
রবীন্দ্রনাথ-শৈলজারঞ্জন-দত্ত উচ্চবিদ্যালয় অতঃপর নেত্রকোণা
গারো পাহাড়ের পাদদেশে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ, হাওর বাওর খাল বিল নদী নালায় ভরপুর, মহুয়া মলুয়া স্মৃতি বিজড়িত নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের বাম গ্রামে জন্ম নেয়া শৈলজারঞ্জন মজুমদার।
যিনি বিভাগপূর্ব কলিকাতায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্যে এসে কবি গুরুর গানের সুর ও স্বরলিপি তৈরী করে রবীন্দ্র সঙ্গীতকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন এবং কবিগুরুর স্নেহধন্য হয়ে রবীন্দ্রাচার্য্য উপাধি পেয়ে গুরু দেবের শান্তিনিকেতনকে সম্মৃদ্ধ করেছিলেন। তিনি আমাদের নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের গর্বিত সন্তান শৈলজারঞ্জন মজুমদার।
যার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে মোহনগঞ্জের বাম গ্রামে, মোহনগঞ্জেরই আর এক গর্বিত সন্তান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুদানে শৈলজারঞ্জন মজুমদারের বাড়িতে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলা হচ্ছে। সাজ্জাদুল হাসানের নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি এপার বাংলায় (আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ) আর একটি শান্তিনিকেতন গড়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
শৈলজারঞ্জন মজুমদার নেত্রকোণার গর্ব। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল শৈলজারঞ্জনের সাথে সাক্ষাতের। সময়টা ছিল ১৯৭৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। সাপ্তাহব্যাপী ভাষা দিবস উদযাপনকালে বাংলা একাডেমীতে। সেসময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। উনার কাছ থেকে স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতায় যখন জানলাম উনি নেত্রকোণা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সেদিন আমার বুকটা গৌরবে ভরে উঠল এবং প্রাণ ভরে উনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। আমরা যে নেত্রকোণার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সে মেসেজটা সেদিন তাকে দিতে পেরেছিলাম।
পরবর্তিতে তিনি যখন রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসাবে নেত্রকোণায় এসেছিলেন সেদিন নেত্রকোণার সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ তাকে ফুলেল সংবর্ধনা প্রদান করেছিলেন। নেত্রকোণা পাবলিক হলে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেসময় তিনি নিজ গ্রামেও গিয়েছিলেন। মোহনগঞ্জের সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছ থেকে জানলাম গ্রামের বাড়ির মাটি সেদিন তিনি কপালে স্পর্শ করেছিলেন। মোহনগঞ্জের সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী তাকে সংবর্ধনা প্রদান করেছিলো। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সাবেক এমপি মরহুম ডা: আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এর বাসায় আতিথিয়তা গ্রহন করেছিলেন।
শৈলজারঞ্জন মজুমদার নেত্রকোণার এমন একজন গুণী মানুষ যাকে ভালবেসে তার (শৈলজারঞ্জন) জন্ম দিনে রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর লিখেছিলেন-
“জন্মদিন এল তব আজি
ভরি লয়ে সংগীতের সাজি
বিজ্ঞানের রাগ রাগিণীর রসায়নে
পূর্ণ হল তোমার জীবনে।
কর্মের ধারায় তব রসের প্রবাহ যেথা মেশে
সেইখানে ভারতীর আশীর্ব্বাদ অমৃত বরষে।”
নেত্রকোণার প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যে গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ ছিলো তা শৈলজারঞ্জন মজুমদার এর কারনে। যার ফলে কলকাতার বাহিরে নেত্রকোণা দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে কবির প্রথম জন্মজয়ন্তী পালন করা হয়েছিল। যার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন আমাদের প্রিয় শৈলজারঞ্জন মজুমদার। তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও পরমাত্মার শান্তি কামনা করছি।
লেখক: হায়দার জাহান চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক
আরও পড়ুন: হুয়াওয়ে বুয়েট আইসিটি একাডেমি’র ২য় ব্যাচের নিবন্ধন শুরু