
নকল মা সাজিয়ে দানপত্র দলিল!
নেত্রকোনা আদালতে সিআর মামলা নং ৮১(১)২০২৩। এ মামলার আসামীরা হলেন, রেজিয়া আক্তারের পুত্র জসিম উদ্দিন, পিতামৃত আঃ কদ্দুছ, গ্রাম বিপ্রবর্গ, কেন্দুয়া, দলিল গ্রহিতা বাবুল মিয়া, পিতামৃত আঃ মন্নাফ, গ্রাম কির্তনখলা, কেন্দুয়া, দলিল লেখক ও সনাক্তকারী হালিম খান, পিতা সুলতান উদ্দিন খান, গ্রাম বাট্টা, সনদ নং- ৮৯৩, সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা, স্বাক্ষী দুলাল মিয়া, পিতামৃত- হাসেন আলী, গ্রাম- চন্দগাতী, শহীদ মিয়া, পিতামৃত- আলাল উদ্দিন, গ্রাম- বিপ্রবর্গ, কেন্দুয়া, নেত্রকোনা এবং নকল মা অজ্ঞাত এক মহিলা।
মামলার কগজপত্র, অন্যান্য সূত্র ও বাদী রেজিয়া আক্তারের বক্তব্যে জানা গেছে কেন্দুয়া উপজেলার মধ্যযুগের কবি কঙ্কের জন্মভূমি বিপ্রবর্গ গ্রামের মৃত আব্দুল কদ্দুছ এর স্ত্রী রেজিয়া আক্তারের ক্রয়কৃত ১৫শতাংশ ভূমি জালিয়াতি করে দানপত্র দলিলের মাধ্যমে আত্মসাতের পাঁয়তারা করে বাবুল মিয়া নামে এক লোক। জানা গেছে জমির দাগ নং-৫৭, হালদাগ-১১২, সাবেক খতিয়ান-১৯, হাল খতিয়া-২০, জমির পরিমাণ-১৫ শতাংশ, দলিল নং-৩০৩৯, সৃজিত দলিল নং-৭৮৯৯ এবং ১৫৫।
বাদী রেজিয়া আক্তার জানান, উক্ত ১৫ শতাংশ জমি তিনি ক্রয়সূত্রে মালিক হন। এই ১৫শতক ভূমি পাশ্ববর্তী মাসকা ইউনিয়নের কীর্তনখলা গ্রামের পিতামৃত আব্দুল মন্নাফের পুত্র বাবুল মিয়া জালিয়াতি করে অন্য এক অজ্ঞাত মহিলাকে রেজিয়া আক্তার সাজিয়ে আমার ছেলে জসিম উদ্দিনের কাছে টাকা পাবে দাবি করে ৭৮৯৯নং জাল দলিল সৃজন করে কেন্দুয়া সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস হতে রেজিষ্ট্রি করে নেয়, এমন খবর জানতে পেরে গত মে ২০২৩ তারিখ নেত্রকোনা জজ আদালতে ছেলে জসিম উদ্দিন, দলিল গ্রহীতা বাবুল মিয়া, দলিল লেখক হালিম খান ও অজ্ঞাত মহিলাসহ ৬জনকে আসামী করে আদালতে মামলা করেছি।
এছাড়া যাতে নামজারি (খারিজ) করতে না পারে সে জন্য কেন্দুয়া এ্যাসিল্যান্ড অফিসে আবেদন করেছি। এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বাদী রেজিয়া আক্তারের পুত্র জসিম উদ্দিন জানান, আমি মূর্খ মানুষ লেখাপড়া জানিনা। গত মাঘ মাসে পাশ্ববর্তী কির্তনখলা গ্রামের জুয়ারি ও সুদের ব্যবসায়ী বাবুল মিয়ার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা হাওলাত নিয়েছিলাম। দেড় মাস পর টাকা ফেরত দিতে চাইলে তিনি চক্রবৃদ্ধি হারে ৩ লাখ টাকা দাবী করেন। আমি উপায়ন্ত না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি।
পরে তিনি বলেন, আমার মায়ের নামে ক্রয়কৃত ১৫ শতক জমিটি তাকে লিখে দিতে হবে। কিন্তু মায়ের জমি আমি দেব কি করে ? তিনি তখন বলেন, সব ব্যবস্থা আমি করব। আমি রাজি না হলে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও চাপ দিয়ে অজ্ঞাত এক মহিলাকে আমার মা সাজিয়ে এনে দলিল লেখক হালিম খানকে দিয়ে দলিল লিখিয়ে আমাকে দানপত্র করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান। এর এক সপ্তাহ পর বাবুল মিয়া আমাকে আবার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে এনে কয়েকটি সই নেয় এবং আমি তাকে দানপত্র করে দিয়েছি বলে জানান।
আমি বাড়ি এসে মাকে জানালে মা আদালতে মামলা করেন। ভয়ে আমি ঢাকা চলে আসি। এব্যাপারে মুঠোফোনে বাবুল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ মিথ্যা। জসিম উদ্দিন তার মায়ের কাছ থেকে দলিল করে আমাকে দিয়েছেন। আমি জমি কিনে দলিল করে নিয়েছি। জুয়া খেলা সম্পর্কে বলেন, জীবনেও জুয়া খেলিনি। জুয়া বোর্ড সম্মন্ধে আমার জানা নেই। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।
দলিল লেখক হালিম খান বলেন, জসিম উদ্দিন তার মায়ের এনআইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছেন এবং তার মাকে এনে দলিল লিখিয়ে নিয়েছেন। প্রতারণা করলে সে বা তারা করেছে, আমি কোন দোষ করেনি। এখন জানতে পারলাম আদালতে মামলা হয়েছে।