বাদপড়া যাচাই বাছাই কৃত বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহ জাতীয় করনে বাঁধা কোথায়?
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড আর প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে জাতি গঠনের গোড়া পত্তন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হচ্ছেন দেশ গড়ার কারিগর। কাজেই প্রাথমিক শিক্ষক দের অবহেলার কোন সুযোগ নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে আসিন কর্মকর্তাদের প্রথম হাতে খড়ি / চক শ্লেট ধরিয়ে দেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গন। তাদেরকে অভুক্তরেখে জাতি গঠন সম্ভব নয় এই বাস্তবতার আলোকে ১৯৭৩ সালে বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করন করার পর থেকে দেশের বে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহের শিক্ষক গন শিক্ষা প্রসারে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। চাকুরি জাতীয় করন হবে এমন আশা নিয়ে দীর্ঘদিন হতে প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন। সময়ের পালাবদল হলেও দীর্ঘদিনেও কাংখিত প্রত্যাশা পুরন হয়নি। ১৯৯৬ একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক / শিক্ষিকাদের দুরাবস্থার কথা বিবেচনা করে কিছু সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করেছিল।
পরবর্তী সময়ে ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে ঢাকায় ওসমানী জাতীয় উদ্যানের বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকুরি জাতীয় করণের এক দফা দাবি আদায়ের আমরণ অনসনে বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত হয়ে শিক্ষক দের দাবির প্রতি একাকত্বতা প্রকাশ করে জাতীয় করন নিশ্চিত কথাটি তিন তিনবার উচ্চারণ করে বলেছিলেন আপনাদের দাবি পুরন হয়ে গেছে. শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার। তার পর ২০০০ইং সালের ১০ সেপ্টেম্বর একই স্থানে বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন আপনারা(শিক্ষকগন) দিন ক্ষন তারিখ ঘন্টা লিখে রাখুন আমি খালেদা জিয়া যা বলি তা করি আমরা চারদলীয়জোট ক্ষমতায় গেলে জাতীয় করণ নিশ্চিত করা হবে। ওই মহাসমাবেশে খালেদা জিয়া ছাড়াও সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ বলেছিলেন শিক্ষক দের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা আর নিজের আত্নার সঙ্গে বেঈমানী করা একই কথা।
সেই দিন জামায়াতের আমীর গোলাম আযম ইসলামি ঐক্য জোট নেতা আল্লামা শায়খুল হাদীস শিক্ষক দের দাবি পুরনে একই মঞ্চ থেকে সমস্বরে বলেছিলেন-আমরা ক্ষমতায় গেলে বেসকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি অবশ্যই পুরন করব। শুধু তাই নয় তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩.১০ অনুচ্ছেদে জাতীয় করণের বিষয় টি অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতা শীন হয়ে শুধু কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে বলেন চারদলীয় জোট সরকার যা নির্বাচনী ওয়াদা করে তার প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে অথচ ভাগ্যহত বে- সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য কিছু ই করেন নি খালেদা জিয়ার সরকার। বে- মালুম ভুলে যান শিক্ষকদের সঙ্গে করা ওয়াদা। এর পর ২০১৩ইং সালের ৯ই জানুয়ারি যোগ্য পিতার ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬১৯৩ টি বে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করন করেছেন। জাতীয় করন ঘোষণাকালে তিনি বলেছিলেন ' আজকে থেকে দেশে আর কোন বে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকবে না।
অথচ তৃতীয় ধাপে প্রায় ১৩ শত বে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যাচাই-বাছাই করে জাতীয় করনের জন্য চুড়ান্ত ভাবে যোগ্য বিবেচিত ও সুপারিশ প্রাপ্ত হওয়া সত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আজো প্রায় ৪ হাজার বিদ্যালয় জাতীয়করণ হয়নি। এতে একদিকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ বাস্তবতা হয়নি অপরদিকে বেতন ভাতার অভাবে শিক্ষক গন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে উপবৃতি স্কুল ফিডিং কর্মসুচীসহ সরকারের নানান ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে। অবিলম্বে তৃতীয় ধাপের সুপারিশকৃত / যাচাই-বাছাই কৃত বে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহ জাতীয় করন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
সরকারি করণের আশায় নতুন করে যত্র তত্র বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে মর্মে একটি মহল অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকৃত পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ৯ই জানুয়ারী জাতীয় করন ঘোষণার পূর্বে অর্থাৎ ২০১২ সালের ২৭ মের পূর্বের আবেদন কৃত / চলমান এবং ২০১২ সালের পূর্বে বে-সপ্রাবিদ্যালয়ের অনুকূলে জমি রেজিষ্ট্রি সম্পাদিত এমন তালিকা তৃতীয় ধাপে জাতীয় করনের জন্য প্রাথমিক ও গন শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে চাহিত কাঙ্ক্ষিত তাগিদ পত্রের আলোকে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাগন বাদপড়া বে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহ সরেজমিনে বিধিমালার বর্ণিত সুচক অনুযায়ী " বিদ্যালয়গুলোর বাস্তব অবস্থা যাচাইয়ের জন্য উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটির নিকট প্রেরন করেন। উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি বিদ্যালয় সমুহের সম্পদ. অবকাঠামো অবস্থা পাঠদান পদ্ধতি শিক্ষকের যোগ্যতা ও নিয়োগ পদ্ধতি ইত্যাদি বাস্তব যাচাইয়ের মাধ্যমে জাতীয় করনের জন্য উপযুক্ত বিদ্যালয় সহ কর্মরত শিক্ষকগনের সরকারি করণের বিষয়ে সুপারিশ জেলা কমিটিতে প্রেরণ করেন।
পরবর্তীতে জেলা কমিটি যাবতীয় রেকর্ড পত্র যেমন - বিদ্যালয়ের দলিল খারিজ খাজনা খতিয়ান বিদ্যালয়ের ছবি শিক্ষক গনের তথ্যাবলি সম্পত্তি দায়- দেনা ছাত্র / ছাত্রীর তথ্য পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সঠিক পাওয়া গিয়াছে মর্মে তৃতীয় ধাপে জাতীয় করনের জন্য প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ সহ প্রেরন করেন। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগন বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণ যাচাই-বাছাই কমিটির আহবায়ক হিসাবে রেজুলেশনের মাধ্যমে বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের নিমিত্তে তথ্য প্রেরণ নিশ্চিত করেন। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইন্জিনিয়ার্স এর হল রুমে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় করন থেকে বাদ পড়া বে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো জাতীয় করনে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান ।
যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই নিশ্চিত হওয়ার পরেও বাদপড়া যাচাই-বাছাই কৃত বে- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহ একমাত্র মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ এবং উদ্যগেই জাতীয় করণ সম্ভব। কেননা জনগুরুত্ব পুর্ন ও গণমানুষের জন্য কল্যানকর বিষয় গুলো প্রধান মন্ত্রী আপন ভাবুক মনেই অনুধাবন করেন। এ জন্যই বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাগ্যাকাশে সোনালী সূর্য উদয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোন সরকার প্রধানের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি করেছেন ৩৭ হাজার বিদ্যালয় তাঁরই কন্যা শেখহাসিনা করেছেন ২৬১৯৩ টি বিদ্যালয়। শিক্ষক সমাজ দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যাচাই বাছাই কৃত বাদপড়া বাকী বিদ্যালয় গুলো জাতীয় করন করে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক পরিবার এবং বঙ্গবন্ধু ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন পুরনে নিশ্চয়ই যে কোন মুহূর্তে শুধু প্রক্রিয়াগত ঘোষনা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
আরও পড়ুন: বিচার দাবিতে ময়মনসিংহে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান