কন্ঠ শিল্পী সুসেন চন্দ্র সাহা রায়
নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের স্বনাম ধন্য পালাগায়ক ছিলেন ডাঃ নরেশ চন্দ্র সাহা রায় । তাঁর নাতী সুযোগ্য উত্তরসূরী বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন শিল্পী সুসেন চন্দ্র সাহা রায় । দাদা ডাঃ নরেশ চন্দ্র সাহা রায়ের কাছেই সুসেন চন্দ্র রায়ের সঙ্গীতের হাতে খড়ি।
কুতুবপুর গ্রামে ১৯৭০ ইং সালের ৮ আগষ্ট পিতা সুকুমার সাহা রায় ও মাতা অঞ্জলী সাহা রায়ের ঘর আলোকিত করে,যে ফুটফুটে শিশু সন্তানটি জন্মগ্রহণ করেছিল; তিনি আর কেউ নন । তিনিই আজকের বৈরাটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সপ্ত সুর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সুসেন চন্দ্র সাহা রায় ।
সুসেন চন্দ্র সাহা রায় দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সকলের বড় । তিনি কেন্দুয়া পৌরসভাস্থ আরামবাগ মহল্লায় নিজ বাসায় ১৫/১৬ বছর যাবৎ সপ্তসুর সঙ্গীত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে নিবিড় তত্ত্বাবধানে শুদ্ধ সংগীত চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন । পূর্বে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশী থাকলেও বর্তমানে ২৫/২৬ জন শিক্ষার্থীকে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম দিচ্ছেন ।
তৎকালীন সময়ে নওপাড়ার কুতুবপুরের ঐতিহ্যবাহী একটি বাড়ী ছিল বড়বাড়ী । শত বছর পূর্বে চুন সুড়কির সুরম্য দালানের সেই বাড়িতে শিল্পীর বড় দাদার আমল থেকেই জলসা ঘরে সঙ্গীত চর্চা হতো । প্রায় ৩২০ শতাংশের বড়বাড়ীর পুকুর পাড়ে জলসা ঘরের স্মৃতি বহু-বছর নাগাদ বিদ্যমান থাকলেও আজ তার কোন অস্তিত্ব নেই । তবে বাড়ীর সিংহ দরজাটি আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে নিরবে দাঁড়িয়ে আছে ।
শিক্ষক ও কন্ঠ শিল্পী সুসেন চন্দ্র সাহা রায় ১৯৮৬ সালে এস.এস.সি পাশ করার পর থেকে আর বাড়িতে থাকা সম্ভব হয় নি । সেই থেকে আজ অবধি কেন্দুয়ায় অবস্থান করছেন । ১৯৮৮ সনে নেত্রকোনা সরকারী কলেজে অধ্যয়ন কালীন সময়ে বিশিষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ বৃহত্তর ময়মনসিংহের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত গুরু গোপাল দত্তের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং সঙ্গীত শিক্ষা অর্জন করেন।
কন্ঠ শিল্পী সুসেন সাহা রায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কেন্দুয়ার স্বনামধন্য শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফুলকলি বিদ্যা নিকেতন পরিচালনা করেন । দৈনন্দিন কাজ শেষে যতটুকু অবসর সময় পান ততটুকু সময়েই সঙ্গীত সাধনার চেষ্ঠা করেন।
কেন্দুয়ার তখনকার সময়ে একমাত্র কিন্ডারগার্টেন স্বনামধন্য আদর্শ শিশু বিতানে ১৯৯২ সালে তাঁর কর্মজীবনে প্রথমে শিক্ষকতা শুরু করেন । ইংরেজী শিক্ষক হিসেবে যৌবনের পুরোটা সময় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্ঠার মাধ্যমে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরীতে নিজের অবদান নিয়ে তিনি অনেক সন্তুষ্ট । তাঁর অনেক শিক্ষার্থী আজ কেন্দুয়া তথা দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে ।
সুসেন চন্দ্র সাহা রায় ভাবাবেগের চেয়ে নীতিবোধটাকে বেশী প্রাধান্য দেন । সঙ্গীত জীবনে তিনি বর্তমানে কেন্দুয়া ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠির প্রশিক্ষক । তিনি শিল্পকলা একাডেমীর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে অনুষ্ঠান পরিচালনাসহ জাতীয়,আঞ্চলিক,স্থানীয় পর্যায়ে তাঁর ব্যাবস্থাপনায় সর্বোচ্চ আন্তরিকতার মাধ্যমে একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে নিজেক বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছেন । এছাড়াও সুসেন চন্দ্র সাহা রায় কেন্দুয়া ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে কেন্দুয়া হরিসভা দূর্গা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ শিল্পীর পরিচালনায় ইতোমধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলা একাডেমী, ঢাকা ছায়ানট সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কেন্দুয়ার লোকজ ঐতিহ্য ঘাটুগানসহ বাংলাদেশ বেতারে প্রায় দুইমাস পর পর নেত্রকোনার শ্রেষ্ঠ গীতিকার গণের গান পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছেন ।
দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে এ শিল্পীর সঙ্গীত কর্মকান্ডের খবর প্রকাশিত হয়েছে । গত বছর মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের স্বাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুষ্ঠান রাঙ্গা সকালে-কেন্দুয়া তথা নেত্রকোনার লোক ঐতিহ্য প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পাশপাশি ৮ টি গান পরিবেশন করেছিলেন । এ অনুষ্ঠানটি মাছরাঙ্গা টেলিভিশনে বেশ কয়েকবার পুণঃপ্রচার হয়েছে ।
জ্ঞানে গুণে অতুলনীয় শিক্ষক ও কন্ঠ শিল্পী সুসেন চন্দ্র সাহা রায় তাঁর সঙ্গীত জীবন প্রসঙ্গে বলেন-আজীবন একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসাবে;বর্তমান প্রজন্মকে শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে-সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলস পরিশ্রম এবং চেষ্ঠা করে যেতে চাই ।
এ সময় তিনি তাঁর দুই কন্যা সহ স্ত্রী,পিতা-মাতা নিয়ে সুস্থ সুন্দর মানসিকতা নিয়ে বাকী জীবন অতিবাহিত করতে সকলের দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করেন।