বুধবার ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ১৯ মে ২০২৩

মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী

একাত্তরের ২৫ মার্চের কালো রাতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শোষিত বঞ্চিত খুব্ধ জনগন ন্যায় সঙ্গত ও প্রাপ্য অধিকারের প্রশ্নে দ্বিজাতী তথ্যের ভীতিতে সৃষ্ট পাকিস্তান নামক উপনিবেশিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাঙালিরা স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। নি:সঙ্কোচে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানের বাঙালি জনগুষ্টি অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) স্বাধীনতাকামী জনগন বাঙলাদেশ নামক একটি মানচিত্র আঁকতে সক্ষম হয়।

দুর্বিনীত সাহসীকতার সাথে লড়াই চালিয়ে পরাজিত করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে। ভৌগলিক সীমারেখার সাথে নিজেদের করে পায় একটি লাল সবুজ পতাকা। আর এই পাওয়ার জন্য ঊনপঞ্চাশ বছর আগে সময়ের সাহসী সন্তান হিসাবে (আমরা) বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভূমি বাংলাদেশকে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। তাই মুক্তিযোদ্ধারা জাতির গর্বিত সন্তান। এই ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসনের যাতাকল থেকে মাতৃভূমি বাংলাকে মুক্তকরে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যারা সেদিন মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল, তারাই মুক্তিকামী জনতার লড়াকু বাহিনী, আর এই লড়াকু বাহিনী হিসাবে মুক্তিযোদ্ধারা ছিল সবার কাছে প্রিয় ও আস্থাভাজন।

দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এক বুক ভালোবাসা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতার সোনালী সূর্য “স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।”

অথচ দু:খজনক হলেও সত্য মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্য বীর্য ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই দেশের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ৭১’য়ের মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত সাংবিধানিক স্বীকৃতি লাভ করেনি। সাংবিধানিক ভাবে জাতীয় বীরের মর্যাদা, অর্ধশত বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পথে।

সাধারণত একাত্তরের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধারা আজো নানাভাবে বৈষম্যের, বঞ্চনা ও উপেক্ষার শিকার। অনেক মুক্তিযোদ্ধা দরিদ্র,অসহায় ও নিরাশ্রয়। সাধারণভাবে সিকিৎসার সেবা হতে বঞ্চিত।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক সন্মানী ভাতার ব্যাবস্থা করেছেন ঠিকই কিন্তু বর্তমান বাজার ব্যাবস্থায় তা খুবেই অপ্রতুল। অন্যদিকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা বারবার পরিবর্তন করে রাজনৈতিক ও মহল বিশেষের স্বার্থে প্রকাশ্যে কিম্বা গোপনে হাজার হাজার ভূয়াকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ভুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারদের মান মর্যাদা কে হেয়প্রতিপন্ন করছে, ফলে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে।

তাই আজ সময় এসেছে মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পুর্তি উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান (১) মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বিকৃতি নি:শ্চিত করন, (২) ভুয়াদের তালিকা বাতিল করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করে রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা, (৩) মুক্তিযুদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করণ, (৪) সন্তানদের চাকুরী কোটাপুনর্বহাল করা, (৫) দ্রব্য মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সন্মানী ভাতা বৃদ্ধি করা, (৬) মুক্তিযোদ্ধাদের স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ ও সহজ শর্তে আবাসনের জন্য ব্যংক ঋন প্রদান, (৭) মুক্তিযোদ্ধা সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা একাত্তরের বধ্যভূমি গুলো ও গন কবর সমুহ চিহ্নিত করে সংরক্ষন ও স্মৃতি সৌধ নির্মাণ সহ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃ‌ত ইতিহাস অবিকৃত রাখা ও সংরক্ষন করা, (৮) সর্বশেষ একাত্তরের রাজাকা, আলবদর, আল শামস, শান্তি কমিটি, যুদ্ধাপরাধী ও সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের তালিকা প্রণয়ন ও তাদের বিচারের ব্যাবস্থা করা। মুক্তিযুদ্বাদের এ দাবী শুধু মুক্তিযুদ্বাদের নয়, এ দাবী বাংলার মুক্তিকামী জনতার দাবী এ দাবী ইতিহাসের দাবী। 

লেখক: হায়দার জাহান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক 

আরও পড়ুন: একজন আব্দুল জব্বার ও তাঁর সঙ্গীত জীবন

আরো পড়ুন  


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 798