সোমবার ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ কার্তিক ১৪৩১

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

সন্তোষ সরকারকে যেমন দেখেছি

আনোয়ার হোসেন শাহীন

প্রকাশিত: ০৭:৫০, ৭ জুন ২০২৩

আপডেট: ০৭:৫৫, ৭ জুন ২০২৩

সন্তোষ সরকারকে যেমন দেখেছি

সন্তোষ সরকার

অনেক দিন যাবৎ সন্তোষ দার সাথে সাক্ষাৎ বা কোন যোগাযোগ নেই। এবার ঈদুল ফিতরের পরদিন মামার বাড়ীতে যাওয়ার সময় ভাবছি, কেন্দুয়া যেয়ে দাদার খোঁজ নেব।আমার অনেক স্মৃতি বিজরিত তৎকালীন চান্দের দিঘি সংলগ্ন এসে সন্তোষ দাকে কল করি।কল রিসিভ করেন বৌদি।

আমার পরিচয়  দিয়ে বলি, দাদা কেমন আছেন ? তিনি যা বললেন  তা শুনে আমার শরীর  হিম হয়ে গেল। বৌদি বলেন -আপনার দাদা  তো কথা বলতে পারেন না।,ট্রোক করেছেন। আমি বলি বৌদি আগামীকাল দাদাকে দেখে যাব। এই বলে ফোনটা কেটে দেই। পরক্ষণেই লেখক, সাংবাদিক, নাট্যকার  রাখাল দার সাথে যোগাযোগ করে বলি সন্তোষ দা অসুস্থ্য  জানালেন না ?

তিনি বলেন বলি বলি করে বলা হলো না। বাজারে আসতে প্রস্তুতি নিচ্ছি দু- তিন মিনিটের মধ্যে আসছি বললেন রাখাল দা।কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসলেন রাখালদা এবং তার কাছ থেকে  সন্তোষ দার বিষয়ে বিস্তারিত  জানতে পারি।

পরদিন পরন্ত বিকেলে কেন্দুয়া  সাউদ পাড়া সান্তোষ দার বাসায় যাই।ঘরে প্রবেশ করছি ও দেখছি দাদা বিছানায়  শুয়ে রয়েছেন।আমাকে দেখেই দাদা এপাশ  ওপাশ করে খুব চেষ্টা করছেন উঠে  বসতে।কিন্তু উঠতে  পারছেন না।বৃথা চেষ্টা,আমি পাশে বসলে আমার  হাতটুকু টেনে দাদার বুকে, মুখে ছোঁয়াতে  লাগলেন।বৌদিকে বলি কি করে কি হয়ে গেল।

তিনি বললেন - ২২ফেব্রুয়ারী ও ১৪ মার্চে দুবার ব্রেণ স্ট্রোক করেছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেলে অনেক দিন থেকেছি। ভালো  হলো না, শরীলের একাংশ অবশ।
  দাদা, কথা বলতে পারছেন না, লিখতে পারছেন না।নির্বাক,বাকশক্তি  হারিয়ে  ফেলেছেন। শুধু তাকিয়ে  থাকেন।আমার মনে হচ্ছে, আমাকে  চিনতে পেরেছেন। হাতের  আঙুলের ইশারায় কি যেন বলতে চাচ্ছেন, কিন্তু  বুঝতে  পারছি না।

২০১৮ সালের শুরুতে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ময়মনসিংহে জালাল খা কে নিয়ে একটা অনুষ্টান  হবে, আমি অংশগ্রহণ  করবো তুমি চলে এসো। ঐ দিন আমার ময়মনসিংহে যাওয়া  হয়ে উঠেনি।  আর আমিও আর দাদার সাথে যোগাযোগ  করেনি। বৌদি এ কথা শুনে বলেন শারীরিক  অসুস্থতার কারনে তিনিও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন  করতে পারেন নি। অনেকক্ষণ  থেকে আমি বিদায়  নিয়ে চলে আসি। 

সন্তোষ দাকে আমি ছোটবেলা থেকেই  চিনি, কেন্দুয়া  জয়হরি স্প্রাই উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে ' সন্তোষ আর্ট' নামে প্রতিষ্ঠানে প্রায়ই যেয়ে আমি বসে থেকে দাদার রংতুলির কাজ দেখতাম। আমাকে খুব স্নেহ  করতেন।
সন্তোষ  সরকার  আশির  দশকের কেন্দুয়া  সাংস্কৃতিক  অঙ্গনের পরিচিত একটি নাম।তার বড় পরিচয়  ময়মনসিংহ  গীতিকার সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দের বংশধর।

তিনি নিজেও লোক ঐতিহ্য  সংগ্রাহক, কেন্দুয়া প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা আহবায়ক, কেন্দুয়া  পুজা উদযাপন  কমিটির  সভাপতি, ঝংকার  শিল্পী গোষ্ঠী  প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালনকারী। সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তি। তিনি দীর্ঘ দিন দৈনিক  সংবাদের যুক্ত ছিলেন।

গৌরীপর থেকে সুবর্ণ বাংলা  পত্রিকা প্রকাশিত হলে আমি এর বার্তা সম্পাদক  হিসাবে কাজ করি।এ সময় সন্তোষ দাকে বলি লেখা দিতে।তিনি বলেছিলেন-' নিয়মিত পারবো না',আমি বলি আপনার লেখা কেন্দুয়া আমার আসা যাওয়ার পথে নিয়ে যাব। 

দাদার সাথে প্রায়ই বসে সময় কাটাটাম। ২০০৪  সালের কথা। দাদা বলেছিলেন,' শাহীন রামায়ন মহা কাব্যের রাম ও সীতার বারোমাসি গীত সংগ্রহের জন্য বাংলা একাডেমীর লোক ঐতিহ্য বিভাগের সমীক্ষক মুহাম্মদ সাইদুর রহমানকে সাথে নিয়ে সুসাহিত্যিক, গবেষক ড. অমত্য সেনের স্ত্রী ড. নবনীতা সেন আমার বাসায় এসেছিলেন।

যাওয়ার সময় আমাকে কোলকাতা যেতে আমন্ত্রন জানিয়ে ছিলেন।এর  বৎসর খানেক পরে দাদার সাথে সাক্ষাৎ তিনি আমাকে বলেন- 'লোক সাহিত্যের একটা প্রোগ্রামে কোলকাতা থেকে ঘুরে এসেছি।সেখানে মুল বক্তব্য পাঠ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।,' আমি আগ্রহভরে তার কথাগুলো শুনছিলাম।

এ সময় দাদাকে আমি  বলে ছিলাম এ বিষয়ে লিখতে। তিনি  আমার  কথা রেখেছিলেন। পরবর্তিতে  কোলকাতা লোক সাহিত্যের লোক উৎসবের নানা বিষয় নিয়ে " তুমি হইও গহিন গাঙ, আমি ডুইব্যা মরি" এই শিরোনামে সন্তোষ সরকার লিখেন।লেখাটি সুবর্ণ বাংলা  পত্রিকায় ২০০৫ ইং সনে ২ জানুয়ারী ৩ বর্ষ ৮ম ও ৯ম সংখ্যায় দুটি পর্বে প্রকাশ করি। 

এ ছাড়া দাদা আমার কাছে যে সব বিষয়ে লেখা  পাঠাতেন বা আমি সংগ্রহ করেছি সেগুলোর  কয়েকটি  লেখার  শিরোনাম  উল্লেখ  করছি, যেগুলো  সুবর্ণ বাংলায় প্রকাশের  উদ্যোগ নেই।


'ধ্বংসের অতলান্তে  নলিনী রঞ্জনের প্রত্রিক স্মৃতি চিহ্ন'চাঁদ রায়ের  শেষ  স্মৃতি  চিহ্ন', 'কেন্দুয়ার রোয়াইল বাড়ীতে  প্রাচীন যুগের ধ্বংসাবশেষ','আত্বনুসন্ধানী মরমি সাধক জালাল খাঁ', পল্লী কবি রৌশন  ইজদানীর জীবন  সাহিত্য  ইত্যাদি।সন্তোষ সরকারকে লোক সংস্কৃতিতে সামগ্রিক  অবদানের স্বীকৃতিসরূপ নেত্রকোনা জেলা শিল্পকলা  একাডেমি  সন্মাননা ২০১৬ প্রদান করা হয়।

এই গুণী মানুষটিকে সুস্থ্য করে তোলার জন্য পারিবারিক  পর্যায়ে আপ্রান চেষ্টা  করে যাচ্ছেন তার পরিবার। উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারী বেসরকারি ও সাংবাদিক সমাজ এগিয়ে আসার প্রয়োজন।আমরা প্রত্যাশা করি সন্তোষ দা সুস্থ্য হয়ে উঠুন,বাক শক্তি ফিরে পান।আবারও লেখা-লেখিতে ফিরে আসুন এ প্রত্যাশা রাখি।

আরও পড়ুন: চাচার দায়ের করা মামলায় চার ভাতিজা গ্রেফতার

প্রকাশের সময়: ৮ আগস্ট ২০১৮

ব্রেকিং নিউজ:

র‌্যাবের হাতে কোম্পানীগঞ্জের যুবলীগ নেতা ইকবাল গ্রেফতার
ঝিনাইদহের সাবেক এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী গ্রেফতার
সিলেটে র‌্যাবের হাতে ভয়ংকর সন্ত্রাসী শুটার আনসার ও সহযোগী নাঈম গ্রেপ্তার
সাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর ব্যক্তিগত পিএসসহ গ্রেফতার-২
জুয়া খেলার টাকা দিতে না পারায় জুয়ারীকে মারপিট: আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্ন
জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি সোহেলসহ গ্রেফতার-১৫
কানাইঘাটের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফজল র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার
সিলেটে পংকজ কুমার হত্যা: স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গ্রেফতার
নেত্রকোণায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি নেতা আটক
হবিগঞ্জে ৬৬ কেজি গাঁজাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামী আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
ছাত্র হত্যা মামলায় ব্যারিস্টার সুমন গ্রেপ্তার
সুনামগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিস্ফোরক উদ্ধার
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা আফতাব আলী গ্রেফতার
হবিগঞ্জে আলোচিত হত্যা মামলার প্রধান আসামী গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
কেন্দুয়ায় ১০ বছর ধরে বাড়িছাড়া পাঁচ পরিবার
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা তৌফিক বক্স গ্রেফতার

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 851