মোহনগঞ্জে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীসহ ৩ জন গ্রেপ্তার
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ফাতেমা সুলতানা অরফে রেহেনা (২১) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার দায়ে স্বামী এ্যাডভোকেট সাহিত্য মুরসালিনসহ (৪০) পরিবারের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ৷
এ ঘটনায় শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে নিহত ওই গৃহবধূর পিতা তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে মেয়ের স্বামী এ্যাডভোকেট সাহিত্য মুরসালিনসহ তার পরিবারের ৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর পরপরই পুলিশ ওই ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মোহনগঞ্জ পৌর শহরের কাজিহাটি মাইজপাড়া গ্রামে স্বামীর বসতঘরের একটি কক্ষের ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না প্যাচানো ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূ ফাতেমা সুলতানা ওরফে রেহেনার মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বামীর পরিবারের লোকজন।
পরে খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই হাসপাতাল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
এদিকে নিহত ওই গৃহবধূর পিতা তোফাজ্জল হোসেনের দাবি, তার মেয়েকে স্বামীসহ তার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পুলিশ ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাজিয়াহাটি মাইজপাড়া গ্রামের মৃত ওয়ালী আহম্মেদের ছেলে এ্যাডভোকেট সাহিত্য মোরসালিনের সাথে গত প্রায় ৮ মাস আগে ফেনী জেলার পরশুরাম পৌর শহরের কোলাপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে ফাতেমা সুলতানা ওরফে রেহেনার শরিয়ত মোতাবেক পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়।
বিয়ের পর বেশ কয়েক মাস তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোই চলছিল। এর কিছুদিন পর গৃহবধূ ফাতিমা জানতে পারেন তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী রয়েছে।
স্বামী এ বিষয়টি তার কাছে গোপন রেখে প্রতারণার করে সে তাকে বিয়ে করেছে। এ নিয়ে তখন থেকেই তার স্বামীসহ পরিবারের লোকজনের সাথে গৃহবধূ ফাতেমার ঝগড়াঝাটি চলে আসছিল। এ নিয়ে প্রায় সময়ই গৃহবধূ ফাতেমাকে স্বামীসহ পরিবারের লোকজনের মারধর করত বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এরই জের ধরে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ওই গৃহবধূর স্বামী এ্যাডভোকেট সাহিত্য মুরসালিন তার মা রেজিয়া খাতুন, বড় ভাই হারুন অর রশিদ, ফারুক আহম্মেদ ও বড় ভাবী নাসিমা আক্তার মিলে গৃহবধূ ফাতেমাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তার মরদেহটি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে থানায় আটক নিহতের স্বামী এ্যাডভোকেট সাহিত্য মুরসালিন স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে বলেন, আমি ২০১২ সালে প্রথম বিয়ে করি। কিন্তু আমার প্রথম স্ত্রীর গর্ভ ধারনের ক্ষমতা নেই বলে ডাক্তার জানিয়েছে। প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে পেশাগত কারণে আমি ঢাকাতেই বসবাস করি।
পরবর্তীতে সন্তানের আশায় আমি চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ফাতেমাকে বিয়ে করে তাকে বাড়িতে মায়ের কাছে রাখি এবং আমি তাকে প্রতি মাসেই ১০-১২ দিন করে সময় দিয়ে আসছিলাম। তিনি আরো বলেন, আমি ফাতেমার মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকা থেকে ছুটে এসেছি। ফাতেমার সাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে আমার খুবই মধুর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সে কেন যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল তা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা।
এ ব্যাপারে মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিহত গৃহবধূর লাশ ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে নিহতের পিতার অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা নিহতের স্বামী, তার বড় ভাই ও ভাবীকে গ্রেপ্তার করি এবং তাদেরকে শনিবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
হাফিজুর রহমান চয়ন