রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ

মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযোদ্ধা তথা জাতির বীর সন্তানেরা কোন পরিবার বা গোষ্ঠীর নয় তারা পুরো বাঙ্গালী জাতির  অহংকার। ১৯২৬ সালের ১৫ অক্টোবর গ্রাম হাটনাইয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ। পিতার নাম মরহুম আহমেদ হোসাইন তালুকদার এবং মাতা ছিলেন মরহুম আয়েশা আক্তার চৌধুরী।

শিক্ষা জীবন:
তিনি সহিলদেও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। অতপর নেত্রকোণা আঞ্জুমান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং ময়মনসিংহ মৃত্যুঞ্জয় হাই স্কুল থেকে মেট্রিকুলেমান পাসের পর আনন্দমোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে ঢাকা মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুল থেকে ডাক্তারী বিদ্যা পাস করেন।  ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর সুযোগ্য সহধর্মিণী মিসেস হোসনে আরা চৌধুরী এবং তাঁর তিন পুত্র ওবায়দুল হাসান (পরবর্তীকালে মাননীয় বিচারপতি), সাজ্জাদুল হাসান (পরবর্তীকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব) এবং সাইফুল হাসান সোহেল (পরবর্তীকালে গ্রামীণ ফোনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা)

কর্ম জীবন:
শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পর একজন ডাক্তার হিসেবে তিনি সরকারি চাকুরীতে নিযুক্ত হন। ঘুরেছেন বিভিন্ন হসপিটাল এবং চ্যারিটেবল ডিস্পেনসারিতে। রোগে-শোকে কাতর মানুষের পাশে একজন ডাক্তার হিসেবে তাঁর সেবা আজও ভাটি-বাংলার মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়।

রাজনৈতিক জীবন:
পরাধীন আমলে মানুষের রোগ মুক্তির পাশাপাশি তিনি তাদের রাজনৈতিক মুক্তিও কামনা করতেন। আর যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সত্তরে নির্বাচনের ডাক দিলেন, তখন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ সাথে সাথে সরকারি চাকুরী ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। উল্লেখ্য ১৯৬৯ সালে সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং নেত্রকোণার আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল খালেক সহযোগিতায় আঙয়ামীলীগ পরিবারের সদস্য হয়েছিলেন। শুরু হয় তাঁর জীবনে রাজনীতির নতুন অধ্যায়।বঙ্গবন্ধু ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত মোট ৬ বার নেত্রকোণায় এসেছিলেন- দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রমে। একবার ভাটি-বাংলার প্রাণকেন্দ্র মোহনগঞ্জে (only once)বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে যাঁরা বঙ্গবন্ধুর পাশে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ অন্যতম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে ধ্যানে-জ্ঞানে-আদর্শ- নৈতিকতায় মনে প্রাণে শ্রদ্ধা করতেন।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে বাঙালি ছাত্র-জনতার অগ্নিঝরা আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী আয়ুব খান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার স্থলাভিষিক্ত হয় কুখ্যাত নরখাদক জেনারেল এহিয়া খান। শেষ পর্যন্ত ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে একযোগে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। ঘোষণা করা হয়- Legal Frame Work order (আইনগত কাঠামো আদেশ)’। এতে জাতীয় পরিষদে নেত্রকোণার জন্য ৩টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের জন্য ৬টি আসন নির্ধারিত। জাতীয় পরিষদে নেত্রকোণার ৩টি আসনে যথাক্রমে সর্বজনাব আব্দুল মমিন, জুবেদ আলী এবং এডভোকেট সাদির উদ্দিন আহমেদ নির্বাচিত হন। আর প্রাদেশিক প্ররিষদের ৬টি আসনে নির্বাচিত হন যথাক্রমে - সর্বজনাব হাদিস উদ্দিন চৌধুরী, ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ, আব্বাস আলী খান, আব্দুল মজিদ তারা মিয়া এবং নজমুল হুদা। ইনারা সবাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সৈনিক এবং আওয়ামীলীগের নেতা ও সংগঠক।উল্লেখ্য, সত্তরের নির্বাচনে নেত্রকোণায় সবকটি আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীরা শতাধিক সভায় বক্তব্য প্রদান করেন। ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ একজন সুবক্তাও ছিলেন। মোহনগঞ্জসহ ভাটি-বাংলায় বিভিন্ন সভা-সমিতি, মিটিং-মিছিলে তিনি দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সকলে মিলে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইস্তেহার এবং বঙ্গবন্ধুর আহবান তাঁরা গ্রামে-গ্রামে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান:
এদিকে ৭ই মার্চের ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুর অনুসারি নেতা-কর্মীগণ প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা পেয়ে যান। ভাষণে বঙ্গবন্ধু যা যা যেভাবে ইঙ্গিতে-অকপটে বলেছিলেন, তার ভিত্তিতে নেতা-কর্মীগণ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। নেত্রকোণাতেও শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি। মোহনগঞ্জ এলাকার এমপি  ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর নেতৃত্বে মোহনগঞ্জ আওয়ামীলীগের নেতা সর্বজনাব আব্দুল কদ্দুছ আজাদ, মীর্জা গণি, আমির উদ্দিন আহমেদসহ নেত্রকোণা মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলামএরশাদুর রহামান,মীর্জা তাজুল ইসলাম,রফিকুল ইসলাম, মন্তাজ উদ্দিন আরো কয়েকজন মিলে নৌকাযোগে মোহনগঞ্জের ভাটি এলাকার গ্রামে-গ্রামে ঘুরে-ঘুরে জনগণকে সংগ্রাম কমিটির সাথে ঐক্যবদ্ধ করেন। এ ক্ষেত্রে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এর ভমিকা ছিলো অনবদ্য। ২৯ এপ্রিল’৭১ পাকিস্তানি আর্মি প্রথম নেত্রকোণায় প্রবেশ করে এবং ক্রমে খালিয়াজুরী থানা ব্যতীত সকল থানায় ছড়িয়ে পড়ে। 

ফলে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ ভারতের মেঘালয় সীমান্তে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাঘমারা, রংঢ়া, মহাদেও ও মহেশখলা এই চারটি স্থানে নেত্রকোণার মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রটিং ও ইউথ ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। মহেশখলা ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন জনাব আব্দুল হেকিম চৌধুরী ও ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ। তবে চৌধুরী সাহেব সুনামগঞ্জের এমপি বিধায় নেত্রকোণার ভাটি অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা রিক্রটমেন্টের মূল দায়িত্ব পালন করেন ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ। এমন কি মহেষখলায় মুজিব বাহিনীর একটি ক্যাম্পও খোলা হয়। ফলে মহেষখলা ক্যাম্পে আগত প্রায় তিন লক্ষ শরণার্থী, মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার গুরু দায়িত্ব পালন করতে হয় ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ ও তাঁর সহযোগীদেরকে। মহেষখলা ক্যাম্পে যাঁরা সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা হলেন সর্বজনাব এড্ভোকেট কে এম ফজলুল কাদের, খালেকদাদ চৌধুরী, মেহের আলী,মারাজ মিয়া, আ: কদ্দুছ আজাদ,নুরুজ্জামান চিশতি, ইনসান উদ্দিন খান, ডা: জগদীশ দত্ত, অধ্যাপক মানিক সরকার প্রমুখ।

মহেষখলা ক্যাম্পে নেত্রকোণার ব্যাংক লুটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিলো। সেকান্দর নুরী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এক পর্যায়ে আওয়ামীলীগের অত্যন্ত সৎ ও নির্ভীক কর্মী,নেত্রকোনা মুক্তিসংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য ও  মহেষখলা ইয়ুথ ক্যাম্প পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য(ছাত্র ও যুবনেতাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত),নেত্রকোনা মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি(জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন পূর্বপাকিস্তান আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন), জেলা শ্রমিকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, নেত্রকোনা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম স্থপতি, মধুমাছি কচিকাঁচার মেলার প্রধান উদ্যেক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক এবং জেলা আওয়ামীলীগের শ্রম ও কৃষিবিষয়ক সম্পাদক '৭১ জনাব মেহের আলীকে নুরীর লোকেরা হত্যা করে । মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের মধ্যে  তিনি অন্যতম যিনি প্রথম ১৯৭১ সালের ১৭ই মে মহেষখলায় শহীদ হন। 

মুক্তিযুদ্ধের খরচ ও যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে জাতীয় প্রয়োজনে জয়বাংলা বাহিনীর প্রধান কোম্পানী কমান্ডার সাবেক আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: শামসুজ্জোহার নেতৃত্তে বীরমুক্তিযোদ্ধা  বুলবুল ইপিআর সদস্যসহ অন্যান্যদরকে নিয়ে পুলিশের অস্ত্রাগার ও ব্যাংক লুট করেন (“মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোনা” বইটিতে  সাবসেক্টর কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা  হায়দার জাহান চৌধুরী বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন)। মেহের আলীকে হত্যার পরপরই বীরমুক্তিযোদ্ধা মো: শামসুজ্জোহা ও সাবেক আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আমরিুল ইসলামকেও গ্রেফতার করা হয় হত্যার জন্যে। সৌভাগ্যক্রমে তারা প্রাণে বেচে যান। স্মরণীয় যে, স্বাধীনতা লাভের মাত্র ৭ দিনের মধ্যে পরবর্তীকালে সেকান্দর নুরী নিহত হয়েছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন, এটি ছিলো জনাব মেহের আলী হত্যার অনিবার্য পরিণতি। এরূপ প্রেক্ষাপটে উদ্ভত জটিল পরিস্থিতিকে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ অত্যন্ত মেধা ও ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। এক্ষেত্রে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর নেতৃত্বের দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। মহেষখলা ইয়ুথ ক্যাম্প অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পরিচালিত হয়েছিলো। 

বিশেষ করে নেত্রকোণা এবং সুনামগঞ্জের ভাটি এলাকার অগণিত মুক্তিযোদ্ধা এই ক্যাম্পের মাধ্যমে রিক্রটেড হয়েছিলেন। ক্যাম্প পরিচালকগণ এইসব বাছাইকৃত যুবকদেরকে বাঘমারা জনাব এন আই খান পরিচালিত ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিতেন। সেখান থেকে তাদেরকে তুরা জেলায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হতো। স্বল্প সময়ে এসকল কাজ সঠিকভাবে নিষ্পন্ন করা অবশ্যই কষ্ট সাধ্য ছিলো। মহেষখলা ফরেস্ট অফিসের নিকট স্থাপন করা হয়েছিলো মুজিব বাহিনী ক্যাম্প। সেখানে একটি ট্রেনিং সেন্টারও খোলা হয়েছিলো। আনসার, পুলিশ, বিডিআর (বিজিবি) সমন্বয়ে জনাব মোবারক আলী খান একটি অস্থায়ী বাহিনী গঠন করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে সেকান্দর নুরী, আনসার কমান্ডার দারগ আলী, আনসার ইন্সট্রাক্টর আ: হামিদ, আনসার কমান্ডার আলী ওসমান তালুকদার এবং আওয়ামীলীগ নেতা আ: জব্বার আনসারী সেখানে দায়িত্ব পালন করতেন। তবে বরাবরই সেকান্দর নুরী ছিলেন বিতর্কিত ও সন্দেহভাজন। এসকল ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন, নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনার গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এবং সহযোগী নেতৃবৃন্দ। বস্তুত তখন উত্তেজনা প্রশমনে সমন্বয়ের কোনো বিকল্প ছিলোনা; যখন মূল লক্ষ্য ছিলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। সাউথ গারোহিলের এই মহেষখলা ক্যাম্প থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। 

একদিকে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং এবং অপরদিকে ভাটি অঞ্চলসহ নেত্রকোণার বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ পরিচালনা করা ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য ও রসদ সংগ্রহের ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করতেন ক্যাম্প কমিটি। জলমগ্ন ভাটি এলাকায় পাক-আর্মিরা সহজে চলাফেরা করতো না। বস্তুত: এসব এলাকা মুক্তাঞ্চল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে ছিলো। এই সকল এলাকার হাট-বাজার সপ্তাহ ভিত্তিতে ইজারা দিতেন ক্যাম্প কমিটি। ইজারার টাকা জমা নেওয়া এবং হিসাব রক্ষণ পূর্বক পরিচালনা ব্যয় নির্বাহ করাটাও একটি জটিল দায়িত্ব ছিলো। অপর একটি কাজ ছিলো ট্রাইব্যুনাল বিষয়ক। যে সকল রাজাকার-আলবদর বা পাক-আর্মিদের ধরে আনা হতো এদের বিচার কার্য ক্যাম্প কমিটি একটি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পরিচালনা করতেন। এ প্রসঙ্গে ‘মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোণা’ গ্রন্থে বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। উল্লেখ্য জনাব  ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ খালেকদাদ চৌধুরীও ট্রাইব্যুনালের একজন সদস্য নিযুক্ত করেছিলেন। সাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরী ‘শতাব্দীর দুই দিগন্ত’ গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মহেষখলা ক্যাম্পের পরিচালনা কমিটির কার্যক্রমের বিবরণ দিয়েছেন যথা- প্রশাসনিক কার্যক্রম, শরণার্থীদের আগমন ও পুনর্বাসন, ত্রাণ বিতরণ, মুক্তিযোদ্ধা রিক্রটমেন্ট, দালাল ও অপরাধী বন্দীদের বিচার, রোগ-শোকে চিকিৎসা সেবা প্রদান ইত্যাদি। এ সকল কার্যক্রমে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

গণআদালত:
১৬ই ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হয়। মহেষখলা থেকে বিজয় গর্বে নেতৃবৃন্দ ফিরে আসেন নেত্রকোণায় নিজ নিজ আবাস স্থলে। দেশে এসেও ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ বেশকিছু গুরু দায়িত্ব পালন করেন। ৯ই ডিসেম্বর নেত্রকোণা শত্রু মুক্ত হয়। ১২ই ডিসেম্বর গণআদালতের মাধ্যমে দালাল-রাজাকারদের বিচার কার্যে তিনি ছিলেন প্রধান বিচারক। উল্লেখ্য, মোহনগঞ্জ উপজেলায় দালাল-রাজাকারেরা অগ্নি সংযোগ, হত্যা, ধর্ষণসহ হিন্দু অধ্যুসিত মাইলোরা, দেওতান, দৌলতপুর, খুরশিমূল-এসব ৬টি গ্রামে পাঁচ শতাধিক হিন্দু বাড়িতে ব্যাপক লুটতরাজ করে এবং তাদের বসত-ভিটা দখল করে নেয়। এলাকায় তাদের বিচারের জন্য জোর দাবী উঠে। 

অবশেষে ১২ই ডিসেম্বর লোহিয়ার মাঠে (বর্তমানে শহীদ উসমান পার্ক) হাজারো জনতার উপস্থিতিতে ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ গণআদালতে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান, মীর্জা তাজুল ইসলাম, আমির উদ্দিন উক্ত গণআদালতে রাজাকার-আলবদরদের কৃত অমানবিক ও নারকীয় নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন। উপস্থিত হাজারো জনতা চিৎকার করে তাদের মৃত্যুদন্ডের দাবী করেন। তখন গণআদালত থেকে ১৩ জন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয়। এসব অপরাধীরা ছিলো-যথাক্রমে নজরুল শেখ, নরু শেখ, সম্রাট, আ: খালেক, নান্নু, নুরুল ইসলাম, লাল হোসেন, সব্দু মিয়া, ইব্রাহিম, চাঁন মিয়া এবং গিয়াস উদ্দিন। স্মরণীয় যে, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই ছিলো প্রথম গণআদালত। এই বিচার কার্যের ৪৫ বছর পর ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর সুযোগ্য পুত্র মাননীয় বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসান শাহিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। মাননীয় বিচারপতি জনাব ওবায়দুল হাসান শাহিন এবং সিনিয়র সচিব জনাব সাজ্জাদুল হাসান সম্প্রতি তাঁদের লেখায় ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এঁর তথ্যবহুল ও জ্ঞানগর্ভ স্মৃতিচারণ করেছেন।

জীবনাবসান:
মহান মুক্তিযুদ্ধে এইসব অবদান সামান্য একটি প্রবন্ধে লিখে শেষ করা যায় না। ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসীম সাহসিকতা ও দায়িত্ব পালনের জন্য ইতিহাসে চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন। ২০১২ সালের ২৮ আগস্ট এই মহান কর্মবীরের জীবনাবসান ঘটে !

পুরষ্কার ও সম্মাননা:
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন কলেজ ও লোকসাহিত্য গবেষণা একাডেমি সম্মাননা স্মারক ২০২২  প্রদান করা হয়।ষাটের দশকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য “Bangladesh Muktijudho Research Institute Silver Award-2023” সম্মাননা প্রদানের জন্যে মনোনীত করা হয়।

আরও পড়ুন: বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

শীর্ষ সংবাদ:

ঈদ ও নববর্ষে পদ্মা সেতুতে ২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা টোল আদায়
নতুন বছর অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে: প্রধানমন্ত্রী
কলমাকান্দায় মোটরসাইকেলের চাকা ফেটে তিনজনের মৃত্যু
র‌্যাব-১৪’র অভিযানে ১৪৫ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক
সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত প্রকৃতি কন্যা জাফলং ও নীল নদ লালাখাল
কেন্দুয়ায় তিন দিনব্যাপী ‘জালাল মেলা’ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত
ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী চড়কসহ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত
কেন্দুয়ায় আউশ ধানের বীজ বিতরণ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
কলমাকান্দায় দেশীয় অস্ত্রসহ পিতাপুত্র আটক
ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামগঞ্জে জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে গোবরের তৈরি করা লাকড়ি গৃহবধূরা
ফুলবাড়ীতে এসিল্যান্ডের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন চাঁদা দাবি: থানায় জিডি দায়ের
ফুলবাড়ীতে সবজির দাম উর্ধ্বমূখী রাতারাতি দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ভোক্তা
ধর্মপাশায় সরকারি রাস্তার গাছ কেটে নিলো এক শিক্ষক
সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়ায় রামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা বহিস্কার
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ীতে অনশন
মসিকে ১০ কোটি টাকার সড়ক ও ড্রেনের কাজ উদ্বোধন করলেন মেয়র
কলমাকান্দায় নদীর পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক যতীন সরকারের জন্মদিন উদযাপন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ যতীন সরকারের ৮৮তম জন্মদিন আজ
১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে এমএলএম mtfe বন্ধ
কলমাকান্দায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লো তিন মাদক কারবারি
আটপাড়ায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১০৩ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
নকলায় ফাঁসিতে ঝুলে নেশাগ্রস্থ কিশোরের আত্মহত্যা
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস
কলমাকান্দায় আগুনে পুড়ে ২১ দোকানঘর ছাই

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 809