ফুলবাড়ীতে নির্দেশনা অমান্য করে মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে অর্থ আদায় অভিভাবকদের ক্ষোভ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের থেকে কোনো ফি নেওয়া যাবে না এমন নিদের্শনা থাকলেও দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে অর্থ আদায়ের।
অর্থ না দেয়া হলে পরীক্ষার রুটিন দেয়া হবে না এবং পরীক্ষা দিতে দেয়া হবে না এমনও হুমকি প্রদানের অভিযোগ করছে শিক্ষার্থীরা। সরকারি এই নির্দেশনাটি অধিকাংশ অভিভাবক ও শিক্ষার্থী না জানায় এর সুযোগে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা আদায় করা হচ্ছে এমনটি অভিযোগ করছেন সচেতন অভিভাবকরা।
নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্ষপঞ্জি ২০২৩-এ উল্লিখিত মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রান্তিকের মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার রুটিন প্রণয়ন করবেন। সহকারী উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের তত্ত্বাবধানে শিক্ষকের মাধ্যমে জ্ঞান, অনুধাবন ও প্রয়োগমূলক শিখন ক্ষেত্র বিবেচনায় বিদ্যালয়/রোস্টারভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করতে হবে। মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে ফি গ্রহণ করা যাবে না।
অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে কোনোপ্রকার অর্থগ্রহণ করা যাবে না কিন্তু নিদের্শনা অমান্য করে নেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষার জন্য অর্থ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়ের শিক্ষকরা মূল্যায়ন পরীক্ষার নামে তৃতীয় শ্রেণিতে ৫০ টাকা, চতুর্থ শ্রেণিতে ৬০ টাকা এবং পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছে ৭০ টাকা নিয়েছেন। শিক্ষকরা এমনও বলেছেন যে, যারা পরীক্ষার এ অর্থ দিবে না তাদেরকে পরীক্ষার সময়সূচি দেয়া হবে না।
উপজেলার বেশ কিছু বিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষার্থী বলেন, শুনেছি সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে পরীক্ষার নামে কোনো টাকা নিবে না স্কুল। কিন্তু আমাদেরকে শ্রেণি কক্ষে স্যার-ম্যামরা বলেছেন, পরীক্ষার টাকা না দিলে পরীক্ষা দিতে দেয়া হবে না। পরীক্ষার রুটিনও দেয়া হবে না। অথচ আমাদের বন্ধু বাংলা সরকারি প্রাথমিকে পড়ে তাদের কাছে কোনোপ্রকার টাকা নেয়া হয়নি পরীক্ষার জন্য।
কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা বললে তারা জানান, পরীক্ষার জন্য যে কোনো টাকা নিতে পারবে না স্কুল এমন নিদের্শনার কথা অধিকাংশ অভিভাবক বা শিক্ষার্থীরাই জানে না। এরই সুযোগ নিয়ে উপজেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষার নামে অর্থ নেয়া হচ্ছে। যা মোটেও কাম্য না। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে তারা অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, নির্দেশনার চিঠি পেয়েও প্রতিটি স্কুলেই শিক্ষার্থীদের কাছে জোরপূর্বক অর্থ নেয়া হয়েছে। যা মোটেও ঠিক হয়নি।
অভিযুক্ত সুজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসকে মোহাম্মদ আলী বলেন, বিদ্যালয়ে মূল্যায়ন পরীক্ষা চলছে। শিক্ষার্থীদের কাছে সামান্য কিছু টাকা নেয়া হয়েছে পরীক্ষার জন্য। আমাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্লীপ ফাণ্ড থেকে অর্থ নিয়ে পরীক্ষা নেয়ার জন্য। নিষেধাজ্ঞার চিঠি দেরিতে পেয়েছি। আমরা পূর্বেই পরীক্ষার জন্য সামান্য অর্থ নিয়েছি। শিক্ষার্থীদের কাছে কত করে নেয়া হয়েছে সেটি আমি বলতে পারব না। এর জন্য একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। সেই কমিটির সিদ্ধান্তানুসারে অর্থ নেয়া হয়েছে। তবে শুধু আমরাই না উপজেলার ১০৯ টি বিদ্যালয়েই মূল্যায়ন ফি নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চকচকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা.শ্যামলী আক্তারকে তার মুঠোফোনে (০১৭১২-৯২৪১৬৩) একাধিকবার ফোনকল করা হলেও তিনি ফোনকল গ্রহণ করেন’নি।
বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফা আক্তার লাকী বলেন, অন্যান্য বিদ্যালয় মূল্যায়ন পরীক্ষার জন্য অর্থ নিয়েছে কি-না জানি না তবে আমার বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থী বা অভিভাকের কাছে কোনো অর্থ নেয়া হয়নি। আমরা নিজেদের তৈরি প্রশ্নপত্র দিয়েই পরীক্ষা নিচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মৎ হাসিনা ভূঁইয়া বলেন, সরকারি নিদের্শনা রয়েছে পাঠদান বা পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের কাছে কোনোপ্রকার অর্থ নেয়া যাবে না।
গত ৭ আগস্ট জেলায় মিটিং করা হয়েছে। মিটিং এর পর প্রতিটা বিদ্যালয়ে ওই নির্দেশনার চিঠি মেইল করা হয়েছে। যদি কেনো বিদ্যালয়ে পরীক্ষার জন্য অর্থ নেয়া হয়ে থাকে তবে বিষয়টি তদন্ত করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে সুজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: র্যাবের অভিযানে চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেফতার