
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন পার্কিং স্পটে অবৈধভাবে ট্রাক টার্মিনাল
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের যাত্রীদের ভিআইপি কার পার্কিং পরিণত হয়েছে অবৈধ ট্রাক টার্মিনালে। সরেজমিনে দেখা যায়, দিনরাত পার্কিং স্পট পরিপূর্ণ থাকে ভারি যানবাহন ও ট্রাকের সারিতে। রাত হলে বাড়ে শত শত ট্রাক-লরির আনাগোনা। পুরো মাঠ জুড়ে ট্রাকের বসতি।
ফলে যাত্রীদের নিয়ে আসা গাড়ি রাখার স্থান হচ্ছে না কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রেলের পার্কিংয়ে। শুধু পার্কিং নয়, জানা গেছে ডিমের আড়তদার, ফলের আড়তদার ও রিক্সা ভ্যান রাখার অবৈধ আস্তানায় পরিণত হয়েছে ভিআইপি কার পার্কিং। ভাড়া দেয়া হয়েছে গোডাউন ও রেলের জায়গা। রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি বারবার এড়িয়ে যান।
চট্টগ্রাম রেলওয়ের ১২ হাজার বর্গফুটের পার্কিং স্পটে অবৈধভাবে ট্রাক টার্মিনাল গড়ে তুলেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। ইজারার মেয়াদ শেষ হলেও এই টার্মিনাল দিয়ে বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি অথচ রেলওয়েকে কোন রাজস্বই দিচ্ছেনা। রেলওয়ের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজসে এই বাণিজ্য নির্বিঘ্নে চালাচ্ছে বলে অভিযাগ ওঠেছে। এ ব্যাপারে স্টেশন মাস্টার ও রেলওয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি কতৃপক্ষ।
তবে জেলা ট্রাক ও মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নাম প্রকাশে এক সহ-সভাপতি বলেন, ‘চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ওই স্থানটি অনেক দিন ধরেই ট্রাক টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রেলের জমি হলেও রেলের নিয়ন্ত্রণে নেই এটি। সেখানে সিন্ডিকেট করে ট্রাক রাখার বাণিজ্য চলছে বহুদিন। এতে আমাদের আপত্তি আছে। দ্রুত রেলওয়ে স্টেশন থেকে এসব ট্রাক সরানো দরকার।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা এসব সারি সারি ট্রাক দেখে বুঝার উপায় নেই এটি ট্রাক টার্মিনাল না রেল স্টেশন। এসব দৃশ্য দেখে দেশী বিদেশী ট্রেন যাত্রীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সংশ্লিষ্টদের অবহেলা এবং উদাসীনতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রেলস্টেশনটি এখন বস্তিতে পরিণত হয়েছে। রেলস্টেশনের পাশে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য রাখা পার্কিং এর জায়গাটি পুরো বেদখল হয়ে গেছে।
অভিযোগ অনেকের এটি ট্রাক টার্মিনালে পরিণত করেছেন শুধুমাত্র রেলের হর্তাকর্তারা। বাণিজ্যিক ট্রাক স্টেশন হিসেবে প্রতিরাতে ভাড়া দিচ্ছেন রেলের জায়গা। এখানে রাখা প্রতি ট্রাকের ভাড়া ২০০ টাকা, ছোট ট্রাক ১৫০ টাকা, কার ৫০ টাকা, বাইক ৩০ টাকা। বেশির ভাগ জায়গা দখল করেছে ট্রাকে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক এখানে রাখা হয়। দিনশেষে সিন্ডিকেটের পকেটে যাচ্ছে ট্রাক রাখার টাকা। মাস শেষ লাখ লাখ টাকা। বছরে কোটি টাকার বাণিজ্য শুধু ট্রাক থেকেই! যেন এসব দেখার রেলওয়েতে কেউ নেই।
স্থানীয়রা জানান, যাত্রীদের কারপার্কিং এর স্থলে ভারি যানবাহন সারিবদ্ধভাবে লরি, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, রিক্সা ও সিএনজি অটোরিকশা এবং ভাসমান দোকান বসানো হয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় করা হয়। একইভাবে পার্কিং এর জায়গা অলিখিতভাবে লিজ দেয়া হয়েছে ট্রাক চালকদের কাছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সিআই, জিআরপি পুলিশের ইনচার্জ টাকার বিনিময়ে রেলস্টেশনের উভয় পাশে ৩ শতাধিক ট্রাক রাখেন প্রতিরাতে।
স্থানীয়রা আরও জানান, এসবের কারণে সাধারণ যাত্রীরা তাদের গাড়ি পার্কিং করতে পারেন না। এসব ট্রাক রাখার কারণে পথচারী ও যাত্রীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ওই এলাকার ফুটপাতেও বসানো হয়েছে শতাধিক দোকান। ভাসমান দোকানের কারণে ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের চলাচলের উপায় নেই। রেলওয়ে স্টেশনের পুরো খালি জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া যাতায়াতে রাস্তার ওপরে, রেল স্টেশনের দুইপাশে বিভিন্ন ধরনের দোকান বসানো হয়েছে।
দোকানদারেরা জানান রেলওয়ে নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং জিআরপি কর্মকর্তাকে দৈনিক ৫ শত টাকা করে দেয়া হয়। আর এ টাকার বিনিময়েই রেলস্টেশনে পাশে দোকান বসানোর সুযোগ দেয়া হয়। তবে এসব কথা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রেল কতৃপক্ষ।
জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী জানান, ‘রেলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পার্কিং ইজারা দেওয়া হয়েছিল। তার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন করে আবারো পার্কিং ইজারা দেওয়া হবে। টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আমরা রেল ভবনে চিঠি পাটিয়েছি এখনো চিঠির জবাব আসেনি। রেল ভবনের নির্দেশনা মোতাবেক দুই জায়গায় টেন্ডার বক্স বসানো হবে, রেল ভবন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হেড অফিস সিআরবিতে। আমরা আবারও চিঠি পাঠাবো দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার জন্য।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, দোকানপাট দেখে দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বহিষ্কার করেন রেলমন্ত্রী মোঃ নূরুল ইসলাম। তাঁরা হলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শামস মো. তুষার ও স্টেশন ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী।