কেন্দুয়ায় কৃষি অফিস আঙ্গিনায় আদা চাষ দৃষ্টি কাড়ছে কৃষকদের
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি অফিস আঙ্গিনায় আদা চাষে সফলতায় বেশ আলোচনায় আছেন কৃষি কর্মকর্তাগণ।
কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ শারমিন সুলতানার প্রচেষ্টা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে তার অফিসের বারন্দার সামনের পতিত জায়গায় চটের বস্তায় আদা চাষ করে বেশ আলোড়ন তুলেছেন।
উপজেলার অফিসপাড়ায় সেবা নিতে আসা লোকজনের দৃষ্টিকাড়তে সক্ষম হয়েছে এই আদা চাষ। আল্প জায়গায় স্বল্প খরচে বস্তায় আদা চাষের এই সাফল্য দেখে অনেকেই বস্তায় আদা চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের মূল গেইট দিয়ে অফিসপাড়ায় ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ে কৃষি অফিসের বারান্দার নামায় একচিলতে জায়গায় সবুজে ছেয়ে যাওয়া আদাগাছের সারি। বাতাসের ধাপটায় পাতাগুলো যেনো হেলে-দোলে আগতদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। পথিকও থমকে দাঁড়িয়ে একনজর দেখে যান এই মনোরম দৃশ্যটিকে।
এ দিকে আর এক আদা চাষি উপজেলার ব্রাহ্মণজাত গ্রামের আনোয়ার জাহিদ মল্লিক জানান,তিনিও আদা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার বাড়িতে ৬শত বস্তায় আদা চাষ করেছেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় তিনি তার বাড়িতে ৬শত বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনী করেছেন। তাকে উপজেলা কৃষি অফিস সার্বিক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন বলে জানান।
তিনি আরও বলেন- আদা চাষে উৎপাদন ব্যায় কম এবং খুব একটা পরিচর্যাও করতে হয় না। তিনি আশা করছেন ভাল লাভবান হবেন। অপর দিকে পইকুড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্কা অপু জানান, পাইকুড়া গ্রামের ফুকান মিয়া ১৪শ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। তার ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শারমিন সুলতানা।
আমরা আশা করছি খুব লাভবান হবেন এই কৃষক। কান্দিউড়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসের ভূঁইয়া বাচ্চু জানান,জালালপুর গ্রামেরতমজিদ উদ্দিন গোগবাজার এলাকায় ১১শ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। আমরা নিয়মিত পরিদর্শন করছি ও পরামর্শ দিচ্ছি। কোন বালাই দুর্যোগ না হলে ভাল ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ শারমিন সুলতানার প্রচেষ্টায় কৃষি অফিস সংলগ্ন একচিলতে জায়গায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে ৮০টি বস্তায় আদা চাষ করেছেন। প্রতিটি বস্তায় ৬০ গ্রাম করে আদাবীজ রোপন করা হয়।
এতে মোট ৪ কেজি ৮০০ গ্রাম আদাবীজ রোপন করতে হয়েছে। বীজ রোপনের ৯ মাসের মধ্যেই আদার ফলন পাওয়া যাবে বলে কৃষি অফিস জানায়। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো: মাসুদ মিয়া জানান, প্রতি বস্তায় ৩ কেজি করে জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছে।
বস্তা, বীজ, সার, নেটসহ সব মিলিয়ে সাড়ে ৭ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। ৯ মাসের মধ্যে প্রতি বস্তায় ১ কেজি করে আদা উৎপাদন হবে। উৎপাদিত আদা যদি ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয় আদার বিক্রয় মূল্য হবে ১৬ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আমরা আদা চাষে মানুষদের উদ্বুদ্ধ করতে এখানে চাষের ব্যবস্থা করেছি।
কৃষকদের তিনি জানান, প্রতি বছর মার্চ এপ্রিল মাসে আদা চাষ করতে হয়। আদা চাষে তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয় না। খরচ কম লাভ বেশী। পতিত যে কোন জায়গায় আদা চাষ করা যায়। তবে আধো আলো আধো ছায়া এমন জায়গা আদা চাষের জন্য উত্তম।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টম্বর) কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ শারমিন সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আদা চাষে কৃষকদের মনোবল বাড়াতে এবং সবাই যাতে তাদের বাড়িতে বা যে কোন পতিত জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হন- মূলত সেই জন্যেই আমাদের অফিসের সামনের খালি জায়গাটিতে বস্তায় আদা চাষের এই উদ্যোগ নিয়েছি।
আমাদের আদা চাষ দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। মানুষ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আদা চাষ দেখে আনন্দ পান। আশা করি উপজেলায় অনেকেই বস্তাতে আদা চাষ করবেন। এতে করে কৃষক লাভবানের পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আমরা অন্য জেলাতেও রপ্তানি করতে পারবো।
আরও পড়ুনঃ কেন্দুয়ায় স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত