
র্যাবের নতুন রূপ: পরিবর্তন হচ্ছে নাম, লোগো ও পোশাক
দুই দশক আগে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশ্যে গঠিত বাংলাদেশের বিশেষায়িত বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের মুখে পড়ে। সমালোচকরা অনেক সময় র্যাবকে ‘সরকারি ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র র্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
গত ১৫ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে র্যাব বিতর্কিত হয়ে ওঠে। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে র্যাবের সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে। গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে র্যাব তাদের নাম, লোগো ও পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে এবং একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে র্যাব কোনো আলাদা আইন ছাড়া পুলিশ অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান জানিয়েছেন, বাহিনীর নাম, নিয়ম এবং পোশাক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। মানবাধিকারকর্মীরা অবশ্য বাহিনীর সংস্কারের পরিবর্তে বিলুপ্তির দাবি জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, "র্যাব বিলুপ্ত করা উচিত। এনকাউন্টার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রয়োজন নেই। পুলিশের অন্যান্য বিভাগই দেশের শান্তি রক্ষায় যথেষ্ট।"
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন জানান, র্যাবের কার্যক্রম মানুষের কল্পনারও বাইরে এবং গুমের তদন্তে গঠিত কমিশনে তিনি একজন সদস্য হিসেবে আছেন। কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে র্যাবের বিরুদ্ধে গুমের ১৭২টি অভিযোগ জমা পড়েছে এবং ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১,৬০০টি অভিযোগ কমিশনে জমা হয়েছে।
তদন্তে র্যাবের একটি সেলে আলো ও স্যানিটেশনবিহীন মাত্র সাড়ে ৩ ফুট বাই ৪ ফুট একটি কক্ষ পাওয়া যায়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০১৫ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত র্যাব ৪৬৭টি কথিত বন্দুকযুদ্ধে জড়িত ছিল।
২০০৪ সালের ২৬ মার্চ বিএনপি সরকারের আমলে পুলিশ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত র্যাব সেসময় প্রশংসা কুড়ালেও বর্তমানে সারা দেশে ১৫টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। নতুন খসড়া আইনে বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মানবাধিকার ও সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে বাহিনীর প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা, নিয়োগ, পদায়ন ও শৃঙ্খলার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২১ সালের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর র্যাব সদস্যদের মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে র্যাবের ৪ হাজার সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত র্যাব খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, প্রতারণা ও মানব পাচারের অভিযোগে বহু সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
আরও পড়ুন: ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে পৃথক দুর্ঘটনায় আহত ৯