![নীরবে কেটে গেল শেরপুরের ছাত্রলীগ নেতা ভোলা হত্যা দিবস নীরবে কেটে গেল শেরপুরের ছাত্রলীগ নেতা ভোলা হত্যা দিবস](https://www.durjoybangla.com/media/imgAll/2023May/The-killing-day-of-Bhola-Chhatra-League-leader-of-Sherpur-passed-in-silence-2309300636.jpg)
নীরবে কেটে গেল শেরপুরের ছাত্রলীগ নেতা ভোলা হত্যা দিবস
২৬ সেপ্টেম্বর ছিল শেরপুর সরকারী কলেজ ছাত্র লীগ নেতা আশীষ দত্ত ভোলার ৩৫ তম হত্যা দিবস । এবারো নীরবে নিভৃতে কেটে গেল শহীদ আশীষ দত্ত ভোলা হত্যা দিবস। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯৮৭ সালের এদিনে শহীদ হয়েছিল ছাত্রলীগ নেতা আশীষ দত্ত ভোলা।শেরপুর সরকারী কলেজে ক্লাস শুরুর সময় আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে ছাত্র লীগ ও জাসদ ছাত্র লীগ দ্বন্দে জড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনা নিয়ে সন্ধ্যায় জেলা ও কলেজ শাখা ছাত্র লীগ নেতৃবৃন্দ শহরের খরমপুরস্থ সাবেক গভর্নর শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট আনিছুর রহমান সাহেবের বাসায় পরবর্তী করনীয় নিয়ে পরামর্শ সভায় মিলিত হন।সভা চলাকালে জাসদ ছাত্র লীগের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসীদের নিয়ে খরমপুর মসজিদ মোড় ও খরমপুর মোড় দু'দিক থেকে সভাস্থল ঘিরে ফেলে ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়।তাদের আক্রমণে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা ভয়ে এদিক সেদিক দৌড়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চালায়।
এসময় আক্রমণকারীদের ছুরির আঘাতে শেরপুর সরকারী কলেজ ছাত্র লীগ নেতা আশীষ দত্ত ভোলা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর মুমূর্ষু অবস্থায় শেরপুর জেলা ছাত্র লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ ভট্টাচার্য রিক্সাযোগে ভোলাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আবারো সন্ত্রাসীরা রিক্সার গতিরোধ করে আক্রমণ চালায়। কোনভাবে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
এ হত্যাকান্ড সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী সাবেক ছাত্র নেতা বর্তমান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইফতেখার হোসেন কাফী জুবেরী বলেন,কোন প্রকার উস্কানী ছাড়াই ভোলাকে হত্যা করা হয়েছে।আর মুজিব আদর্শের সৈনিক ছাত্র লীগ নেতা ভোলা হত্যাকারী বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা।এ কষ্ট রাখি কোথায়? ভোলা হত্যাকান্ডের সময় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তাপস কুমার সাহা স্মৃতিচারণ করে বলেন, কলেজে মিছিল করা নিয়ে ছাত্র লীগের সাথে জাসদ ছাত্র লীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ।
এ সংবাদ পেয়ে আমি এবং গোলাম কিবরিয়া লিটন তৎক্ষণাৎ কলেজে গিয়ে উপস্থিত হই। কলেজ নেতারা পুরো ঘটনা আমাদের অবহিত করেন। আমরা তাদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে সন্ধ্যায় পরামর্শ সভা হবে জানিয়ে আমরা চলে আসি। কিন্তু এ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যায় ছাত্র লীগের সভায় আক্রমণ করা সমুচিন হয়নি।যে হামলায় একটা তরতাজা প্রাণ মুজিব আদর্শের একজন সৈনিককে অকালে আমাদের হারাতে হয়েছে।তিনি আরো বলেন,১৯৮৮ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা শেরপুরে এসে ভোলার বাসায় গিয়ে ভোলার মাকে সান্তনা দিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং ভোলার পরিবারের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে ভোলার ছোট ভাই দেবাশীষ দত্তকে গনভবনে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন। ভোলার মা বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে আদর করেন। আমি গনভবনে নেত্রীর সাথে দুইবার দেখা করেছি। নেত্রী আমার ছোট ছেলেকে গনভবনে চাকুরী দিয়েছিলেন।নেত্রী আমার কথা মনযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং যে কোন বিষয়ে সরাসরি তার সাথে দেখা করে জানাতে বলেছেন।আমি নেত্রীর এমন মহানুভবতায় কৃতজ্ঞ।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার ছেলে হত্যাকারী আসামীদের যখন দেখি আওয়ামী লীগে যোগদান করে বড় পদ পদবী পেয়েছেন তখন বুকের ভেতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে।এজন্য কি আমার ছেলে ভোলার জীবন দিতে হয়েছিল?আমার হৃদয় ভেতরে ভেতরে দূমড়ে মূচড়ে যায়।তিনি প্রশ্ন করেন,বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ভোলা হত্যার খুনীরা যখন আওয়ামী লীগের পদ পায় তখন আর বুঝতে বাকী থাকেনা আওয়ামী লীগ আজ কোথায়?
উল্ল্যেখ্য,ভোলা হত্যার পর বাংলাদেশ ছাত্র লীগ কেন্দ্রীয় সংসদের উদ্দ্যোগে বেশ ক'বছর ভোলার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে।কিন্তু এখন আর তারা ভোলা হত্যা দিবস পালন করে না। ফি বছর ভোলা হত্যা দিবস কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগ বা স্থানীয় ছাত্র লীগ আর পালন করেনা। কেউ মনেই করেনা ভোলার কথা।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন অকুতোভয় সৈনিককে আমরা ভুলতে বসেছি।এটাই কি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ? প্রতি বছরের ন্যায় মুজিব আদর্শের সৈনিক শহীদ আশীষ দত্ত ভোলা হত্যা দিবস নীরবে নিভৃতে কেটে গেল।কেউ শ্মরণ করেনি ছাত্র লীগ নেতা শহীদ আশীষ দত্ত ভোলা কে।
আরও পড়ুন: দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত