
পূর্বধলা হানাদার মুক্ত দিবস আজ
আজ ৯ ডিসেম্বর। পূর্বধলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলা শত্রু মুক্ত হয়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতার যৌথ প্রতিরোধের মূখে পাকহানাদার বাহিনী ৮ ডিসেম্বর পূর্বধলা থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে ৮ ডিসেম্বর একদল পাকিস্তানি সৈন্যের ব্রাশফায়ারে শ্যামগঞ্জে নির্মমভাবে শহীদ হন তৎকালীন ইপিআর হাবিলদার সুধীর বড়ুয়া। সুধীর বড়ুয়া তার দলবল নিয়ে শ্যামগঞ্জ ডাকবাংলায় রাত কাটানোর জন্য চলে আসতে থাকেন এবং সন্ধ্যায় শ্যামগঞ্জ বাজারের পূর্বপাশে অবস্থানকারী এবং রেকি করে এগিয়ে আসা পাকসেনাদের সঙ্গে শ্যামগঞ্জ পশ্চিম বাজারের পল্লী হাসপাতালের মুখোমুখি হয়ে পড়েন।
এসময় পাকসেনাদের সঙ্গে থাকা কয়েকজন রাজাকার জয় বাংলা স্লোগান দিলে তাদেরকে বন্ধু মনে করে সুধীর বড়ুয়াও জয় বাংলা স্লোগান দেন। পরে পাকসেনাদের মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে সূধীর বড়ুয়ার দেহটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তার দু’জন সাথীও গুরুতর আহত হন।তার এই বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর বীরবিক্রম উপাধিতে ভূষিত করেন।
পরদিন ৯ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় বাহিনীর মেজর প্রিথ সিং, ক্যাপ্টেন মূরারী, ক্যাপ্টেন বালজিত সিং, ক্যাপ্টেন চোপড়াসহ ভারতীয় সেনা সদস্যদের উপস্থিতিতে শ্যামগঞ্জ রেলওয়ে মাঠের উত্তর পাশেসামরিক কায়দায় শহীদ সূধীর বড়ুয়াকে সমাহিত করা হয়। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় তার স্মৃতিতে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে রক্ষণা-বেক্ষণের অভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুধীর বড়ুয়ার সমাধির চারপাশে গড়ে উঠেছে দোকান পাট এবং ময়লা আবর্জনার স্তুপ।
৯ ডিসেম্বর সকালে আবারো হানাদার বাহিনী জারিয়া-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেনযোগে গৌরীপুর থেকে পূর্বধলা প্রবেশ করতে চাইলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিপাগল জনতার তীব্র আক্রমন ও প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এসময় পিছুহটা পাকসেনারা পূর্বধলা উপজেলার পাবই রেল সেতুটি মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস করে যায়।পূর্বধলার ওই যুদ্ধই একাত্তরের রণাঙ্গনে নেত্রকোনা জেলার শেষ যুদ্ধ।
প্রতি বছরের ন্যায় দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বিজয় র্যালী, পতাকা উত্তোলন, পুষ্পস্তর্বক অপর্ণ ও আলোচন সভা, দোয়াসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।