বিচারের পরই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে: ড. ইউনূস
ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগ যে সব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, সেসব অপরাধের বিচার শেষে দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন -এ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. ইউনূস বলেন, "যখন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে, তখন দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হবে। তারা অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলের মতোই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার পাবে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।"
সাক্ষাৎকারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেওয়া এবং সেখান থেকে বক্তব্য দেওয়া নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, "ভারত শুধু তাকে আশ্রয়ই দেয়নি, বরং সেখান থেকে তার বক্তব্য দেওয়া আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। তার বক্তব্য শুনলেই জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়। এটি আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।"
তিনি জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে দ্বিধায় ছিলেন তিনি। তবে গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের কথা ভেবে দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। "প্রথমে আমি দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের ত্যাগের কথা বিবেচনা করে বলেছি, আমি আমার সেরাটা দেব," বলেন ড. ইউনূস।
টাইম ম্যাগাজিনের সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ড. ইউনূসের সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়। সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করা হয়, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ড. ইউনূসের সুসম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে শেখ হাসিনার পতনের পরও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছে।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরে আসলে সেটি নিয়ে শঙ্কার কথা বলেন তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্পের একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যু তোলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। "আওয়ামী লীগ এবং কিছু ভারতীয় আমেরিকানরা সম্ভবত ট্রাম্পকে দিয়ে বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায়। এটি আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ," বলেন ড. ইউনূস।
তবে তিনি বিশ্বাস করেন, ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে তিনি সহাবস্থান তৈরি করতে পারবেন। "ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী, আর আমরা ব্যবসায়িক পরিবেশেই কাজ করি। আমরা কারও কাছ থেকে অনুদান চাই না; বরং ব্যবসায়িক অংশীদার চাই," বলেন তিনি।
ড. ইউনূস জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানোর প্রচেষ্টা চলছে। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এ ব্যাপারে তাকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি জোর দেন, নির্বাচনের আগে সংস্কার কার্যক্রম অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। "এই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যই হলো সংস্কার। আমরা এটিকে বলছি বাংলাদেশ ২.০ । তবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন না হলে তারা হতাশ হতে পারে এবং এমনকি বলতে পারে, আওয়ামী লীগের সময়ই ভালো ছিল।"
তিনি সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, "আমাদের লক্ষ্য জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা এবং স্থায়ী পরিবর্তন আনা।"
আরও পড়ুনঃ শেরপুরে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের অপসারণে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ
