কেন্দুয়ায় একপক্ষের মাছ নিধনের অভিযোগের পর অপরপক্ষের হাঁস নিধনের অভিযোগ
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরকারি নোয়াটিয়া বিলের আধিপত্য নিয়ে স্থানীয় কামারগাঁও এবং সরাপাড়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে চলমান বিরোধ বর্তমানে চরমে পৌছেছে। এরই জেরে বিলে বিষ দিয়ে অন্তত ৬ লাখ টাকার মাছ নিধনের অভিযোগ এনে গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) কামারগাঁও গ্রামের ফরিদ মিয়াসহ ৮ জনের নামোল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন বিলটির লিজ গ্রহণকারী সদস্য সরাপাড়া গ্রামের রেহান মিয়া।
এদিকে খাবার খাওয়ানোর জন্য ওই বিলের পতিত জমিতে রাখা সহস্রাধিক হাঁস বিষ প্রয়োগে হত্যার অভিযোগ এনে রেহান মিয়াসহ সরাপাড়া গ্রামের ৯ জনের নামোল্লেখ করে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে থানায় পাল্টা একটি অভিযোগ দায়ের করেন প্রতিপক্ষের ফরিদ মিয়া।
দুইপক্ষের অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কামারগাঁও গ্রাম সংলগ্ন ৪.৩৬ একর আয়তনের নোয়াটিয়া সরকারি বিলটি দীর্ঘদিন যাবত কামারগাঁও গ্রামের লোকজন ভোগদখল করে আসছিলেন। এরইমধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সরকারি নিয়ম মোতাবেক বিলটি তিন বছরের জন্য সরাপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে লিজ দেয় উপজেলা ভূমি অফিস। লিজ দেওয়ার পর প্রশাসন কামারগাঁও গ্রামের লোকজনকে বিল থেকে উচ্ছেদ করে লিজ গ্রহণকারীদের বিলের দখল বুঝিয়ে দেয়। লিজ গ্রহণকারীরা বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ছেড়ে পরিচর্যা করে আসছিলেন। তবে বিলটি লিজ নেওয়ার পর থেকেই কামারগাঁও গ্রামের পলাশ মিয়া, জাহাঙ্গীর, দিকুল ইসলাম, শাহ আলম, ফরিদ মিয়া, নজরুল, ইছব আলী, মজু হকসহ গ্রামটির লোকজন বিল থেকে লিজ গ্রহণকারীদের উচ্ছেদ করতে নানা রকম পাঁয়তারাসহ অবৈধভাবে বিলের মাছ ধরে আসছিলেন।
এ বিষয়ে কামারগাঁও গ্রামের লোকজনকে কয়েকবার সতর্ক করে স্থানীয় প্রশাসন। সর্বশেষ গত বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে পূর্ব নোটিশের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে এক জরুরি সভা করা হয়। সভায় কামারগাঁও গ্রামের লোকজনকে বিলে মাছ ধরতে নিষেধ করা হয়। এরইমধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে লিজ গ্রহণকারীরা বিলে গেলে সব মাছ মরে ভেসে উঠতে দেখতে পান। পরে বিলটিতে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধনের অভিযোগ এনে ওইদিনই কামারগাঁও গ্রামের পলাশ মিয়া ও ফরিদ মিয়াসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন রেহান মিয়া।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে ওই বিলে খাবার খেতে কামারগাঁও গ্রামের ফরিদ মিয়া তার দুই সহস্রাধিক হাঁস ছেড়ে দিয়ে আসেন। পরে হাঁসগুলো বাড়িতে আনতে বিকেলে বিলে গেলে তিনি অন্তত সহস্রাধিক হাঁস মরে পড়ে থাকতে দেখেন। এ ঘটনায় বিষ প্রয়োগে হাঁসগুলো হত্যার অভিযোগ এনে শুক্রবার দুপুরে ফরিদ মিয়া বাদী হয়ে সরাপাড়া গ্রামের রেহান মিয়াসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
সরাপাড়া গ্রামর রেহান মিয়া বলেন, বিলটি লিজ নেওয়ার পর থেকেই ফরিদ মিয়াসহ কামারগাঁও গ্রামের লোকজন বিল থেকে আমাদেরকে উচ্ছেদের জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানারকম ষড়যন্ত্র করে আসছে। তারা রাতের আঁধারে আমাদের বিলে দিয়ে বিষ ৬ লাখ টাকার মাছ মেরে ফেলেছে। এখন উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।
কামারগাঁও গ্রামের ফরিদ মিয়া জানান, নোয়াটিয়া বিলের লিজ গ্রহণকারী সরাপাড়া গ্রামের রেহান মিয়া গাংরা বিলের পতিত জমিতে বিষ প্রয়োগের কারণেই আমার ৪ লাখ টাকার মূল্যের সহস্রাধিক হাঁস মরেছে।
স্থানীয় কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনামুল হক বলেন, দুইপক্ষের অভিযোগই পেয়েছি। অভিযোগগুলোর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালালের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিলটি নিয়ে দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে সৃষ্ট জটিলতা আমরা সমাধান দিয়েছিলাম। কামারগাঁও গ্রামের লোকজন বিল থেকে একটি খাল খনন করেছেন। আমরা খালের মুখ বন্ধ করতেও বলেছি। কিন্তু তারা তা শুনছে না। এখন দুইপক্ষই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে। আবারও উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি অচিরেই সমাধান করব।
আরও পড়ুন: কেন্দুয়ায় বিষ প্রয়োগে ১৫শত হাঁস নিধন,প্রায় ৪ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
আপডেট