সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

বইমেলায় কেনা বই, রাখবেন কই?

প্রকাশিত: ২২:৫১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

বইমেলায় কেনা বই, রাখবেন কই?

বইমেলায় কেনা বই, রাখবেন কই?

২০২৩ সালে অমর একুশে বইমেলায় বিক্রি হয়েছিল সাতচল্লিশ কোটি টাকার বই। ২০২২ সালে বিক্রি হয়েছিল বায়ান্ন কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকার বই। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাস ঊনত্রিশ দিন। কাগজপত্র সহ অন্যান্য জিনিসের দাম বৃদ্ধির জন্য বইয়ের দাম এবার চড়া। তাই  স্বাভাবিকভাবেই এবার বই বিক্রির অর্থ আরো বৃদ্ধির কথা।
এসব বই মানুষই কিনছে। কোন গায়েবী কারবার নয়। যারা ভাবছেন মেলা থেকে অনেকেই বই কিনছে, এবার আমিও কিনব। কিন্ত ভাবছেন বইমেলায় কেনা বই রাখবেন কই?

সত্যিই ভাবনার বিষয়। কোটি কোটি টাকার বই যে দেশে একমাসের মেলায় বিক্রী হয় সে দেশের মানুষের ঘরে বই রাখার জায়গা নেই! 
কিছু ব্যতিক্রম আছে। কেউ কেউ বই কেনার পর কিভাবে পড়ছেন, ঘরে অফিসে না লাইব্রেরিতে বসে পড়ছেন তা জানাচ্ছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। আমরা বই প্রেমী জাতি। কিন্ত বীর আলেকজান্ডারের সেনাপতি টলেমী নয় যে বই সংগ্রহ করে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি গড়ে তোলব।

আমরা সারা বছর কখনও লাইব্রেরিতে যাই না। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মত দোকান থেকে শিশুদের, সন্তানের টেক্সবুক খাতা কলম কিনি। আমাদের সন্তানেরাও জেনে গেছে বই লাইব্রেরিতে নয় মেলায় পাওয়া যায়। কিছু সন্তান, কিছু পরিবার অবশ্যই ব্যতিক্রম। 

লাইব্রেরিগুলোর অনেকেই পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। টিকে আছে কিছু প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি জায়ান্ট স্টিকার লাগিয়ে। আঠার কোটি মানুষের দেশে এরকম লাইব্রেরি আঠারোর কম ! বই মননে আনতে হলে শুধুই বিপনন নয় দেশের সরকারী গণ গ্রন্থাগার গুলোকে লোকের সামনে নিয়ে আসতে হবে। বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্র যে কাজ করছে তা অনন্য। তবে তা বিশাল সমুদ্রবক্ষে একফোঁটা শিশিরের মত।

বাঙালির ঘরে ঘরে লাইব্রেরি গড়ে উঠবে যদি সরকার অনুদান দেয়া শুরু করে। বাঙালির বই রাখার আর দুশ্চিন্তা থাকবে না। এরকম একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম এক সরকারী কর্মচারীর লিখা। লাইব্রেরির অনুদান মঞ্জুরীর জন্য সরেজমিন তদন্তে গিয়ে তিনি লিখেন।
গলির ভিতর অযথা লাইব্রেরী খুঁজেই আর তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ব্রত নিয়েছি জাতি গঠনে আমার ক্ষুদ্র শক্তি নিয়োগ করবো, কিন্তু কার্য্য ক্ষেত্রে দেখি আমি যেন দারোগা বা গোয়েন্দা। 

লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ আমার সহিত ভয়ে ভয়ে ব্যবহার করেন। সব রেকর্ড দেখাবার সময় কেমন যেন একটা সতর্ক চাপা দেবার প্রয়াস লক্ষ্য করি। অন্তরে ব্যথা ও দুঃখ পাই। সে বছর বড়বাজার অঞ্চলে একটা লাইব্রেরী তিন দিন খুঁজে বার করতে না পেরে, একটা প্রকাণ্ড প্রাসাদের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি, নম্বরটা কি ভুল লিখেছে; এমন সময় মাথায় পাগড়ি বেঁধে এক পণ্ডিতজী দর্শন দিলেন। ব্যাপার কি পণ্ডিতজী? আপনার লাইব্রেরী কোথায়? উত্তরে পণ্ডিতজী গম্ভীর কণ্ঠে বলিলেন,-কাহে, লাইব্রেরী ত হ্যায়? কোথায়? হিয়া? পণ্ডিতজী বলিলেন,-সংসার মায়া! লিখ দিজীয়ে হিয়াই হ্যায়। মানুষ মায়া, সংসার মায়া, সব কুছ মায়া! ইহার উপর তর্ক চলে না।

বাঙালির লাইব্রেরির ইতিহাস অত সমৃদ্ধ না। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাই লিখেন অনেক সংস্কার করিতে হইবে। প্রথম সংস্কার লাইব্রেরীর উদ্দেশ্য স্থির করা। যদি উদ্দেশ্য না স্থির করেন, নানা বিষয়ের নানা বই আনিয়া আপনারা ইহার সমস্ত অর্থ ব্যয় করিয়া ফেলিবেন। কোন দিকেই একাগ্রতা থাকিবে না।-ক্রমে একটা জগাখিচুড়িও হইয়া উঠিতে পারে- ২০০ খানি ইংরেজি নভেল, ৩০ খানি ইতিহাস, ৫০ খানি সংস্কৃত, শ তিনেক বাঙ্গলা- এইরূপ পাঁচ ফুলের সাজি করিলে হইবে না।
যদি আমার একটা কথা শুনেন -আমি বলি, যাহাতে বাঙ্গলা চেনা যায়, শুদ্ধ এমন-সকল বই আপনারা সংগ্রহ করুন।

বই কিনলে লাইব্রেরি বানাতে হবে এই যুক্তি দিলে বই বিক্রি উচ্ছন্নে যাবে। বলি অতকিছুর দরকার নেই। বই কিনুন। পড়ুন আর না পড়ুন বই ঘরের শোভা বর্ধন করে। শক্ত মলাটের ভারি বই হলে পানির গ্লাসটা তার ওপরে রাখতে পারবেন। হালকা বই হলে পানির গ্লাসের ঢাকনা হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন লিটলম্যাগ।

ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট নাজি বাহিনীর হত্যাকাণ্ড আর লাইব্রেরি ধ্বংসের বিভৎসতা দেখে বলেছিলেন- "আমরা সবাই জানি বই পুড়ে যায়। আবার এটাও ভালো করে জানি যে আগুন দিয়ে বইকে হত্যা করা যায় না। মানুষ মরতে পারে, কিন্তু বই কখনো মরে না। কোনো মানুষ বা কোনো শক্তি -স্মৃতির বিনাশ ঘটাতে পারে না। আমরা জানি, এই যুদ্ধে বই হলো একটা অস্ত্র।"

ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট বলেছেন বই নাকি অস্ত্র ! সত্যিইতো ভালো বই ভণ্ডামী হত্যা করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। চুরি করবে ,সাধুতায় পুরস্কার পাবে। মিথ্যাচার করবে আবার ধর্ম করে স্বর্গে যাবে বাঙালির এই স্বভাব হত্যার অস্ত্র বই। তবে হ্যাঁ বাঙালি ভয়কে জয় করেছে। বইমেলার বই  কিনছে। কিন্ত   প্রশ্ন হল বই নামক অস্ত্র কিনে বাঙালি রাখবে কই? বাড়িতে বই রাখলে ভবিষ্যত প্রজন্ম বিগড়ে যাবে না! তাই এত বড় ইমারত, সবার থাকার জায়গা আছে,প্রার্থনার জায়গা আছে , বই রাখার একটু স্থান নেই। 

বই কিনলে বই সংগ্রহে রাখার একটি জায়গা রাখতে হয়। তার নামই লাইব্রেরি। কয়েকটি বইয়ের সংগ্রহতেই লাইব্রেরি জন্ম হতে পারে আবার কোন কোন লাইব্রেরির বই সংখ্যা কয়েক বিলিয়ন হতে পারে।

লাইব্রেরি গড়ার পেছনে মানুষের শুভ বুদ্ধি কাজ করে। আবার লাইব্রেরি ধ্বংসের পেছনে কাজ করে অশুভ বুদ্ধির। পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর বই পুড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যার পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মিশনের গ্রন্থাগার সহ দেশের অনেক লাইব্রেরি ধ্বংস করেছিল।  সর্বশেষ হত্যা করেছিল  বুদ্ধিজীবীদের চৌদ্দ ডিসেম্বর একাত্তর। 

আজ আমরা নিজেরাই নিজেদের মুক্তবুদ্ধির লোককে হত্যা করছি ধর্মের খোঁড়া অজুহাতে। লাইব্রেরিগুলো হত্যা করছি নিজেরা স্বজ্ঞানে। তাই আমরা বই কিনলেও রাখার জায়গা পাচ্ছি না।  জনগনের টাকার লাইব্রেরিগুলোর দুরবস্থার কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আমরা কত উদাসীন।

কয়েক মাইল লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ মেলায় ঢুকছে। ঢাকার একুশে বইমেলার হাল আমলের কয়েক বছরের ছবি এটি। বইমেলার সাথে সম্পর্কহীন কোন ব্যক্তি চোখ চান্দে তুলে এমন প্রশ্ন করতেই পারে, বইমেলা এ আবার কোন খেলা? সত্যিই তো বইমেলা প্রকৃত অর্থে খেলাই তো । স্বার্থপরতার চরম এ যুগে কোন মানুষ এমন পরিশ্রম করে মাঠে ঢুকে, যদি সে এ থেকে সে আনন্দ, বিনোদন না পায়। অবশ্যই পায়। বইমেলায় গিয়েছিলাম- বেশিরভাগ লোকের কাছে এটাই আনন্দ। বই মেলায় গিয়েছিলাম বলতে পারা আভিজাত্যের প্রতীক বলে ভাবে অনেক মধ্যবিত্ত। উচ্চবিত্তরা এড়িয়ে চললেও নিজেকে প্রগতিশীল বলে দাবি করার জন্য একবার বই মেলায় ঘুরে আসে। কিন্তু বই নিয়ে রাখবো কই? বই রাখার জায়গা নেই। খুব প্রয়োজনীয় হলে ক্যারিয়ার গঠনের উপর একটা বই কেনা যেতে পারে। 

অথবা একটি প্রেমের উপন্যাস কেনা যেতে পারে। এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবার লোক এ সমাজে খুব কম। কেউ ঋত্বিক ঘটক হতে চায় না। ভাবো চিন্তা কর। ভাবা প্র্যাকটিস করো এমনটি হওয়া মানে পাগল হওয়া। যখন যা পাচ্ছো লুটে নাও এ হলো সভ্যতার রীতি। যারা সভ্যতাকে জানার বোঝার এবং বিনির্মাণের জন্য বই কিনবে তাদের সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা। সমাজ তাদেরকে আঁতেল অথবা পাগল এই দৃষ্টিতে দেখে থাকে। বইয়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়া অনেকেরই ধর্ম।  ধর্মীয় বই ছাড়া আর কোন বই পড়ার তেমন প্রয়োজন নেই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠলোক এমনি ভাবে। এই সমাজে বই রাখার জায়গা নেই তবুও বইমেলায় ভিড় বাড়ছে কেন ?

পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল এর দেশে আঠার কোটি মানুষ। যে যেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে সেখানেই ভিড় জমে যাচ্ছে। হয়ে পড়ছে মেলা। পুরো বাংলাদেশ একটা মেলা। সৌন্দর্য বর্ধনের নামে যখন শ্মশান ঘাট পার্ক হয়ে ওঠে তখন একদিকে মানুষ পুড়ছে, অন্যদিকে বিক্রী হচ্ছে সৌন্দর্য, প্রেম, উন্নয়ন। বইমেলায় যা হচ্ছে তাই ঐ একই কাহিনী। রূপটা একটু ভিন্ন এই যা। কোন কিছু আর জায়গামত নেই। লাইব্রেরীর বই মেলায় গড়াগড়ি যায়। সারা বছর আর কেউ বইয়ের খোঁজ রাখে না।

আরও পড়ুন: তারাকান্দায় পৃথকভাবে বিদ্যুৎপৃষ্টে ২ জনের মৃত্যু

প্রাবন্ধিক

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ:

ঈদ ও নববর্ষে পদ্মা সেতুতে ২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা টোল আদায়
নতুন বছর অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে: প্রধানমন্ত্রী
কলমাকান্দায় মোটরসাইকেলের চাকা ফেটে তিনজনের মৃত্যু
র‌্যাব-১৪’র অভিযানে ১৪৫ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক
সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত প্রকৃতি কন্যা জাফলং ও নীল নদ লালাখাল
কেন্দুয়ায় তিন দিনব্যাপী ‘জালাল মেলা’ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত
ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী চড়কসহ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত
কেন্দুয়ায় আউশ ধানের বীজ বিতরণ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
কলমাকান্দায় দেশীয় অস্ত্রসহ পিতাপুত্র আটক
ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামগঞ্জে জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে গোবরের তৈরি করা লাকড়ি গৃহবধূরা
ফুলবাড়ীতে এসিল্যান্ডের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন চাঁদা দাবি: থানায় জিডি দায়ের
ফুলবাড়ীতে সবজির দাম উর্ধ্বমূখী রাতারাতি দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ভোক্তা
ধর্মপাশায় সরকারি রাস্তার গাছ কেটে নিলো এক শিক্ষক
সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়ায় রামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা বহিস্কার
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ীতে অনশন
মসিকে ১০ কোটি টাকার সড়ক ও ড্রেনের কাজ উদ্বোধন করলেন মেয়র
কলমাকান্দায় নদীর পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক যতীন সরকারের জন্মদিন উদযাপন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ যতীন সরকারের ৮৮তম জন্মদিন আজ
১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে এমএলএম mtfe বন্ধ
কলমাকান্দায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লো তিন মাদক কারবারি
আটপাড়ায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১০৩ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
নকলায় ফাঁসিতে ঝুলে নেশাগ্রস্থ কিশোরের আত্মহত্যা
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস
কলমাকান্দায় আগুনে পুড়ে ২১ দোকানঘর ছাই

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 809