বাঙালির স্বপ্নযাত্রার একটি দিন
তিনি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার জন্ম হয়েছিল বলেই আমরা স্বাধীনতা লাভ করতে সক্ষম হয়েছি। ঠিক তেমনি তার কন্যা শেখ হাসিনা জন্মেছিলেন বলেই সোনার বাংলা বিনির্মাণের পথ খুঁজে পেয়েছি। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। বাইগার নদীর পারঘেঁষে সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা টুঙ্গীপাড়া গ্রামটি খুবই বৈচিত্র্যময়। বাইগার নদীটি মধুমতি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পদ্মায় মিশে যায়।
বর্তমানে বাইগার নদীর কোনো অস্তিত্ব নেই। অনেক নদীই বিলীন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা যে বছর যে তারিখে জন্মগ্রহণ করেন, সে বছরই তার জন্মের মাত্র ৪৩ দিন আগে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। আমরা পাকিস্তানের একটি অংশ পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী। ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে প্রায় ২০০ বছরেরও বেশি সময় সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জিত হলেও বাঙালি জাতির জন্য ছিল মেকি স্বাধীনতা।
কেননা পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও শাসনভার চলে যায় অবাঙালিদের হাতে। পূর্ব পাকিস্তানের একটি ব্যবসায়িক মহকুমা শহর গোপালগঞ্জ নানা কারণে ঐতিহাসিক। কলকাতার সঙ্গে গোপালগঞ্জের ব্যবসার সংযোগ স্থাপন করে ব্রিটিশ সরকার গোপালগঞ্জকে ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত করেছিল। তখন থেকেই অর্থনৈতিক জোন হিসেবে গোপালগঞ্জ খ্যাতি লাভ করে। রাজনৈতিক ও পেশাগত কারণে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে ঢাকায় অবস্থান করতে হয়। সেই সুবাদে শেখ হাসিনা ঢাকায় পড়াশোনা করেন। ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। তিনি স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন।
বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান শেখ হাসিনা প্রত্যক্ষ করে রাজনীতিতে বাস্তবসম্মত জ্ঞান লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুর একান্ত আগ্রহে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনাকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়। অত্যন্ত সাদামাটা ও নিরাভরণ পরিবেশে শেখ হাসিনার বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। শেখ মুজিব তখন জেলখানায়।
বঙ্গবন্ধু আমাদের সোনার বাংলা বিনির্মাণে স্বপ্ন দেখালেন। যেমনটি দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতা ও মুক্তির স্বপ্ন। সেটি তিনি বাস্তবে পরিণত করেন। জাতির দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি ও বিদেশি ষড়যন্ত্রে জাতীয়তাবাদী মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে ঘাতকের বুলেটে নিহত হন। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এটা বাঙালির সৌভাগ্যই বলতে হবে। বিদেশে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা বিপন্ন জীবন অতিবাহিত করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতাও বিপন্ন হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগের ঐক্য ধরে রাখতে শেখ হাসিনাকে তার অবর্তমানে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এ বছরই ১৭ মে ৬ বছর পর স্বদেশের মাটিতে পা রাখেন। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য লাখ লাখ জনতা শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানায়।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় কীভাবে বাঙালির কান্ডারি হয়েছেন তারই ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা স্বপ্নযাত্রায় শেখ হাসিনার উজ্জ্বল উপস্থিতি গোটা জাতিকে করেছে আলোকিত। বঙ্গবন্ধুর আদুরে নাম হাসু, যে একদিন সবার মুখে হাসি ফোটাবেন, তা কী কোনোদিন কেউ ভেবেছে? এমনটির জন্যই তার জন্ম হয়েছে। দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করে দীর্ঘ সংগ্রাম লড়াইয়ের মাধ্যমে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে চলতে থাকেন। কিন্তু ২০০১ এর অক্টোবর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আবার ষড়যন্ত্রের জালে আটকে যান। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঠিকই ঘুরে দাঁড়ায়। টানা তিন মেয়াদে তিনি ক্ষমতায় থেকে দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।
বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিকভাবে মর্যাদার আসনে অবস্থান করছে। শেখ হাসিনা বাংলাশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি এখন বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সাহিত্যানুরাগী শেখ হাসিনা নিজেও একজন লেখক। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে সেবা ও ত্যাগ। তার এই দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে।
আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের তালিকায় নাম লেখাবে। বর্তমান উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অভিসিক্ত। শেখ হাসিনার জন্ম যেন বাঙালির স্বপ্নযাত্রারই একটি স্মরণীয় দিন। তিনি জন্মে সার্থক করেছেন বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশকে। তাই সার্থক জন্ম তার। পরম সৃষ্টিকর্তার কাছে এই মহান ও আমার প্রাণ প্রিয় নেত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা করি।
লেখক :রাজনীতিক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।