রোববার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

সেই পুরনো চেহারাতেই ঢাকাই সিনেমা

প্রকাশিত: ০৮:২০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সেই পুরনো চেহারাতেই ঢাকাই সিনেমা

সেই পুরনো চেহারাতেই ঢাকাই সিনেমা

ঢাকাই সিনেমা সেই যে খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল, সেখান থেকে আর ফিরে আসতে পারছে না। মাঝে-মধ্যে দু-একটা সিনেমা আশার আলো জ্বালালেও দেশের সিনেমার চিত্র যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।

যদিও ছবির গুণগত মান নিয়ে নয়, বলা হচ্ছে ঢাকাই সিনেমায় দর্শকের উপস্থিতির বিচারে। তা না হলে এক সময় নব্বই দশকে যেখানে প্রায় দেড় হাজার সিনেমা হল ছিল সেটা কমতে কমতে ৪৬টিতে কেন এসে নেমেছে আজ! কিছুদিন আগে যায়যায়দিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এক ফাঁকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমিও ভাবছি আমার সিনেমা হলটি ভেঙে সে জায়গায় মার্কেট করার। যেমন যাচ্ছে, এই দেশে আর কখনো সিনেমার বাজার দাঁড়াবে বলে মনে হয় না। ঢাকাই বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগ শেষ। সেটা আর কখনোই ফিরবে না।’

সম্প্রতি কয়েকটি সিনেমা ভালো ব্যবসা করায় অনেকে মনে করেছিলেন আবার বুঝি ঢাকাই সিনেমা সেই স্বর্ণযুগে ফিরে আসতে শুরু করছে। কিন্তু একটি সিনেমা ব্যবসা করে তো আবার ধারাবাহিকভাবে একের পর এক সিনেমা সুপার-ডুপার ফ্লপ মারতে থাকলে সেই আশায় গুড়ে বালিই পড়ে।

করোনা-পরবর্তী সময়ে ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ ভালো ব্যবসা করেছিল। সিনেমাটি সমসাময়িক আলোচিত ঘটনার উপর নির্মিত। সেই সুবাদেও এটা দেখতে প্রচুর দর্শক হয়। আলোচিত ঘটনার কারণে দর্শক হবে এটা প্রত্যাশিতও ছিল। তবে ‘হাওয়া’ সিনেমাটি যেন সব হিসাব পাল্টে দিল। যা অপ্রত্যাশিতই ছিল। অনেকে বলেন, পরাণ সিনেমার দর্শক যখন টিকিট পাচ্ছিল না সেই দর্শকের সুবিধাই পেয়ে গিয়েছিল ‘হাওয়া’ সিনেমাটি। কিন্তু এটা ভুল প্রমাণিত হয়েছে যখন সিনেমাটি ইন্ডিয়ায়ও বিপুল দর্শক টানতে সক্ষম হয়েছে।

এসব কারণে সবার মাঝে একটা আশার সঞ্চার হয় ঢাকাই সিনেমা আবার সেই সোনালি সময়ে ফিরবে। সেটা তো হলোই না বরং ১০ বছর ধরে যে চেহারা দেখা গেছে সেই চেহারাতেই রয়ে গেছে। অর্থাৎ সেই খাদের কিনারাতেই রয়ে গেছে। এখন খাদেই পড়ে যায় কিনা এ নিয়েই যেন হল মালিক, সিনেমা পরিচাল-প্রযোজকদের কপালে ভাঁজ পড়ে গেছে।

গেল ঈদে শাকিব খানের ‘প্রিয়তমা’ সিনেমাটি আবার ব্যবসায়িক ধারায় ফিরেছিল। রায়হান রাফীর ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমাটিও। তবে শাকিব খানের সিনেমাটিকে ঘিরে বাড়াবাড়ি রকমের ব্যবসায়িক সাফল্য দেখানো হয়। দাবি করা হয়, এটা ‘বেদের মেয়ে জোস্না’কেও ছাড়িয়ে যাওয়া ব্যবসা করেছে। ‘বেদের মেয়ে জোস্না’ যখন প্রেক্ষাগৃহে আসে তখন প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এমন কোনো প্রেক্ষাগৃহ ছিল না যেখানে উপচেপড়া দর্শক হয়নি। কিন্তু এখন প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যাই ৪৬টি আর ঈদে যা খোলা হয় বেশিরভাগই কমিউনিটি হল। আসন দেড়-দু’শ। এমন প্রেক্ষিতে সিনেমাটির ব্যবসা প্রায় ৩০ কোটি দাবি করার বিষয়টি বোধগম্য নয়।

এই জন্যই মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘ফিল্মের গরুও গাছে চড়ে’। চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা নাদের চৌধুরী বলেন, ‘শাকিব খানের যেসব সিনেমা ব্যবসা করে সবই ফেস্টিভালে (ঈদ, বিজয় দিবস প্রভৃতি) মুক্তি পাওয়া সিনেমা। তার সিনেমা অন্যান্য সময়ে মুক্তি দেওয়া হোক, তাহলেই বোঝা যাবে তার সিনেমা কেমন ব্যবসা করে।’

ঢাকাই সিনেমার বাস্তবতা এখানেই দাঁড়িয়ে আছে। যা কিছু ব্যবসা করছে ঈদেই। একটি ঈদে ৪টি থেকে ৭/৮টি সিনেমা মুক্তি দেওয়া হয়। সব সিনেমাই ব্যবসা করে এমন নয়। একটি কি দুটিই ব্যবসা করছে। বাদ-বাকি সুপার-ডুপার ফ্লপ। ২০২২ সালে যখন ‘পরাণ’ মুক্তি পায় তখন আরও দুটি সিনেমা মুক্তি পায়। ‘দিন : দ্য ডে’ এবং ‘সাইকো’। ‘দিন : দ্য ডে’ও প্রথম দিকে ব্যবসা করলেও পরে ছিটকে পড়ে। ‘সাইকো’ পাত্তাই পায়নি।

এরপর আরেক ঈদ আসার আগ পর্যন্ত ‘হাওয়া’ ছাড়া আর কোনো সিনেমাই ব্যবসা করেনি। বরং সময়ের ফেরে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যাও কমতে থাকে। এমনকি ঐ বছরের প্রায় শেষের দিকে মুক্তি পাওয়া বিগ বাজেটের সিনেমা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ও ফ্লপ হয়। এই সিনেমাটিকে ঘিরে তবু কিছুটা আওয়াজ ছিল, অন্য ছবিগুলো তো একেবারেই নিঃশব্দে মুক্তি পেয়েছে।

সেজন্যই দেশের বিশিষ্ট পরিচালক গাজী রাকায়েত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে এক সময় সিনেমার যেমন এনভায়রনমেন্ট (পরিবেশ) ছিল সেটা আর নেই। যখন গ্রামে-গঞ্জে সিনেমা হলগুলো ছড়িয়ে ছিল। সেই এক কোটি দর্শকের সিনেমাহল এখন আর নেই। তখন আমাদের যে এভারেজ অডিয়েন্স বা গড় দর্শক ছিল সেটা চলে গেছে। গড় দর্শক মানে যারা প্রতি মাসেই হলে যেত। সারা বছরই কম-বেশি হলে যেত। মানুষ তো সারা জীবন একই তরকারি দিয়ে ভাত খায় না। রুচির পরিবর্তন চায়। দর্শক এই রুচির পরিবর্তন চাইলেও আমি কিন্তু তার চাহিদামতো সিনেমা দিতে পারছি না। এখন অডিয়েন্সও চেঞ্জ হয়ে গেছে। যারা সিনেপ্লেক্সনির্ভর।

ঢাকায় যে দুই কোটি মানুষ আছে তার মধ্য থেকে এই দর্শক সর্বোচ্চ ২০ লাখ হবে। তাও কম নয়। মোটামুটিভাবে এই দর্শকই ঈদে উপস্থিত হয়। সুপারহিট দর্শক আর গড় দর্শক এক নয়। সুপারহিট দর্শক হচ্ছে ‘উইন্টার বার্ড’ (শীতের পাখি) এর মতো। যারা বছরে এক-দুই বারের বেশি হলে যায় না। আর ‘গড় দর্শক’ প্রতি মাসেই হলে যায়। আঁতলামী করে লাভ নেই। আমিও কখনো গানের ছবি দেখি। এখন আমাদের সিনেমাকে বাঁচাতে হলে সবচেয়ে জরুরি ‘গড় দর্শক’। যারা সারা বছর প্রেক্ষাগৃহে যাবে। কাজেই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সিনেপ্লেক্সের ‘ইউন্টার বার্ড’ মতো দর্শকই বাংলাদেশের দর্শক না। তারা যে দু’তিন হাজার টাকা খচর করে সিনেপ্লেক্সে যায় বাংলাদেশের সব মধ্যবিত্তের দর্শক সে টাকায় সিনেমা দেখবে না। এখন সেই দর্শক কোন সিনেমা চাচ্ছে সেটা তো আমি তাকে দিতে পারছি না। আবার তাদের সেই চিরচেনা প্রেক্ষাগৃহগুলোও নেই। এখন ঢাকাই সিনেমা আগের পরিবেশের চেহারায় ফিরে আসবে তখনই যখন দর্শক অন্তত প্রতি মাসে সিনেমা দেখতে হলে যাবে।’

আরও পড়ুন: বকশীগঞ্জে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 808