মঙ্গলবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০ আশ্বিন ১৪৩০

কেন্দুয়ার লোক শিল্পী আব্দুল হেলিম বয়াতী: জারি গান ও পূঁথি পাঠ যার জীবনের সাধনা

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৪ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ২০:৪৭, ৪ আগস্ট ২০২৩

কেন্দুয়ার লোক শিল্পী আব্দুল হেলিম বয়াতী: জারি গান ও পূঁথি পাঠ যার জীবনের সাধনা

লোক শিল্পী আব্দুল হেলিম বয়াতী

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের দিঘলকুর্শা রাজিবপুর গ্রামে ১৩৫০ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসের প্রথম শনিবার সকালে মরহুম মিয়া চাঁন ও মরহুমা হুসেন বানুর ঘর আলোকিত করে যে শিশু সন্তানটি জন্ম গ্রহণ করে,তিনি আর কেউ নন।

তিনি হলেন বাংলাদেশের স্বনামধন্য লোক শিল্পী কেন্দুয়ার আব্দুল হেলিম বয়াতী। যিনি জীবনের প্রায় সবটুকু সময় ব্যয় করেছেন জারি গান ও পূঁথি পাঠের সাধনায়।

আত্ম মগ্ন নিবেদিত সঙ্গীত প্রেমিক এই বয়াতীর বয়স যখন ৩ বছর তখন তার ডান পায়ের পিছনের উরুতে একটি বড় রকমের ফোঁড়ার আর্বিভাব ঘটে,পিতার আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য সঠিক চিকিৎসা করা পারে নি।

সেই সময় থেকে আব্দুল হেলিম বয়াতীর ডান চরণটি অনেকটা অকেজো হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধীর আওতায় এনে দাঁড় করায় থাকে। তিনি তৎকালীন কেন্দুয়া জয়হরি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার পর সংসারের অভাব-অনটনের কারণে লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়।

তাঁর পিতা মিয়া চাঁন ছিলেন এলাকার জনপ্রিয় পূঁথি পাঠক।সে সুবাদে ছোটবেলাতেই আব্দুল হেলিম বয়াতী পড়ার ফাঁকে প্রায় সময়ই পূঁথি পাঠের চর্চা করতো।

এলাকায় পিতার পরিবেশিত জারি গানে মুগ্ধ হয়ে বয়াতীর জারি গান শেখার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পিতা-মাতার নিষেধ থাকা সত্তেও তিনি স্থানীয় ছোবহান বয়াতীর নিকট জারি গানের তালিম নেন। মা-বাবার অগোচরে উস্তাদের নিকট জারি গানের তালিম নিতে থাকে দিনের পর দিন। পড়ে কিছু টাকা যোগাড় করে মীর মোশারফ হোসে রচিত বিষাদ সিন্ধু পুস্তকটি বাজারের লাইব্রেরী থেকে ক্রয় করে এবং গদ্য থেকে পদ্যে রপান্তরিত করে জারি গান গাওয়া শুরু করেন।

আব্দুল হেলিম বয়াতী তার সংগীত জীবনে কেন্দুয়া এলাকার সীমানা ছাড়িয়ে নেত্রকোনা জেলা শিল্প একাডেমী হতে শুরু করে,ঢাকা,সোনার গাঁও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন,নারায়নগঞ্জ শহীদ মিনার ,ময়মনসিংহ ত্রিশাল নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়,বাংলা একাডেমী,ধানমন্ডি,ছায়ানটসহ বাংলাদেশ শিল্প কলা একাডেমীতে পূঁথি পাঠ করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।এছাড়াও বিটিভিতে চেনা-জানা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে।

২০১০ সালে ঢাকা শিল্প কলা একাডেমী কর্তৃক নাট্যশালায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিশেষ অবদানের জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ লোক শিল্পী হিসাবে সম্মাননা প্রাপ্ত হয়।এছাড়াও প্রায়শই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তার পরিবেশিত জারি গানের অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে।

বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ আব্দুল হেলিম বয়াতী পরিশেষে বলেন,আমি এখন পর্যন্ত জারি ও পূঁথি পাঠের সাধনায় আছি। ভবিষ্যতেও থাকবো। আমার মনের একান্ত ইচ্ছা হল পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে আছি ততদিন প্রভুর কৃপায় ও সকলের দোয়ার বরকতে যেন জারি গান ও পূঁথি পাঠ করে যেতে পারি, সে কামনাই সদা সর্বদা করি।

আরও পড়ুন: কেন্দুয়ায় মাসব্যাপী বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন কাবেরী জালাল