মন্দিরে হামলার মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে পারিবারিক মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও মারধরের অভিযোগে মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
প্রতিবাদকারীদের দাবি- মামলার বাদী হিন্দু ও আসামিদের বেশির ভাগই হিন্দু। তাহলে হিন্দুরা কিভাবে তাদের উপাসনালয়ে হামলা করবে? বাদী রাজন কৃষ্ণ চৌধুরী নিজের অপরাধকে ধামাচাপা দিতে ধর্মীয় উপাসনায়লকে ঢাল সিহেবে ব্যবহার করছে। নিজেদের জমি সংক্রান্ত ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে সামনে এনে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে তাদের হয়রানি করতে চাইছে।
শনিবার বেলা ১২টার দিকে মোহনগঞ্জের সমাজ জীবনপুর গ্রামে এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভুক্তভোগীরাসহ গ্রামের হিন্দু-মুসলমান দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে অংগ্রহণকারী এলাকাবাসী জানান, আমরা যারা আজ এখানে দাড়িয়েছি তাদের অধিকাংশই হিন্দু ধর্মের লোকজন। আমাদের বিরুদ্ধে মন্দিরে হামলার অভিযোগে মামলা করেছেন রাজন কৃষ্ণ চৌধুরী তিনিও একজন হিন্দু। বিষয়টি দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। আদালতে মাস্টার রোলে চাকরি করার সুবাধে রাজন গ্রামের হিন্দু-মুসলমান অনেককে মিথ্যা মামলা দিয়ে নাজেহাল করেছেন।
তার সাথে আমাদের একটি পুকুরের মালিকানা নিয়ে দ্ব›দ্ব রয়েছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। পুকুরটিতে রাজনের বাবা সাধন কৃষ্ণ চৌধুরীসহ পাঁচজন অংশীধার রয়েছেন। অন্যরা হলেন, একই গ্রামের রমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী, মনোয়ার হোসেন, আব্দুল হাই, আ. জব্বার ও মনোয়ার হোসেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার বিকেলে পুকুরের অংশীদার আব্দুর হাইকে মারধর করেন রাজন ও তার পরিবারের লোকজন।
এতে পুকুরের অপর অংশীদাররা প্রতিবাদ জানান। দুই পক্ষের কিছুটা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। কিন্তু রাজন এই ঘটনাকে তাদের পারিবারিক মন্দিরে হামলার অভিযোগ ও বাড়ি ঘরে লুটপাটের অভিযোগে থানায় মামলা করেন। মামলায় রমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী, আব্দুল হাই, জুয়েল মিয়া ও চয়ন চক্রবর্তীসহ ৯ জনকে আসামি করেন। পরে পুলিশ জুয়েল মিয়া ও চয়ন চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠান।
এলাকাবাসী আরও জানান, এ ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। অথচ রাজনের মিথ্যা মামলা গ্রহণ করেই দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। জমি সংক্রান্ত ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক ইস্যু তৈরি করার জন্য রাজন কৃষ্ণর শাস্তি দাবি করেন তারা।
পুকুরের অংশীদার ও মামলার প্রধান আসামি রমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী বলেন, রাজন কৃষ্ণর কাজ হলো মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা। আমাদের মারধর করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধেই মন্দিরে হামলার অভিযোগ তুলছে। ভুয়া সাম্প্রদায়িক ইস্যু তৈরির কারণে রাজনের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
শনিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে পারিবারিক উপসনায়লে হামলা বা ভাঙচুরের কোন দৃশ্য দেখা যায়নি। এমনকি অভিযোগকারী রাজন কৃষ্ণও ভাংচুরের কোন চিহ্ন দেখাতে পারেননি।
রাজন কৃষ্ণ চৌধুরী জানান, পুকুরটি আমার বাবা সাধন কৃষ্ণ চৌধুরীর একার। অন্যরা জোর করে মালিকানা দাবি করছেন। এর জেরে তারা আমাদের মন্দিরে হামলা করে প্রতিমা ও পূজোর জিনিসপত্র এলোমেলো করেছেন। সেই সাথে বাড়িতে হামলা করে লুটপাট ও আমার বাবাকে আঘাত করে আহত করেছেন।
মোহনগঞ্জ থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এক পক্ষ পুকুর সেচ দিচ্ছিল মাছ ধরার জন্য অন্য পক্ষ এতে বাধা দেয় এ নিয়ে তর্কতর্কি থেকে মারামারি পর্যন্ত গড়ায়। পুকুরের জায়গাটি প্রথমে হিন্দুদেরই ছিল। তাদের ভাইদের মধ্যে দুই-একজন কিছু অংশ মুসলমানদের কাছে বিক্রি করেছে। এ ঘটনায় এক পক্ষের একটি মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে অপর পক্ষও অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: শ্রীনগরে প্রতিবন্ধীসেবা সম্পর্কিত সচেতনতামূলক উঠান বৈঠক