লিওনেল মেসি
কাতালান ক্লাব বার্সেলোনার সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা আগামী মৌসুমে লিওনেল মেসিকে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। যা নিয়ে তিনি কিছুদিন আগেও মেসি পুনরায় ফিরছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বলে দেন। আগামী ৩০ জুন বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা অধিনায়কের পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তাদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি না করার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে এলএমটেনের। মূলত সেই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছে স্প্যানিশ জায়ান্ট ক্লাবটি।
একইসঙ্গে বার্সা কোচ ও মেসির সাবেক সতীর্থ জাভি হার্নান্দেজও এই আর্জেন্টাইনকে ফেরানোর প্রতি মনোযোগী। সে লক্ষ্যে মেসির সাবেক টিমমেটদের সঙ্গেও আলোচনা করছেন জাভি। এমনকি আগামী মৌসুমে জাভির অধীনে দলের হয়ে মেসি খেলবেন এই ব্যাপারে বেশ ইতিবাচক সাবেক এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল মুন্দো দিপার্তিবো এমন তথ্য জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মেসিকে যেকোন মূল্যে ফেরানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে বার্সা। ৩৬ বয়সী এই পিএসজি ফরোয়ার্ডের সঙ্গে তার বর্তমান ক্লাবের মেয়াদ শেষ হবে জুনে। এরপর ২৩ জুন থেকে তিনি ফ্রি এজেন্টে পরিণত হবেন। এর পেছনে বড় কারণ অর্থনৈতিক বিষয়। বর্তমান বেতনের চেয়ে বেশি অর্থ দাবি করছেন এই আলবিসেলেস্তা ফরোয়ার্ড। কিন্তু দলের সামর্থ্য ও লিগের আর্থিক নীতির সঙ্গে মিল রেখে তার বেতন বাড়ানো অনেকটাই অসম্ভব ফরাসি ক্লাবটির জন্য। তবে বার্সা কর্তৃপক্ষ মনে করছে, মেসিকে দলে ভেড়ানো মানে পুরো দল এবং দর্শকদের মনোবল বৃদ্ধিতে ‘ইনজেকশন’-এর মতো কাজে দেবে। একইসঙ্গে এই মহাতারকার উপস্থিতি ক্লাবের আয়ও অনেক বাড়িয়ে তুলবে।
বার্সা সূত্র বলছে, মেসি ক্লাবের বর্তমান আয়ের সঙ্গে আরও অন্তত ২৫ শতাংশ মুনাফা যোগ করতে পারবেন। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই উপার্জন ৩৩ শতাংশ পর্যন্তও বেড়ে যেতে পারে বলে সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মেসি পেলেও, বিপুল আয়ের জন্য তার প্রতি অবশ্যই কৃত্জ্ঞ থাকবে ক্লাব। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বার্সেলোনার মিটিংয়ে থাকা একজন জানিয়েছেন, করোনা মহামারির আগে বার্সার আয়ের বাজেট ছিল এক হাজার ২৫৫ মিলিয়ন। কিন্তু সেখানে লিভারের মতো ভারবাহী কিছু বিষয় ছিল। যার কারণে মেসি দলের জন্য কী সেটি বুঝতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ওই সময় মেসির উপস্থিতির প্রভাবে আয় হতো ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়নের মতো। বিশ্বফুটবেলের অন্যতম সেরা তারকা হিসেবে মেসির জার্সি বিক্রি, টিকিট, স্পন্সর, সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা, ক্যাম্প ন্যুতে ভক্তদের ভ্রমণ (টেম্পল ও নম্বর টেন দর্শন) কেন্দ্রিক আয় হতো ক্লাবটির।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামী এক অথবা দুই মৌসুমের জন্য মেসিকে নিতে চায় বার্সা। তবে শুধুমাত্র এক সিজনই নয়, তিনি চাইলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কাতালানদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারবেন। সেই ধারাবাহিকতায় বার্সার সম্পদ হিসেবে এই আর্জেন্টাইন ফুটবলার ক্লাবের ১২৫তম বার্ষিকীরও অংশ হতে পারবেন। ২০২৪ সালের শেষদিকে ক্লাবটি ওই মাইলফলকে পৌঁছাবে।
বার্সা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেসিকে ফেরানো অনেক কঠিন হতে পারে। তবে তিনি যদিও ন্যু ক্যাম্পে যোগ দেন, তাহলে তার উপস্থিতি ক্লাবের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। একইসঙ্গে ‘মেসি ব্র্যান্ডে’র সঙ্গে বার্সেলোনা ক্লাবের সমন্বয় ঘটানো গেলে, সেটি ‘এয়ার জর্ডানে’র চেয়েও বড় ব্র্যান্ডে পরিণত হবে। কারণ বাস্কেটবলের চেয়ে বিশ্বব্যাপী ফুটবলের জনপ্রিয়তা বেশি।
এর আগে, ২০২১ সালের ১ জুলাই বার্সার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষে ফ্রি এজেন্টে পরিণত হন মেসি। তবে তার দল ছাড়ার ব্যাপারটি ছিল পুরো অবিশ্বাস্য। পরে ৫ আগস্ট জানা যায়, বার্সায় থাকছেন না মেসি। এর পাঁচ দিন পর তিনি চুক্তি করেন পিএসজির সঙ্গে। অথচ বার্সেলোনা সমর্থকরা ছিলেন নাছোড়বান্দা, তারা প্রিয় ফুটবলারকে অন্য কোনো ক্লাবের জার্সিতে দেখতে মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু বাস্তবতার কাছে যে সব কিছুই তুচ্ছ! ক্লাবের সঙ্গে নিজের চুক্তি নবায়ন করার কোনো উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই নিজের ঘর ছাড়তে হয় মেসিকে।
আরও পড়ুন: জয়পুরহাটে সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় সমাপনী সনদ বিতরণ