
নিজের হাতে গড়া দুর্গা প্রতিমাকে পুজো দিচ্ছে-কিশোর নির্মান
‘‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ’’ মন্ত্র পড়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরসভার শিবগঞ্জ এলাকায় নিজের হাতে গড়া দুর্গা প্রতিমাকে পুজো দিচ্ছে কিশোর নির্মাণ দত্ত। ১৫ বছর বয়সেই নির্মান তার নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছে।
নিজের হাতে গড়া প্রতিমায় আবার মন্ত্রপাঠ করে নিজেই দেবীর পূজা করা এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। শনিবার (২১ অক্টোবর) সকালে মহাসপ্তমীর পুজা শেষ করে যুগান্তর কে এমনটাই জানালো কিশোর নির্মান দত্ত।
দুর্গাপুর পৌরসভার শিবগঞ্জ বাজারের গোপাল দত্ত ও নমিতা দত্তের ছোট ছেলে নির্মান দত্ত। ৬ বছর ধরে নিজেই প্রতিমা তৈরি করে পূজা শুরু করে নির্মাণ। স্থানীয় ডন বসকো কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র নির্মান দত্ত ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি ঝোঁক ছিল তার। বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় প্রতিমা তৈরির সাধ জাগে। ওস্তাদ ছাড়াই বাড়িতে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির চেষ্টা করতে থাকে সে।
অবশেষে ২০১৭ সালে নিজের হাতে তৈরি করে দুর্গা প্রতিমা। প্রতিভা দেখে অবাক হয়ে যান তার মা-বাবা ও স্বজনরা। এভাবে প্রতি বছরই বাড়ির আঙিনায় মন্ডপ তৈরি করে দুর্গাপূজা উদযাপন করে থাকে নির্মাণ দত্ত। গত এক মাসের চেষ্টায় তৈরি করেছে দুর্গা, কার্তিক, গণেশ, মহিষাসুর, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর প্রতিমা। রং-তুলির কাজটিও নিজের হাতে করে সে। কোনো ডাইস বা ফর্মা ছাড়াই নিজ হাতে প্রতিমা গুলোর মুখন্ডল তৈরি করেছে নির্মাণ, যা খুবই নানন্দনিক শোভা পেয়েছে। পাল বংশের সন্তান না হয়েও নির্মাণ দত্তের প্রতিমা তৈরির প্রতিভা দেখে বিস্মিত হয়েছেন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
ওই এলাকার একাধিক সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানান, নির্মাণ দত্তের সাহস ও আত্মবিশ্বাস দেখে বেশ অবাক হয়েছি আমরা। প্রতিমা তৈরিতে তার নিখুঁত কাজ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
নির্মাণ দত্ত জানায়, নিজ হাতে দেবী দুর্গা কে বানানোর ইচ্ছা অনেক দিনের। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও সকলের আশীর্বাদে আজ সেটা করতে পেরেছি। এ জন্য খুব আনন্দ লাগছে, আমার জন্য সকলেই আশির্বাদ করবেন।
দুর্গাপুর উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মানেশ চন্দ্র সাহা কালেরকন্ঠ কে বলেন, নির্মাণ কিশোর বয়সে কারো কোনো সাহায্য ছাড়াই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছে। বিষয়টি সত্যিই প্রশংসনীয়। তার হাতের ছোঁয়া খুবই নিখুঁত, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে আরও ভালো কিছু করবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স কালেরকন্ঠ কে বলেন, নির্মান দত্তের প্রতিভাই তাকে সাফল্যের দিকে পৌঁছে দিবে। কারো কাছে প্রতিমা গড়ার কাজ না শিখেই এত নিখুত ভাবে প্রতিমা তৈরি করা সত্যি প্রশংসনীয়। শুধু তাই নয় আমি শুনেছি সে খুব ভালো ছবিও আঁকে। ওর যে কোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন তার পাশে থাকবে। আমি এই ক্ষুদে শিল্পীর সাফল্য কামনা করছি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত-আব্দুল মতিন