতে লালাখাল ও জাফলং পর্যটকরে সমাগম পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই ঈদের দিন থেকে বেশ কয়েকটি পুলিশের মোবাইল টিম সিলেট তামাবিল সড়কে পর্যটকদের নিরাপদে আসা যাওয়ার জন্য কাজ করবে, পাশাপাশি তামাবিল হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান করে যানজট নিরসনে নিয়োজিত তাকবে, সকলের সহযোগিতা না থাকলে পুলিশের পক্ষে একা সব সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালিকা রুমাইয়া বলেন, এ বছর ঈদের ছুটিতে ভিন্ন মাত্রা পাবে পর্যটকরা, আবহাওয়া যদি অনুকুলে থাকে তাহলে পরিবারের ছোট বাচ্ছাদের নিয়ে ঈদ ভ্রমন আরাম দায়ক হবে। তাই আমরাও পর্যটকদের বরণ করতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানে থাকবো, পর্যটন এলাকা জাফলং বহুকাল থেকে বিশ্বের কাছে একটি পরিচিত নাম, যদিও স্থানটি গোয়াইনঘাট উপজেলায় সড়ক পথ ব্যবহার করতে হয় জৈন্তাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে, এ জন্য পর্যটকদের সেবায় আমাদের বেশী সময় দিতে হয়।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ঈদ উল ফিতর ও নববর্ষকে সামনে রেখে উপজেলার পর্যটন কমিটির সাথে আমরা সভা করেছি, জাফলং, পান্তুমাই, বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সকল সদস্য দের নিয়ে ভ্রমনে আসা মানুষ গুলোর সার্বিক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে থানা পুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। পর্যটকদের যাতে কোন প্রকার সমস্যা না হয় সে লক্ষে উপজেলা প্রশাসন যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে।
আরও পড়ুন: কেন্দুয়ায় তিন দিনব্যাপী ‘জালাল মেলা’ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত
গোলাম সরওয়ার বেলাল