শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

সাহিত্যের পুষ্পোদ্যানে নেত্রকোণা

লোক ঐতিহ্যের আগলাঘর

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ১৮ আগস্ট ২০২৩

লোক ঐতিহ্যের আগলাঘর

লোক ঐতিহ্যের আগলাঘর

'আগলাঘর' শব্দটি নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ। 'আগলা' মানে আলাদা বা পৃথক। এর আরও কিছু প্রতি শব্দ রয়েছে। যেমন- বাইরাগেরঘর,আলগাঘর,বাইড্ডাগেরঘর,বৈঠকঘর,মেমানঘর। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে আরও কিছু ঘরের নাম পাওয়া যায়। যেমন-গোছলাঘর, গোয়ালঘর, চেলাঘর, আলংঘর, আতুঁরঘর, বড়ঘর, বসতঘর, বসারঘর, বাসরঘর, রশিঘর, বাসাঘর, পাকঘর, রান্নাঘর, খড়িঘর, নামাঘর, বনেরঘর, ছনেরঘর, কুঁড়েরঘর, টিনেরঘর ইত্যাদি নামে অবহিত করা হতো।

গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই গ্রামে বসবাস করেন।সে জন্য তাদের প্রয়োজনে ইত্যাদি ঘর নির্মাণ করে দৈনন্দিন যাবতীয় কার্য সমাধান করা হতো ইত্যাদি ঘরগুলোতে।

পাহাড়, সমতল ও হাওরজনপদ বেষ্টিত নেত্রকোণা অঞ্চলের মানুষ জন্মগত ভাবেই লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির আধিক্যে আদৃষ্ট। সুফি সাধক থেকে শুরু করে ফকির,দরবেশ, ওলামা মাশায়েক, সাধু-সন্যাসিসহ সকল পর্যায়ের মানুষ দীর্ঘ সম্প্রীতির বন্ধনে এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে রেখেছেন। বহু কীর্তিমানের জন্ম হয়েছে এ জেলায়।

এখানকার লেখক,সাহিত্যিক, কবি ও শিল্পীমানুষের সুফিবাদে বিশ্বাসী বলে তারা ত্যাগের মহিমায় জীবনভর এ চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলষভাবে। তাই তাঁরা জারি-সারি,বাউল-ভাটিয়ালী, কবি-উড়ি,গাজিরগীত,কিসসাপালা,যাত্রাপালা,মাইট্রাদল বা তামসাগান, চৈতাল, ঘাডুগান, পালাগান, বারোমাসি, পুঁথিপাঠ, পথকবিতা বা হাটকবিতা,গাইনেরগীত,হিরালী, নাচাড়ি, বিয়ারগীত, লম্বাগীত, সংকীর্তন, বৈঠকী কির্তন,রামায়ণ,ধামাইল প্রবৃত্তি লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারাকে হৃদয়ে ধারণ করে স্বভাবজাত চেতনায় সংস্কৃতিমনস্ক বা সংস্কৃতিমনা খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

তাঁরা উপরোল্লেখিত 'ঘর' সমূহের সাথে বিশেষ ভাবে পরিচিত ও নিভৃষ্ট। এখানের মানুষ তাঁদের শৈশবের স্বর্ণময় সময় পার করেছেন নদীর উপর বা পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে -অবাধে সাঁতার কেটে, গলাছেড়ে গান গেয়ে,গাছে গাছে চড়ে,দলবেঁধে বিলে মাছ ধরে,গানবাজান আর খেলা-ধুলা করে।তাঁরা হোমালি-কুস্তি, কখনো দাইড়াবান্দা, বৌছি, হাডুডু, গোল্লাছুট, কানামাছি, দাড়াগুডি বা ডাংগুলি, মার্বেল, লাঠিখেলা, লাঠিম, চরকি, ঘুড়ি উড়ানো, এক্কা-দুক্কা,ছেনি বাইড়ানি, নাইরকলভাঙ্গা, তাসখেলা, লুডুখেলা, বাঘবেড়, ষোলকইট্যা ইত্যাদি খেলা-ধুলার পাশাপাশি পাড়াবেড়ানিসহ নানা আনন্দ-উল্লাসে সময় কাটিয়েছেন।  যে ঘর নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছিল, সেই ঘরগুলো ছিল গ্রামের ঐতিহ্য। সেই সব ঘরগুলো আজ গ্রাম থেকে অনেকাংশে উঠে গেছে বলা যায়। বিশেষ করে 'আগলা ঘর'।

আমরা যেটিকে বড়ঘর বলি অর্থাৎ বসতঘর, এই বসতঘরে এক সময় পাওয়া যেতো 'দরম'। দরমকে খুব আকর্ষনীয় এবং সৌন্দর্যবর্ধন করার জন্য নানা রঙের কারুকার্যের মাধ্যমে তৈরি করা হতো। বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি দরমটিতে গাছ, মাছ, বাঘ, হরিণ, ঘোড়াসহ বিভিন্ন লতা-পাতার ছবি আঁকা হতো। দরম তৈরির কারিগরকে বলা হয় 'ছাপরবন'। উন্নতমানের রুচিশীল একটি দরম (আকার ভেদে) তৎসময় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকাও ব্যায় হয়েছে।অথচ মোটামুটি মানের একটি ঘরই তখন দশ/বারো হাজার টাকায় হয়ে যেতো সে সময়। কারো কারো সেই সমস্ত ঘরে পাওয়া যেতো ধানের মাচা,গোলা,কাঠের সিন্ধুক।

এছাড়া থাকতো বাঁশের 'আর' আরের মাঝে বাঁধা হতো শিকা।শিকা পাটের রশিদ্বারা তৈরি করা হতো। গ্রামে এটিকে 'ছিক্কা' বলে থাকেন। ঘরের বৌ-ঝিরা এই ছিক্কার মাঝে ঝুলিয়ে রাখতেন-হাড়ি-পাতিল,বোতল, ঠুলি,মাহা,ডহি,ভেট্টুয়্যা ইত্যাদি। এগুলোর মাঝে রাখা হতো খাদ্যসামগ্রী। তখনকার দিনে এগুলোই ছিল ফ্রিজ।  গৃহস্তবাড়ির সামনের প্রবেশ পথে দেওয়া হতো দেউড়ি। বাড়ির লোক ব্যতিত যে কেউ প্রবেশ করতে হলে দেউড়ির বাইরে থেকে হাঁক দিতে হতো।

ভিখারী ভিক্ষার জন্য এলে দেউড়ির বাইরে থেকে গজল গেয়ে অথবা 'ভিখ চাই গো মা'বলে হাঁক ছেড়ে বলতেন; তখন বাড়ির ভেতর থেকে গৃহকর্তি কিশোর বাচ্চাদের দিয়ে চাউল ভিক্ষা পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু এখন আর গ্রামাঞ্চলে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। বাহির গ্রামের কেউ অসুবিধায় পড়ে রাত্রি যাপন করতে হলে 'পরবাস' থাকার আকুতি জনাতেন।কর্তার ইচ্ছা হলে রাতে ওই আগলা ঘরে পরবাস থেকেছেন সেই আগন্তুক। তাকে রাতে যত্ন করে খেতেও দিয়েছেন বাড়ির মালিক।

গ্রামের মানুষ একে অপরের আত্নীয় পরিজন হয়ে বসবাস করেন। সে সময় গ্রামের মুরব্বিরা বলতেন - "রাস্তার দূরে বাড়ি কর,নিরাপদে থাকবে ঘর"। যে কারণে রাস্তা থেকে দূরে মানুষ বাড়ি ঘর করেছেন।এখন তার উল্টো।বাড়ির সাথে রাস্তা না থাকলে বাড়ির কোন দামই নেই।চলাচলের সুবিধার্থে এখন বাড়ি করার আগে চিন্তা করতে হয় রাস্তার। 

গ্রামের মানুষ মনে করতেন - গ্রামটি একটি পরিবার। গ্রামের সকলে মিলে ধর্মীয়,সামাজিক,কৃষিসহ সকল ক্রিয়া-কার্যাদি পালন করতেন একটি চেইন অব কমান্ডের মাধ্যমে। সেজন্য গ্রামের মানুষ প্রবাদবাক্য করে বলতেন " গাঁয়ের জ্বালা আর মায়ের জ্বাল"। অর্থাৎ গ্রামই আমার মা।

আরও পড়ুন: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে টঙ্গীবাড়ীতে দোয়া অনুষ্ঠিত 

ব্রেকিং নিউজ:

দুর্গাপুরে দুর্বৃত্তদের কোপে উপ পুলিশ পরিদর্শক খুন
শেখ মুজিব ও জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মেজর ডালিমের বক্তব্য
অবশেষে প্রকাশ্যে এলেন মেজর ডালিম!
মোহনগঞ্জে ৩৯ হাজার টাকায় ২৭ কেজির বাঘাইড় মাছ বিক্রি
জিয়াউর রহমানের নাম নিলে বেহেশত নিশ্চিত: বিএনপি নেতা কামরুল হুদা
দুর্গাপুরে সাতদিন ব্যাপী কমরেড মণি সিংহ মেলা শুরু
গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন, র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ
মুন্নী সাহার অ্যাকাউন্টে বেতনের বাইরে ১৩৪ কোটি
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বারের ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
সাংবাদিক মুন্নী সাহা গ্রেফতার
ময়মনসিংহে ৭২ ঘণ্টায় আকাশ হত্যা রহস্য উন্মোচন, দুইজন গ্রেফতার
সিলেটে ৩৭,৫৫০ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার
এক্সনহোস্ট ব্ল্যাক ফ্রাইডে সেলে হোস্টিংয়ে ৬০% ছাড়!
বিচারের পরই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে: ড. ইউনূস
র‍্যাবের অভিযানে সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী গ্রেফতার
র‌্যাবের হাতে কোম্পানীগঞ্জের যুবলীগ নেতা ইকবাল গ্রেফতার
ঝিনাইদহের সাবেক এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী গ্রেফতার
সিলেটে র‌্যাবের হাতে ভয়ংকর সন্ত্রাসী শুটার আনসার ও সহযোগী নাঈম গ্রেপ্তার
সাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর ব্যক্তিগত পিএসসহ গ্রেফতার-২
জুয়া খেলার টাকা দিতে না পারায় জুয়ারীকে মারপিট: আত্মহত্যা নিয়ে প্রশ্ন
জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি সোহেলসহ গ্রেফতার-১৫
কানাইঘাটের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফজল র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার
সিলেটে পংকজ কুমার হত্যা: স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গ্রেফতার
নেত্রকোণায় চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপি নেতা আটক
হবিগঞ্জে ৬৬ কেজি গাঁজাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামী আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
ছাত্র হত্যা মামলায় ব্যারিস্টার সুমন গ্রেপ্তার
সুনামগঞ্জে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিস্ফোরক উদ্ধার
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা আফতাব আলী গ্রেফতার
হবিগঞ্জে আলোচিত হত্যা মামলার প্রধান আসামী গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অস্ত্রসহ যুবলীগ নেতা গ্রেফতার
কেন্দুয়ায় ১০ বছর ধরে বাড়িছাড়া পাঁচ পরিবার
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা তৌফিক বক্স গ্রেফতার

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 859