সাগরদীঘি
কেন্দুয়ার মোজাফরপুর গ্রামের সাগরদীঘিটিতে চৈত্র মাসেও ৭/৮ফুট পানি থাকে বলে স্থানীয়রা জানান। সাগরদীঘির দক্ষিণপাড়ে ঈদগাহ্ মাঠ,উত্তর পূর্বকোণে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রথমিক বিদ্যালয় এবং পাশেই নিমার্ণ করেন মসজিদ।,পূর্বদিকে বিস্তৃর্ণ হাওর ও গ্রাম,উত্তর পাড়ে বানিয়াগাতি যাওয়ার বর্তমান পাকা সড়ক, সড়কের উত্তরে ঐতিহ্যবাহী সদাগরবাড়ি এবং পশ্চিমপাড়ে পিচ রাস্তা। যে রাস্তাটি উত্তরে অর্থনৈতিক জোন হিসেবে খ্যাত জালিয়ার হাওর থেকে দক্ষিণ দিকে কেন্দুয়া-তাড়াইল সড়কে যুক্ত হয়েছে।
পারিবারিক সূত্র জানান,মো:নওফিজ উদ্দিন সদাগর সাহেব ১৯৬০ সনে মোজাফরপুর ইউনিয়ন বোর্ডের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ছিলেন।তাঁর সময় বেশ কিছু উন্নয়ন মূলক কাজ হয়ে ছিল যা আজও প্রবীণরা বলেন। তারও আগে ১৯৫৫ সন হতে সদাগর পরিবারের সদস্য আব্দুল গনি সদাগর ১নং ওয়ার্ডে ২ বার ইউনিয়ন বোর্ডের এবং ১ বার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন।
পরিবার সূত্রে আরও জানা যায়,সদাগর পরিবারের হামিদা আকতার এবং আয়শা আকতার পাকিস্তান আমলে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে ছিলেন। এই সদাগরবাড়ির সদস্য-ডাক্তার ইসতিয়াক আহমেদ চট্টগ্রাম এমপিরিয়েল হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। তার স্ত্রীও ইনজিনীয়ার। আর এক সদস্য, ইনজিনীয়ার তারিক আহমেদ এবং তার ডাক্তার স্ত্রীসহ নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত। আর এক সদস্য হামিদা আকতার ও তার শিক্ষক স্বামী গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে বর্তমানে প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মাসুক হাসান আহমেদ রনি।
অপরদিকে আফিজ উদ্দিন সদাগরের দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আব্দুর রশিদ সদাগর জাপানে স্কলারশিপ নিয়ে চারুকলা শিল্পী এবং ছোট ছেলে খুরশিদ উদ্দিন সদাগরও সুনামধন্য চারুশিল্পী। তারা দুই ভাই-ই চারুশিল্পে বিশেষ অবদান রাখায় ১৯৭৪ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত থেকে সম্মাননা পদক গ্রহন করে ছিলেন।
গগডা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাত্নন শিক্ষক শতবর্ষী গিয়াস উদ্দিন সাহেবসহ বেশ ক'জন প্রবীণ লোক জানান,মাফিজ উদ্দিন সদাগর সাহেবরা বাড়িতে এলে প্রচুর কাঁচা টাকা (রূপার কয়েন) নিয়ে আসতেন। তাঁরা গ্রামের গরীব-দু:খি মানুষদের মাঝে ওই টাকা বিলিয়ে সাহায্য করতেন। তাঁরা পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে নিলাম হওয়া ভূ-সম্পত্তি সর্বোচ্চদামে ডেকে ক্রয় করতেন। এলাকার মানুষের কাছে বিশেষ সমীহ পেতেন তারা।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এটি একটি কৃষি প্রধান ফসলী এলাকা। এখানে ধান-পাটের পাশাপাশি সবজি, মরিচ,মসলা,আলো টমেটোসহ না না ফসল উৎপাদন হয়।বিশেষ করে খিরার জন্য আলাদা খ্যাতি রয়েছে অঞ্চলটির। প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে সদাগরবাড়ির। তা ছাড়া পরিবারে শিক্ষিতের সংখ্যাও বেশী। বহু উচ্চপদের চাকরিজীবিসহ ব্যাবসায়ী রয়েছেন। সব মিলিয়ে সদাগরবাড়ির ঐতিহ্য বাড়িয়ে দিয়েছে ঐ "সাগরদীঘি"। এলাকায় সর্ববৃহৎদীঘি হওয়ায় এবং এর নান্দনিক সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক সবুজাভ-নীলাভ অথৈ পানি,অবারিত মৃদুমন্দ হাওয়া,বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ,ছায়াঘন নিভৃত পল্লী প্রকৃতিপ্রেমিদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাই বিভিন্ন অঞ্চল হতে প্রচুর মানুষ সাগরদীঘি দেখতে ছুটে আসেন দীঘির পাড়ে।
মোজাফরপুরে অনেক কৃতি মানুষের জন্ম হয়েছে। এক সময় হিন্দুদের বিশেষ প্রাধান্য ছিল।অনেক প্রভাবশালী হিন্দু পরিবারের মঠ মন্দির এবং সমাধি-শ্বশ্মানের নিদর্শন আজও রয়েছে। এছাড়া খ্যাতিমান সাহেববাড়িসহ খান্দানি মুসলিমদের নিদর্শন রয়েছে।রয়েছে আমেরিকা প্রবাসী লুৎফর আলী বাবুল সাহেবের দৃষ্টি নন্দন আধুনিক মডেলের আকর্ষনীয় বাড়ি। আছে সম্প্রীতির ঐতিহ্য।
সাগরদীঘি দেখতে যদি আসতে চান তাহলে কেন্দুয়া সদর হতে বড় পিচ রাস্তায় চিরাং বাজার হয়ে তাড়াইল সড়কে ১৫ কিমি এলেই দেখবেন ঐতিহ্যবাহী সাগরদীঘি। তার আসপাশের নয়নাবিরাম মনমাতানো দৃশ্য আপনাকে বিমোহীত করবে নি:সন্দেহে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্রদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক, ৬ শিক্ষিকা গ্রেপ্তার
দ্বিতীয় পুর্ব