রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

হিন্দু নারীর পিতৃসম্পত্তির অধিকার বিষয়ে

প্রকাশিত: ১৪:২৬, ১৬ জুন ২০২৩

হিন্দু নারীর পিতৃসম্পত্তির অধিকার বিষয়ে

হিন্দু নারীর পিতৃসম্পত্তির অধিকার বিষয়ে

সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু নারীর অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে রুল জারি করায় মাননীয় আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। বিশেষ করে পিতার সম্পত্তিতে নারী ও পুরুষের সমানাধিকার চাওয়া রিটে আদালত সাড়া দিয়ে মানব ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নারী ও পুরুষ এক পুরুষের সন্তান। কিন্তু নারী পাবে শুধু ভালোবাসা আর লাঞ্ছনা। পুরুষ পাবে সকল সম্পত্তি আর নারীকে পরিচালনা করার ক্ষমতা।

আধুনিক সমাজে তা কল্পনা করা যায় না। তবুও তা চলছে। রিট এবং আদালতের রুল জারির পর হিন্দুত্ববাদী পুরুষতন্ত্র যা বলছে তাতে মনে হয় না আইন হলেও তা সহজে বাস্তবায়ন করা যাবে। আমরা নারীর জন্যে অনেক কিছুই করেছি। সমাজ, রাজনীতি ,অর্থনীতি শিক্ষাসহ প্রায় সকল ক্ষেত্রেই উদার হয়েছি। শুধু সম্পত্তির অধিকার ছাড়া। এযেন বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার অবস্থা।

বিরুদ্ধবাদীদের কথা পরে বলি অথবা না ই বলি। রিটকারীদের প্রতি সম্মান রেখেই কিছু প্রশ্ন করতে চাই। কারণ প্রশ্নগুলি যুগযুগান্তরের। নারী আন্দোলন সফল না হওয়ার পিছনে নারীর দোদুল্যমান্যতা অনেক ভূমিকা রেখেছে। তাই প্রশ্ন গুলি এসে যায়।
নেতৃত্বে থাকা নারীরা নিজেদের হিন্দু নারী মনে করেন কিনা ? হিন্দুত্ব ও নারীত্ব একসাথে পালন করে এ আন্দোলনে কতটা বিজয় অর্জন করা সম্ভব? শুধু পিতৃসম্পত্তিতে উত্তরাধিকার অর্জন কী আপনাদের লক্ষ্য? পুরুষের পালন করা দায়িত্বের সমান বিভাজন চান কিনা? নিজেকে কল্যাণী, গৃহলক্ষ্মী ভাবেন কিনা ? পতিকে দেবতা ভাবেন কিনা? স্বামীর চরণে স্বর্গ খোঁজেন কিনা? শাখা, সিঁদুর পরেন কিনা? এই প্রশ্নগুলি দিয়েই হিন্দুত্ববাদীরা আপনাদের খারিজ করে দিতে চায়। তাই প্রশ্নগুলোর মীমাংসা হওয়া উচিৎ সোজা মেরুদণ্ডে। ব্রত, পূজা অর্চনা করেন কিনা ?


মন্দিরে গিয়ে লোক দেখানো পূজা করেন, ঘরে পূজা- অর্চনা করেন কিনা? হিন্দু ধর্মগ্রন্থসমূহ ভক্তিসহকারে পাঠ করেন কিনা ? বিরুদ্ধবাদীরা ইতিমধ্যে আপনাদের ঠিকুজি বের করে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছে, আপনারা হিন্দু বিদ্বেষী। তাই হিন্দু পুরুষ দূরে থাক যে হিন্দু নারীকে আপনি সম্পত্তির অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছেন সেই তা গ্রহণ করবে না। নিজেকে হিন্দু ভাবলে হিন্দুত্ববাদীদের অন্যান্য রীতিনীতির পরিবর্তন না করে শুধু সম্পত্তিতে ভাগ বসানো সম্ভব ? দেখা যায় বিধবা বিবাহের মত আইন পাশ হওয়ার শতাধিক বছর অতিক্রান্ত হলেও সমাজে তার তেমন কোন প্রভাব নেই? কারণ যে পক্ষ এখন আপনাদের বিরোধিতা করছে তারাই এখনও বিধবা বিবাহকে

মন থেকে মেনে নেয়নি। তাই হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে গিয়ে হিন্দু আইন পরিবর্তন করলে সমাজে তা চলবে তো ? সকল হিন্দু নারীর কথা বাদ দিলাম, বিচারপ্রার্থী নারী হিসেবে যারা রিটে স্বাক্ষর করেছেন তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের বাইরে এসে নিজেদের স্রেফ মানুষ হিসেবে ভাবতে পারবেন ?

একজন প্রগতিশীল বাংলাদেশী হিন্দু পুরুষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করি। ধরেন, এরকম প্রগতিশীল মন্দিরে গেলে তিনি হিন্দু, অফিসে অসাম্প্রদায়িক, ঘরে অর্ধেক হিন্দু অর্ধেক প্রগতিশীল। আধা পুরুষতান্ত্রিক, আধা নারীবাদী। এ যেন ভগবান শিবেরই প্রতিরূপ অর্ধেক হর অর্ধেক পার্বতী। তিনি নারীর অধিকার বিষয়ে উত্তর দেয়ার পূর্বে নিজের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিৎ হয়ে নিবেন। মন্দিরে থাকলে একরকম উত্তর দিবেন, অফিসে থাকলে একরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবেন আর বাড়িতে বা ঘরে থাকলে আরেক রকম। হিন্দু সংঘ আর জাতিসংঘ দু জায়গায় একই বিষয়ে একই প্রগতিশীল হিন্দু একই রকম কথা বলতে পারেন না।

মানবাধিকারের মিটিং শেষে বেরিয়েছেন, মহিলা সমিতির অফিসের সামনে যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে বিগলিত হয়ে বলবেন , অবশ্যই চাই । কেন চাইব না? নারী পুরুষ সবাই একসাথে হাত ধরে সমাজটাকে এগিয়ে নিচ্ছি। পিতার সম্পত্তিতে পার্শিয়ালিটি দেখাব কেন ?

একই ব্যক্তি রবীন্দ্র জন্মোৎসব উদযাপন করে বেরিয়েছেন। বাড়ি যাবেন বলে পা বাড়িয়েছেন। পাশে রয়েছেন রবীন্দ্রসাজের নারী, তাদের সামনেই আনন্দিত বদনে বলবেন- অর্ধেক মানবী তুমি, অর্ধেক কল্পনা। রবীন্দ্রপ্রিয় রমনীগণও হাসবেন। প্রগতিশীল পুরুষও হাসবেন। এরা গৃহলক্ষী, এরা কল্যাণী। এদের জন্যে আমি সব দিতে পারি। তবে রোমিান্টিসিজমে, কল্পনায় । বাস্তবে নয়। সমাজ ভেঙ্গে পড়বে যে !


এই একই পুরুষ যদি নিরিবিলি তার হিন্দু ভাইয়ের সাথে বসে, তাকে বুঝাবে এ আইন পাশ হলে সর্বনাশ। কারণ এই লোক লেখাপড়া জানা শিক্ষিত লোক। সে জানে ক্ষমতা, অর্থ ,সম্পত্তি কত মূল্যবান। ধর্ম পালন না করলেও চলবে। কিন্তু ধর্মের বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে, নতুবা পুরুষতন্ত্রের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। বোন আর বোন থাকবে না হবে প্রতিযোগী, হবে সমান অধিকারী সম্মানের। তাতো হয় না আদরের বোন আদরেই রাখতে হবে।

নারী প্রেয়সী,উর্বশী, নারী, মা-স্ত্রী, জননী- ভগিনী। তার স্থান হৃদয়ে। নারীকে গৃলক্ষ্মী করে রেখেছে হিন্দুরা। সভ্যতার শুরুতে নারী দাসী ছিল এখনো আছে। দেবীর ছদ্মবেশ ধরে নারী এখনো গৃহে বন্দী। তাইতো হিন্দুত্ববাদীরা অজুহাত তুলছে , নারীকে সম্পত্তির অধিকার দিলে দেবী বিধর্মীদের কাছে চলে যাবে। সম্পত্তির লোভে মুসলমান পুরুষ জোরপূর্বক বিয়ে করবে নারীকে। সম্পত্তি এবং নারীর মালিকানা ছাড়তে চায় না পুরুষতন্ত্র এটাই মূলকথা।

হিন্দুরা বেদ পরবর্তী সময়ে মনুসংহিতাকে বহুলাংশে ব্যবহার করেছে। আদি মানব মনু তার পুত্রদের জন্য বারো অধ্যায়ের যে পুস্তক দান করেছেন তা পুরোটাই পুরুষতান্ত্রিক। তবে কন্যাদের উপর তার মায়া ছিল না বলা যায় না। তৃতীয় অধ্যায়ের ৫২ নম্বর শ্লোকে মনু বলেছেন- কন্যার পিতা, ভ্রাতা,পতি প্রভৃতি আত্মীয় স্বজন স্ত্রীধন অর্থ্যাৎ সোনা রূপা প্রভৃতি উপভোগ করলে সেসব পাপাচরণকারী অধোগতি লাভ করে। আহারে কী মায়া! মনু স্ত্রী ধনের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনুসংহিতার নবম অধ্যায়ের ১৯৪ নম্বর শ্লোকে। ঐ শ্লোকমতে স্ত্রীধন ছয় প্রকার অধ্যগ্নি, আধ্যাবাহনিক,প্রীতিদত্ত,ভ্রাতৃদত্ত, মাতৃদত্ত ও পিতৃদত্ত। অধ্যগ্নি- স্ত্রীধন হল
পিতা প্রভৃতিদের দ্বারা দত্ত ধন, আধ্যাবাহনিক ধন হল পিতৃগৃহ থেকে পতিগৃহে নিয়ে আসার সময় যে ধন লব্ধ হয়, প্রীতিদত্ত ধন হল রতিকালে বা অন্যসময় পতি কর্তৃক প্রীতিপূর্বক যে ধন স্ত্রীকে প্রদত্ত হয়।

মনুর দেয়া এত ধন দিয়ে নারী কী করবে ? সেতো বাজারে যায়না, সিনেমায় যায় না, বন্ধু নেই, আড্ডা মারে না। জীবনটাতো সন্তান উৎপাদনে আর স্বামী সন্তানের সেবায় কাটিয়ে দেয়। ধন ব্যবহারের সুযোগ কই ? মনু তাই নবম অধ্যায়ের ১৯২ নম্বর শ্লোকে মাতার মৃত্যুর পর মাতার সম্পদ ভাগের বিধান দিয়েছেন। যাকে পিতার সম্পদ দিলেন না, স্বামীর সম্পদ দিলেন না মনু ,মৃত্যুকালে সেই নারীর ব্যবহার্য্য সম্পদও তুলে দেয় পুরুষের কাছে। মনুর সেই নির্মম বিধান বয়ে চলেছে পুরুষতন্ত্র। পুরুষতন্ত্রের সকল
নিয়ম পালন করে শুধু পিতার সম্পত্তির অধিকার নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে নারী? পুরুষতন্ত্রের প্রাণভোমরাই যে এ সম্পত্তি।

নারী অধিকার আদায়ে চূড়ান্ত বিজয়ী হতে হলে হিন্দু নারীকে হতে হবে ইবসেনের ‘নোরা’ লৈঙ্গিক বিপ্লবের প্রথম নায়িকা। হুমায়ুন আজাদের লেখা কপি করছি, নোরা তার স্বামীকে বলে-

তুমি আমার প্রতি সবসময় সদয় ছিলে। তবে তোমার গৃহটি ছিল খেলাঘর। আমি ছিলাম তোমার পুতুল বউ, আমার বাড়িতে আমি ছিলাম আমার বাবার পুতুল মেয়ে; আর এখানে শিশুরা আমার পুতুল। তুমি যখন আমাকে নিয়ে খেলতে তখন আমার খুব মজা লাগত,যেমন

শিশুদের নিয়ে আমি যখন খেলতাম তখন তারা খুব মজা পেত। টোরভাল্ড, এই হচ্ছে আমাদের বিয়ে। সন্তানদের মানুষ করার জন্য আমি কিভাবে উপযুক্ত? তার আগে আমার আরেক কাজ আছে । আমি প্রথম শিক্ষা দেব নিজেকে-তুমি আমাকে তাতে সহায়তা করার মত মানুষ নও। আমার নিজেকেই তা করতে হবে। আর সে জন্যেই আমি ছেড়ে যাচ্ছি তোমাকে। নিজেকে আর আমার চারপাশের সবকিছুকে বুঝার জন্যে আমাকে দাঁড়াতে হবে সম্পূর্ন একলা। সে জন্যেই আমি আর তোমার সাথে থাকতে পারি না। আমার বিশ্বাস সবার আগে আমি একজন মানুষ,ঠিক তুমি যেমন; বা আমি চেষ্টা করব একজন মানুষ হয়ে উঠতে।

পরিশেষে বলি, হে দেবী গণ আপনারা নারী অধিকার আদায়ে প্রবৃত্ত হয়েছেন, পুরুষ তাতে বাধা দিবেই। পরম পুরুষকে আপনারাতো স্বীকার করেন। তাঁকে প্রশ্ন করুন বিশাল বৃক্ষের মত ধর্মের অত শিকড়-বাকড় ছড়িয়ে তিনি কেন মৌন রয়েছেন ?

আরও পড়ুন: জামালপুরে সাংবাদিক নাদিম হত্যায় ৪ জন আটক

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ:

ঈদ ও নববর্ষে পদ্মা সেতুতে ২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা টোল আদায়
নতুন বছর অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে: প্রধানমন্ত্রী
কলমাকান্দায় মোটরসাইকেলের চাকা ফেটে তিনজনের মৃত্যু
র‌্যাব-১৪’র অভিযানে ১৪৫ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক
সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত প্রকৃতি কন্যা জাফলং ও নীল নদ লালাখাল
কেন্দুয়ায় তিন দিনব্যাপী ‘জালাল মেলা’ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত
ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী চড়কসহ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত
কেন্দুয়ায় আউশ ধানের বীজ বিতরণ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
কলমাকান্দায় দেশীয় অস্ত্রসহ পিতাপুত্র আটক
ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামগঞ্জে জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে গোবরের তৈরি করা লাকড়ি গৃহবধূরা
ফুলবাড়ীতে এসিল্যান্ডের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন চাঁদা দাবি: থানায় জিডি দায়ের
ফুলবাড়ীতে সবজির দাম উর্ধ্বমূখী রাতারাতি দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ভোক্তা
ধর্মপাশায় সরকারি রাস্তার গাছ কেটে নিলো এক শিক্ষক
সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়ায় রামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা বহিস্কার
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ীতে অনশন
মসিকে ১০ কোটি টাকার সড়ক ও ড্রেনের কাজ উদ্বোধন করলেন মেয়র
কলমাকান্দায় নদীর পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক যতীন সরকারের জন্মদিন উদযাপন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ যতীন সরকারের ৮৮তম জন্মদিন আজ
১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে এমএলএম mtfe বন্ধ
কলমাকান্দায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লো তিন মাদক কারবারি
আটপাড়ায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১০৩ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
নকলায় ফাঁসিতে ঝুলে নেশাগ্রস্থ কিশোরের আত্মহত্যা
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস
কলমাকান্দায় আগুনে পুড়ে ২১ দোকানঘর ছাই

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 809