ঈদকার্ড
বাঙালি মুসলমানদের অন্যতম প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর (রমজানের ঈদ) এবং ঈদুল আজহা (কোরবানির
ঈদ)। মুসলিম ধর্মপ্রধান বাংলাদেশে ঈদের আনন্দ বিরাজ করে অন্য ধর্মাবলম্বীদের
মধ্যেও। ঈদের উৎসবমুখরতা আর্থিক, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও
রাজনৈতিক যুগবন্ধনে এখন বর্ণিল কলেবরে বিস্তৃত হয়েছে। সামাজিক
যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমের প্রভাবে আজ বিলুপ্ত প্রায় ঈদ কার্ডে শুভেচ্ছা
বিনিময়ের সেই সংস্কৃতি। হয়তো তরুণ-তরুণীরা জানেও না এসব কার্ডের কথা।
‘ঈদের দাওয়াত তোমার তরে/ আসবে তুমি আমার ঘরে/ কবুল কর আমার দাওয়াত/ না
করলে পাবো আঘাত/ তখন কিন্তু দেবো আড়ি/ যাবো না আর তোমার বাড়ি। ’ ঈদ
ঘিরে প্রিয় মানুষকে শুভেচ্ছা জানানোর চর্চা সেই আদিকাল থেকেই। তবে
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ্#৩৯;ঈদ কার্ড্#৩৯; সংস্কৃতি ইন্টারনেটের প্রভাবে এখন দ্রæত
অতীত হয়ে যাচ্ছে। ৭/৮ বছর আগেও ঈদ কার্ড ছাড়া ঈদের অনূভূতি যেখানে
অপূর্ণ থাকতো সেখানে নতুন প্রজন্মের কাছে ্#৩৯;ঈদ কার্ড্#৩৯; এক অচেনা বস্তু!
একসময় ঈদকার্ডের সেই জায়গা দখল করলো মোবাইল ফোনের এসএমএস। শুভেচ্ছা
বার্তা লিখে পাঠিয়ে দেওয়া হতো কাক্ষিত মানুষের নম্বরে। উত্তরে আসতো পাল্টা
শুভেচ্ছা বার্তা। তবে সে ধারাও এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
ঈদ কার্ডের বদলে মানুষ এখন অভিনব পদ্ধতিতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে তার প্রিয়
মানুষটিকে। ঈদ শুভেচ্ছার জন্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই প্রধান
পাথেয় হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ফেসবুক, টুইটার থেকে শুরু করে যোগাযোগের
অ্যাপস এখন তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফলে ঈদ কার্ডের পর এখন ঈদের
এসএমএসও হারিয়ে যাচ্ছে। জায়গা করে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমগুলো।
আগে গ্রামগঞ্জের পাড়া মহল্লা থেকে রামগঞ্জে সব শপিংমলে ছিল রঙিন ঈদ
কার্ডের পসরা। ছড়াছন্দে লেখা নানান শুভেচ্ছা বার্তা খচিত কার্ড শিশু বুড়ার
অপরিহার্য ঈদের পাথেয় ছিল। ছিল এক অন্য জগতের ভালবাসা প্রেম স্নেহ আর
সম্মানের মাধ্যম। কে কাকে কী লিখে ঈদকার্ড দিচ্ছে এ নিয়ে চলতো নানা
কৌতূহল। প্রিয়জনের কাছ থেকে বিশেষ কার্ডটি পাওয়ার আশায় দিন গুনতো
অনেকেই। অবশেষে কোনো এক কাঙ্ধিসঢ়;ক্ষত দিনে প্রিয়জনের কাছ থেকে সেই
কার্ড পাওয়ার পর ঈদ আনন্দ যেন বেড়ে যেত বহুগুণে!
ঈদ কার্ড বর্তমান প্রজন্মের অনেকের কাছেই অচেনা একটি বিষয়। তবে ৯০ দশকে
যারা বেড়ে উঠেছেন, শৈশব পার করেছেন। তাদের কাছে ঈদ কার্ড আবেগ, অনুভূতি
প্রকাশ ও ভালোবাসা বিনিময়ের সুন্দরতম স্মৃতি। প্রথম রোজা থেকেই অপেক্ষা শুরু
হয় ঈদের। সময় যত গড়ায়, অপেক্ষা পরিণত হয় উত্তেজনায়। সেই উত্তেজনার পারদে তাপ
দেয় ঈদ কার্ড। সে সময় ঈদ এলেই ঈদ কার্ড সংগ্রহের জন্য হিড়িক পড়ে যেত
পাড়ার মোড়ে মোড়ে, অলি-গলিতে ঈদ কার্ডের ছোট-বড়, অস্থায়ী দোকানগুলোয়।
নানা বয়সী অনেকেই রঙিন কাপড় দিয়ে তাঁবু টাঙিয়ে ঈদ কার্ডের দোকান
দিতেন। বিকেল হলেই সবার ভিড় জমতো সেই দোকানগুলোয়। সবাই তাদের
প্রিয়জনদের জন্য পছন্দের ঈদ কার্ড কিনতেন। বড়রা ছোটদের জন্য, বন্ধু বন্ধুর জন্য,
অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য কিনতেন এসব কার্ড। ছোটরা বাবা-মায়ের
কাছে অনেক বায়না করে টাকা নিতো ঈদ কার্ড কেনার জন্য। পাঁচ টাকা থেকে
শুরু করে ১০০, ১৫০ টাকার মধ্যে কেনা যেত সেই কার্ডগুলো।
মধ্যবয়সী কিশোর- কিশোরীরা ঈদ কার্ড কেনার জন্য রমজানের অনেক আগ থেকে টাকা জমাতো। কেউ
টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কেউবা যাতায়াত ভাড়া বাঁচিয়ে টাকা জমাতো। ঈদ
কার্ড যেন এক ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের মতোই, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রত্যেক বছর আলাদা আলাদা ডিজাইনের ঈদ কার্ড বাজারে আসতো। সেগুলোর ধরন,
প্রকৃতি ও নান্দনিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সুন্দর ছবি, লেটারিং,
ক্যালিগ্রাফি, অ্যারাবিক লেখা, বাংলায় লেখা নানা ধরনের ডিজাইনের কার্ড ছিল।’
তবে চারুকলার ছাত্রদের হাতে আঁকা কার্ডগুলো একটু অন্যরকম হতো এ কথা
জানাতে ভুল করলেন না।
সময়ের পালা বদলে ভাব বিনিময়ের মাধ্যম বদলায়। কিন্তু অনুভূতিগুলো থেকে যায় একই।
তাই তো নিজেদের ফেলে আসা সোনালি অতীত এখন সুখস্মৃতি হয়ে বেঁচে
আছে কয়েক প্রজন্মের বুকে। এখনো যদি এই যান্ত্রিক মাধ্যমের পাশাপাশি এগুলো
চালু রাখা যায়। তাহলে নতুন প্রজন্মও আগের মতো সেই আত্মিক অনুভূতির স্বাদ
পাবে বলে বিশ্বাস করেন অনেকেই।
আরও পড়ুন: রামগঞ্জে খালে মিললো নারী ও শিশুর অর্ধগলিত মরদেহ
মোঃ ছায়েদ হোসেন