
কেন্দুয়ার কন্ঠ শিল্পী আবুল বাসার তালুকদারের জীবন কথা
বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার, সুরকার ও কন্ঠ শিল্পী আবুল বাশার তালুকদার। তিনি ১৯৭২ সনের ১১ ডিসেম্বর কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়নের ইটাউতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম বাউল সাধক শিল্পী, গীতিকবি ও সুরকার আবদুল মজিদ তালুকদার । মা বেগম আয়সা মজিদ তালুকদার। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে আবুল বাশার তালুকদার সর্বকনিষ্ঠ।
কৈশোরেই তিনি তার বাবা ওস্তাদ আব্দুল মজিদ তালুকদারের কাছে বাউল তথ্য জ্ঞান তালিম শুরু করেন। রামপুর আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৮ সালে এসএসসি পাশ করেন। অতঃপর ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তালিম নেন ও পাশাপাশি বিভিন্ন বাউল শিল্পীদের সংগে পালাগান শুরু করেন । তিনি তার বাবার হাতে গড়া আব্দুল মজিদ তালুকদার শিল্পী গোষ্ঠী পরিচালনা করেন এবং উক্ত শিল্পী গোষ্ঠী নিয়ে ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকা ভূক্ত হয়ে নিয়মিত অনূষ্ঠান করে আসছেন।
তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ বেতারে ও ২০০৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে একক শিল্পী হিসেবে তালিকা ভুক্ত হন। ১৯৯৬ সাল থেকে নেত্রকোনা জেলা তথ্য অফিসে জনসচেতনতার লক্ষ্যে নিয়মিত ভাবে গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও কণ্ঠশিল্পী হিসাবে কাজ করে আসছেন। ২০০৮ সাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীক মাত্রা , পায়কঠ বাংলাদেশ কর্তৃক জনসচেতনতা মূলক গান , পথ নাটক লেখা ও পরিবেশন করে আসছেন । তাছাড়া ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ডভিশন, বিশ্ব ব্যাংক , সেফ দা চিলড্রেন এর সহযোগিতায় বিভিন্ন এনজিও ও সরকারী সংস্থার জনসচেতনতা মুলক গান, নাটক লিখে পরিবেশন করে আসছেন।
তিনি ইতিমধ্যে এক হাজারের অধিক গান রচনা করেছেন। ১২ টি পথনাটক লিখেছেন ও দুইটি যাত্রা পালা নাটক লিখেছেন। তিনি সব সময় দেশের মাটি ও মানুষের জীবন যাত্রার উপর গান, নাটক লিখে পরিবেশন করতে চান। বিভিন্ন লোকসংস্কৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা, তার বাবা সহ প্রয়াত জীবিত বাউল সাধক দের নিয়ে কাজ করা এবং সারা জীবন সংগীতে অঙ্গনে মিশে থাকাই তার ব্রত।
নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও ঢাকার বিভিন্ন প্রোগ্রামে এমনকি সারাদেশ সহএবং রেডিও-টেলিভিশনে তিনি নিয়মিত গান করে থাকেন। তিনি ভারতে একাধিক বার গানের প্রোগ্রাম করেছেন। উনি "মরমী কবি আব্দুল মজিদ তালুকদার স্মৃতি সংসদ " এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একমাত্র এই সংগঠন টি দীর্ঘদিন যাবত কবির জন্ম, মৃত্যু বার্ষিকী পালন করে আসছে।
ইতোমধ্যে প্রয়াত আব্দুল মজিদ তালুকদারের গান সমুহ বাঁচিয়ে রাখতে পান্ডুলিপি অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফার সংগ্রহ ও সম্পাদনায় মজিদ গীতি সমগ্র নামে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এই বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে নিজে সাধারন সম্পাদক হিসবে কাজ করছেন। কেবল আশা নয় তার আ দৃঢ় বিশ্বাস মজিদ গীতি সমগ্র জাতীয় পর্যায়ে কবির কর্ম ও জীবন নতুনভাবে বিকাশে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
মূলত আবুল বাশার তালুকদার দশ বছর বয়স থেকে সংগীত সাধনা শুরু করেন। প্রথমে দলপা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরে রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক রামপুর আনোয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়ন অবস্থায় জেলা শিল্পকলাএকাডেমিতে পাঁচ বছর সংগীতে তালিম নেন। এরই মধ্যে বাবার সংগে বাংলা দেশ বেতার ও টেলিভিশনে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান করে প্রশংসিত হওয়া সহ পাশা পাশি গ্রামের বিভিন্ন যাত্রা দলে অভিনয় করে সুনাম অর্জন করেন।
তার মধ্যে কাজল রেখা,বেহূল৷ লক্ষিহধর,নিহত গৌলাপ ,দাসীর পুত্র ইত্যাদি অভিনয় করে ,সর্ব শেষ যাত্রা রাজাকারের ফাঁসিতে পুঙ্গু মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন ৷ষোল বছর বয়সেই আবুল বাশার তালুকদারের বাবা মারা যান। এক সময় তিনি বিভিন্ন বাউল শিল্পীদের সংগে পালাগান শুরু করেন । বাবারহাতে গড়া আব্দুল মজিদ তালুকদার শিল্পী গোষ্ঠী পরিচালনা করেন এবং উক্ত শিল্পী গোষ্ঠী নিয়ে ১৯৮৯ সনে বাংলাদেশ টেলিভিশনে তালিকা ভূক্ত হয়ে নিয়মিত অনূষ্ঠান করতে থাকেন ।
১৯৯৫ সনে একক ভাবে বাংলা দেশবেতারে তালিকা ভৃক্তি হন । ১৯৯৬ সনে রামপুরবাজার সংলগ্ন ঢাকাইয়া ফিসারিতে আগমন ঘটেছিল বরেন্য কবি সাহিত্যিক প্রয়াগ ডঃ' হুমায়ূন আহমেদের । হুমায়ুন আহমেদের সামনে বসে সারারাত গান করেছিলেন আবুল বাশার। একদিন হুমায়ুন আহমেদ সাহেব গাড়ীসহ ড্রাইভার পাঠিয়েছিলেন তাকে নেওয়ার জন্য ভাগ্যের পরিহাসে সেদিন আবুল বাশার বাড়িতে ছিলেন না ফলে আর যাওয়া হল না।
১৯৯৭ সনে সনে ভারতে লোক উৎসবে বানিপুর ও কলকাতায় গান করেছেন এবং তিনি একিই বছর কলকাতা আব্বাস উদ্দিন স্বরন সভায় ৮টি দেশের শিল্পীদের সংগে গান করেন। শিল্পী আবুল বাশার তালুকদার জানান, আমাদের নিজেস্ব লোকসংস্কৃতি সংগ্রহ করে ৫/৭ টি নাটক লিখে লোকসংস্কৃতি সংগ্রহ করে বাংলা দেশ টেলিভিশনে রেকর্ড করেছে যা প্রতি মাসে একবার প্রচার করে থাকে।বাংলা দেশ শিল্পকলাএকাডেমিতে নাটকে অভিনয় কবেছি।বেশ কটি বেসরকারি টিভিতে মাঝে মাঝে কাজ করি। আর টিভি একুশে টিভি মাছরাঙা ,নিউজ ২৪ এন টিভি সহ অনেক টিভিতে গান করেন।
আবুল বাসার তালুকদার বাউল সাধক রশিদ উদ্দিন পদক, বাংলাদেশ বাউল তরী পদক লাভ করেন। তিনি একটি বেসরকারি সংগীত বিদ্যালয়ে ১৮ বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি শাস্রীয় সংগীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অধীনে দুই মাসের প্রশিক্ষন কোর্স করেন রাজবাড়ীতে এবং যাত্রা নাটকে ৮ দিনে এবং পথ নাটকে প্রশিক্ষন করেছেন। বত্তমানে আবদুল মজিদ তালুকদার সংগীত বিদ্যালয়,আব্দুল মজিদ তালুকদার শিল্পী গোষ্ঠী ও সাধক আব্দুল মজিদ তালুকদার স্মৃতি পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছেন।
তিনি বাংলা একাডেমির লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক হিসাবে কাজ করছেন নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলার অধীনে।
তিনি বলেন, আমি সবসময় দেশের মাটিও মানুষের জীবন যাত্রার উপর গান নাটক লিখে পরিবেশন করতে চাই।আমার নিজ লেখা ৭/৮ শত গান ১০/১১ টি পথনাটক ও দুটি যাত্রা পালা পান্ডুলীপি আকারে রয়েছে।বিভিন্ন লোকসংস্কৃতি সংগ্রহ সংরক্ষণ করা এবং আমার বাবা ও বাউল সাধক এবং লোকসংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা এবং সারা জীবন সংগীতে মাধ্যমে মিশে থাকা।
আবুল বাশার তালুকদার জানান, অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করে থাকেন আব্দুল মজিদ তালুকদার কে? যার গান আপনি সবসময় গেয়ে যাচ্ছেন। আমার এই লেখাটি দয়া করে অবশ্যই কষ্ট করে পড়ার অনুরোধ রইল।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অলইন্ডিয়া রেডিওর পল্লীগীতির প্রথম শিল্পী কে?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
সর্বভারতীয় কৃষক সম্মেলন কে বেশি গান গেয়ে পরিচিতি লাভ করেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
মাওলানা ভাষানির কাগমারি মহা সম্মেলনে তালিকা ভুক্ত শিল্পী হিসাবে কে গান গেয়েছিন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
ভাষা আন্দোলনে বাংলা ভাষা'র দাবিতে কে গান লিখে গান গেয়ে ছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
২য় বিশ্ব যুদ্ধে বিজয় উৎসবে গান গেয়ে কে গোল্ড মেডেল পেয়ে ছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান বেতার টেলিভিশনে কে গান করছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
বাংলা একাডেমির সদস্য ও সংগ্রাহক বা ১ম ২য় অধীবোশনে কে গান করে ছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কে গান করেছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
খালেক দেওয়ান মালেক দেওয়ান হালিম বয়াতি খোদা বক্স হাজেরা বিবি বাউল সহ বড় বড় বাউলদের সঙ্গে কে
গান করে ছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
৬দফা ১১ দফার দাবিতে কে গান বানিয়ে গেয়ে গেয়েছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
গ্রামোফোন কোম্পানিতে কে গান গেয়েছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের উপর গান বানিয়ে কে গেয়ে ছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
মুক্তি যোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের গান শুনিয়ে কে উৎসাহিত করতেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
বাংলাদেশ বেতার টেলিভিশনের জন্ম লগ্ন থেকে গীতিকার সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী কে ছিলেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
বাউল গান সহ সবধরনের গান কে লিখে গাইতেন?
উত্তরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কে গান করে গেয়ে গেছেন?
উওরঃ আবদুল মজিদ তালুকদার।
তথ্য সহ সবগুলি প্রমান আছে।
বলুন কোন সরকার এই মহান সাধককে সম্মান দিয়েছেন?
উত্তরঃ কোন সরকারই না।
আজ বিচারে গেলে আবদুল মজিদ তালুকদার সবার উপররে তার প্রকাশিত ৭টি বই এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মাঝে সবার উপরে মজিদ তালুকদারের গান এখনো প্রকাশিত আছে এবং মজিদ তালুকদারের নিজ কন্ঠে গান রযেছে এবং থাকবে পৃথিবী যতদিন আছে। সম্মানি লোক সম্মান পায়না এর নামই দেশ। তথ্য সংগ্রহিত মজিদ গীতি সমগ্র বই থেকে। এই আবদুল মজিদ তালুকদার
(বিঃদ্রঃ) সংক্ষিপ্ত পরিসরে লেখার কারণে শিল্পী আবুল বাশার তালুকদারের আরও কিছু সংগীত কর্ম লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয়নি, এজন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।