শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

সাহিত্যের পুষ্পোদ্যানে নেত্রকোণা

লোক ঐতিহ্যের আগলাঘর

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ১৮ আগস্ট ২০২৩

লোক ঐতিহ্যের আগলাঘর

লোক ঐতিহ্যের আগলাঘর

'আগলাঘর' শব্দটি নেত্রকোণার আঞ্চলিক শব্দ। 'আগলা' মানে আলাদা বা পৃথক। এর আরও কিছু প্রতি শব্দ রয়েছে। যেমন- বাইরাগেরঘর,আলগাঘর,বাইড্ডাগেরঘর,বৈঠকঘর,মেমানঘর। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে আরও কিছু ঘরের নাম পাওয়া যায়। যেমন-গোছলাঘর, গোয়ালঘর, চেলাঘর, আলংঘর, আতুঁরঘর, বড়ঘর, বসতঘর, বসারঘর, বাসরঘর, রশিঘর, বাসাঘর, পাকঘর, রান্নাঘর, খড়িঘর, নামাঘর, বনেরঘর, ছনেরঘর, কুঁড়েরঘর, টিনেরঘর ইত্যাদি নামে অবহিত করা হতো।

গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই গ্রামে বসবাস করেন।সে জন্য তাদের প্রয়োজনে ইত্যাদি ঘর নির্মাণ করে দৈনন্দিন যাবতীয় কার্য সমাধান করা হতো ইত্যাদি ঘরগুলোতে।

পাহাড়, সমতল ও হাওরজনপদ বেষ্টিত নেত্রকোণা অঞ্চলের মানুষ জন্মগত ভাবেই লোকসাহিত্য ও লোকসংস্কৃতির আধিক্যে আদৃষ্ট। সুফি সাধক থেকে শুরু করে ফকির,দরবেশ, ওলামা মাশায়েক, সাধু-সন্যাসিসহ সকল পর্যায়ের মানুষ দীর্ঘ সম্প্রীতির বন্ধনে এই অঞ্চলকে সমৃদ্ধ করে রেখেছেন। বহু কীর্তিমানের জন্ম হয়েছে এ জেলায়।

এখানকার লেখক,সাহিত্যিক, কবি ও শিল্পীমানুষের সুফিবাদে বিশ্বাসী বলে তারা ত্যাগের মহিমায় জীবনভর এ চর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলষভাবে। তাই তাঁরা জারি-সারি,বাউল-ভাটিয়ালী, কবি-উড়ি,গাজিরগীত,কিসসাপালা,যাত্রাপালা,মাইট্রাদল বা তামসাগান, চৈতাল, ঘাডুগান, পালাগান, বারোমাসি, পুঁথিপাঠ, পথকবিতা বা হাটকবিতা,গাইনেরগীত,হিরালী, নাচাড়ি, বিয়ারগীত, লম্বাগীত, সংকীর্তন, বৈঠকী কির্তন,রামায়ণ,ধামাইল প্রবৃত্তি লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারাকে হৃদয়ে ধারণ করে স্বভাবজাত চেতনায় সংস্কৃতিমনস্ক বা সংস্কৃতিমনা খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

তাঁরা উপরোল্লেখিত 'ঘর' সমূহের সাথে বিশেষ ভাবে পরিচিত ও নিভৃষ্ট। এখানের মানুষ তাঁদের শৈশবের স্বর্ণময় সময় পার করেছেন নদীর উপর বা পুকুরের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে -অবাধে সাঁতার কেটে, গলাছেড়ে গান গেয়ে,গাছে গাছে চড়ে,দলবেঁধে বিলে মাছ ধরে,গানবাজান আর খেলা-ধুলা করে।তাঁরা হোমালি-কুস্তি, কখনো দাইড়াবান্দা, বৌছি, হাডুডু, গোল্লাছুট, কানামাছি, দাড়াগুডি বা ডাংগুলি, মার্বেল, লাঠিখেলা, লাঠিম, চরকি, ঘুড়ি উড়ানো, এক্কা-দুক্কা,ছেনি বাইড়ানি, নাইরকলভাঙ্গা, তাসখেলা, লুডুখেলা, বাঘবেড়, ষোলকইট্যা ইত্যাদি খেলা-ধুলার পাশাপাশি পাড়াবেড়ানিসহ নানা আনন্দ-উল্লাসে সময় কাটিয়েছেন।  যে ঘর নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছিল, সেই ঘরগুলো ছিল গ্রামের ঐতিহ্য। সেই সব ঘরগুলো আজ গ্রাম থেকে অনেকাংশে উঠে গেছে বলা যায়। বিশেষ করে 'আগলা ঘর'।

আমরা যেটিকে বড়ঘর বলি অর্থাৎ বসতঘর, এই বসতঘরে এক সময় পাওয়া যেতো 'দরম'। দরমকে খুব আকর্ষনীয় এবং সৌন্দর্যবর্ধন করার জন্য নানা রঙের কারুকার্যের মাধ্যমে তৈরি করা হতো। বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি দরমটিতে গাছ, মাছ, বাঘ, হরিণ, ঘোড়াসহ বিভিন্ন লতা-পাতার ছবি আঁকা হতো। দরম তৈরির কারিগরকে বলা হয় 'ছাপরবন'। উন্নতমানের রুচিশীল একটি দরম (আকার ভেদে) তৎসময় দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকাও ব্যায় হয়েছে।অথচ মোটামুটি মানের একটি ঘরই তখন দশ/বারো হাজার টাকায় হয়ে যেতো সে সময়। কারো কারো সেই সমস্ত ঘরে পাওয়া যেতো ধানের মাচা,গোলা,কাঠের সিন্ধুক।

এছাড়া থাকতো বাঁশের 'আর' আরের মাঝে বাঁধা হতো শিকা।শিকা পাটের রশিদ্বারা তৈরি করা হতো। গ্রামে এটিকে 'ছিক্কা' বলে থাকেন। ঘরের বৌ-ঝিরা এই ছিক্কার মাঝে ঝুলিয়ে রাখতেন-হাড়ি-পাতিল,বোতল, ঠুলি,মাহা,ডহি,ভেট্টুয়্যা ইত্যাদি। এগুলোর মাঝে রাখা হতো খাদ্যসামগ্রী। তখনকার দিনে এগুলোই ছিল ফ্রিজ।  গৃহস্তবাড়ির সামনের প্রবেশ পথে দেওয়া হতো দেউড়ি। বাড়ির লোক ব্যতিত যে কেউ প্রবেশ করতে হলে দেউড়ির বাইরে থেকে হাঁক দিতে হতো।

ভিখারী ভিক্ষার জন্য এলে দেউড়ির বাইরে থেকে গজল গেয়ে অথবা 'ভিখ চাই গো মা'বলে হাঁক ছেড়ে বলতেন; তখন বাড়ির ভেতর থেকে গৃহকর্তি কিশোর বাচ্চাদের দিয়ে চাউল ভিক্ষা পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু এখন আর গ্রামাঞ্চলে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। বাহির গ্রামের কেউ অসুবিধায় পড়ে রাত্রি যাপন করতে হলে 'পরবাস' থাকার আকুতি জনাতেন।কর্তার ইচ্ছা হলে রাতে ওই আগলা ঘরে পরবাস থেকেছেন সেই আগন্তুক। তাকে রাতে যত্ন করে খেতেও দিয়েছেন বাড়ির মালিক।

গ্রামের মানুষ একে অপরের আত্নীয় পরিজন হয়ে বসবাস করেন। সে সময় গ্রামের মুরব্বিরা বলতেন - "রাস্তার দূরে বাড়ি কর,নিরাপদে থাকবে ঘর"। যে কারণে রাস্তা থেকে দূরে মানুষ বাড়ি ঘর করেছেন।এখন তার উল্টো।বাড়ির সাথে রাস্তা না থাকলে বাড়ির কোন দামই নেই।চলাচলের সুবিধার্থে এখন বাড়ি করার আগে চিন্তা করতে হয় রাস্তার। 

গ্রামের মানুষ মনে করতেন - গ্রামটি একটি পরিবার। গ্রামের সকলে মিলে ধর্মীয়,সামাজিক,কৃষিসহ সকল ক্রিয়া-কার্যাদি পালন করতেন একটি চেইন অব কমান্ডের মাধ্যমে। সেজন্য গ্রামের মানুষ প্রবাদবাক্য করে বলতেন " গাঁয়ের জ্বালা আর মায়ের জ্বাল"। অর্থাৎ গ্রামই আমার মা।

আরও পড়ুন: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে টঙ্গীবাড়ীতে দোয়া অনুষ্ঠিত 

শীর্ষ সংবাদ:

ঈদ ও নববর্ষে পদ্মা সেতুতে ২১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা টোল আদায়
নতুন বছর অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে: প্রধানমন্ত্রী
কলমাকান্দায় মোটরসাইকেলের চাকা ফেটে তিনজনের মৃত্যু
র‌্যাব-১৪’র অভিযানে ১৪৫ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী আটক
সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করুন: প্রধানমন্ত্রী
ঈদের ছুটিতে পর্যটক বরণে প্রস্তুত প্রকৃতি কন্যা জাফলং ও নীল নদ লালাখাল
কেন্দুয়ায় তিন দিনব্যাপী ‘জালাল মেলা’ উদযাপনে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত
ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী চড়কসহ গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত
কেন্দুয়ায় আউশ ধানের বীজ বিতরণ ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত
কলমাকান্দায় দেশীয় অস্ত্রসহ পিতাপুত্র আটক
ঠাকুরগাঁওয়ে গ্রামগঞ্জে জ্বালানি চাহিদা পূরণ করছে গোবরের তৈরি করা লাকড়ি গৃহবধূরা
ফুলবাড়ীতে এসিল্যান্ডের সরকারি মোবাইল ফোন নম্বর ক্লোন চাঁদা দাবি: থানায় জিডি দায়ের
ফুলবাড়ীতে সবজির দাম উর্ধ্বমূখী রাতারাতি দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ ভোক্তা
ধর্মপাশায় সরকারি রাস্তার গাছ কেটে নিলো এক শিক্ষক
সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দেয়ায় রামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা বহিস্কার
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ীতে অনশন
মসিকে ১০ কোটি টাকার সড়ক ও ড্রেনের কাজ উদ্বোধন করলেন মেয়র
কলমাকান্দায় নদীর পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত শিল্প
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক যতীন সরকারের জন্মদিন উদযাপন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ যতীন সরকারের ৮৮তম জন্মদিন আজ
১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে এমএলএম mtfe বন্ধ
কলমাকান্দায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লো তিন মাদক কারবারি
আটপাড়ায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১০৩ জন কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা
নকলায় ফাঁসিতে ঝুলে নেশাগ্রস্থ কিশোরের আত্মহত্যা
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস
কলমাকান্দায় আগুনে পুড়ে ২১ দোকানঘর ছাই

Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 809