রোববার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

যুবলীগের সভা সঞ্চালনা করলেন সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামি

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

যুবলীগের সভা সঞ্চালনা করলেন সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামি

যুবলীগের সভা সঞ্চালনা করলেন সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামি

এবার যুবলীগের প্রস্তুতিমূলক সভা সঞ্চালনা করলেন সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামী শামীম খন্দকার। শুধু শামীম খন্দকার নয়, যুবলীগের প্রস্তুতিমূলক সভায় অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার ৮ নাম্বার আসামী ইসমাঈল হোসেন স্বপন মন্ডল।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বকশিগঞ্জে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সদস্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে উপজেলা যুবলীগ।

সেই সভার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উঠে নিন্দার ঝড়। একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী হয়ে জামিনে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহন করাকে ভালোভাবে দেখছে না জেলার সুধী সমাজসহ সকল স্তরের জনসাধারন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

উপজেলা যুবলীগের সদস্য শামীম খন্দকার বকশিগঞ্জের উত্তর বাজার এলাকার মৃত ফরহাদ হোসেন ফক্কার সন্তান এবং সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৯ নাম্বার আসামী। সাংবাদিক নাদিমের উপর হামলার স্থান থেকে শামীম খন্দকারের বাড়ি মাত্র ৩০-৪০ গজ দূরে। সম্প্রতি তিনি উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন নিয়ে এসেছেন।

সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন-“আমার বাবার হত্যা মামলার আসামীরা একে একে জামিনে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে। এতে দিন দিন আরো প্রভাবশালী হচ্ছে। এতে আমরা ভীতির মধ্যে আছি। আর তারা এসে কার সাথে রাজনীতি করছে এটি দেখলেই বোঝা যায় যে তারা কার কথায় চলে আর আমার বাবার হত্যার পেছনে কারা ছিলো।”

জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সাধারন সম্পাদক রাজন্য রুহানি বলেন-“একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামী জামিনে এসে এভাবে দলীয় কাজে অংশগ্রহন করলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। এই বিষয়টি দুঃখজনক। একটি দলে আরো অনেক নেতাকর্মী থাকে। সভা সঞ্চালনায় কেনো নাদিম হত্যা মামলার আসামীকে রাখা হবে এই বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আমরা চাই নাদিম হত্যা মামলার প্রকৃত আসামীদের বিচার হোক।”

এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শামীম খন্দকারকে মোবাইল ফোন করা হলে। তিনি উচ্চস্বরে বলেন-“আমি একজন দক্ষ সংগঠক, উচ্চ শিক্ষিত। আমার বিরুদ্ধে লেখার আগে একটু ভেবে চিন্তে লিখতে হবে। আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ি যতক্ষন পর্যন্ত আমি দোষী প্রমানিত না হবো ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে না। সবাই জানে আমি এর সাথে জড়িত না। এখন যদি খুচিয়ে খুচিয়ে তেল দেন, তাহলে তো মুশকিল। আপনি সেন্ট্রালে যোগাযোগ করেন।”

এসব বিষয়ে জামালপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি রাজন সাহা রাজু বলেন-“আমাদের বকশিগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের কমিটি অনেক আগের। এই কমিটির আহবায়ক নেপাল চন্দ্র সাহা রাজনীতিতে সক্রিয় নয়। একজন যুগ্ম আহবায় সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছেন আরেকজন যুগ্ম আহবায়ক দেশের বাইরে অবস্থান করায় উপজেলা যুবলীগের কমিটি তেমন সক্রিয় নয়।”

রাজন সাহা রাজু আরো বলেন-“সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামীরা যদি যুবলীগের পদে থাকে তাহলে আমাদের সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ি আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করবো। তবে তারা যদি যুবলীগের কোনো পদে না থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। তবুও আমি এই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।”

উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির যুবলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন পলাশের উদ্বোধনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া প্রস্তুতি সভায় বক্তব্য দেন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। এতে মাঠ পর্যায়ে কর্মীদেরকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দিক নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করার আহবান জানান নেতারা।

এসময় বক্তব্য রাখেন- প্রস্তুতি সভার প্রধান অতিথি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আগা সাইয়ুম। এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মিরাজ, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা, আনোয়ার হোসেন, উপজেলা যুবলীগের অন্যতম সদস্য ফরহাদ হোসেন পলাশ, উপজেলা যুবলীগের সদস্য হুমায়ুন কবির,যুবলীগ নেতা ফরহাদ রেজাসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার নিহত হন বাংলা নিউজের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় সাংবাদিক নাদিমের।

সাংবাদিক নাদিম নিহতের ঘটনায় ১৭ জুন বকশিগঞ্জ থানায় মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম। সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলায় এযাবত কারাগারে রয়েছে প্রধান আসামী বাবুসহ ১৭জন, কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন ২জন। উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়েছেন এজাহারভুক্ত ৭আসামী এবং এখনো পলাতক রয়েছেন বাবুর ছেলে রিফাতসহ ৫ আসামী। বকশিগঞ্জ থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পর এখন মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি।

আরও পড়ুন: শেরপুরের নকলায় ট্রলির চাপায় রিক্সা চালক নিহত

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 808