
মৃত্যুদণ্ড থেকে বাবর খালাস, মোহনগঞ্জে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস!
বহুল আলোচিত ১০ট্রাক অস্ত্র মামলা থেকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর খালাস পাওয়ার খবরে মোহনগঞ্জের সর্বত্রই বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস চলছে।
বুধবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌরশহরসহ উপজেলার সবক'টি হাট-বাজার এমনকি পাড়া-মহল্লায় বিএনপির হাজার-হাজার নেতা-কর্মীরা ছাড়াও এ উপজেলায় বাবর ভক্ত অসংখ্য সাধারণ লোকজনও এ আনন্দে শরিক হয় বলে জানা গেছে।
এ ছাড়াও ওইদিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে শত-শত বিএনপির নেতা-কর্মীরা পৃথক-পৃথক মিছিল নিয়ে পৌরশহরে আসে। এসময় পৌর শহরের সর্বত্রই যেন মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে। মিছিল শেষে নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে শহীদ উসমান গণি ময়দানে মুক্তিযোদ্ধা মুক্ত মঞ্চে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে মিছিলে অংশ নেওয়া সকল নেতাকর্মীদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সেলিম কার্নায়েণ, পৌর বিএনপির আহবায়ক ফজলুল হক মাসুম, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো.টিপু সুলতান, পৌর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম রব্বানী পুতুল, জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মাহাবুবুনন্নবী শেখ, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আ ক ম শফিকুল হক, জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো.সিরাজ উদ্দিন তালুকদার, উপজেলা বিএনপির প্রবীন নেতা সৈয়দ আকিকুল হোসাইন, পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান অরফে ভিপি জাহাঙ্গীর, সাবেক সাধারন সম্পাদক মিহির গোস্বামী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সংগ্রাম, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আরিফুল ইসলাম টিটু, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি গোলাম এরশাদুর রহমান, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার, সদস্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন জীবন, পৌর যুবদলের আহ্বায়ক মো. জহিরুজ্জামান খান রনি, সদস্য সচিব ফয়সাল আহমেদ খোকন, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাঈনুল ইসলাম কানন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক শওকত হোসেন যুবরাজ, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জামিউল ইসলাম রাকিব, সদস্য সচিব জাকির হোসেন বাবু, পৌর ছাত্রদলের আহবায়ক নাজমুছ সাদী অপু, সদস্য সচিব কিরন খাঁ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সোহেল রানা, সদস্য সচিব আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মানিক, সদস্য সচিব নাজমুল হোসেন বাবু, উপজেলা কৃষকদলের আহবায়ক নজরুল ইসলাম ও পৌর কৃষকদলের আহ্বায়ক মো. মকবুল হোসেন খোকন, শ্রমিক দলের আহবায়ক আবুল কাসেম ছদ্দু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের খালাস ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ছয় আসামির সাজা কমিয়ে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় করা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। সেদিন লুৎফুজ্জামান বাবরসহ কয়েকজন আসামির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সিইউএফএল ঘাট থেকে আটক করা হয় ১০ ট্রাকভর্তি অস্ত্রের চালান। এ নিয়ে কর্ণফুলী থানায় অস্ত্র আইন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে চোরাচালানের অভিযোগ এনে দুটি মামলা হয়। মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। এর মধ্যে অস্ত্র চোরাচালান মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর), সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৪ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
অস্ত্র আইনে করা অন্য মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয় একই আসামিদের। বিচারিক আদালতের রায়ের পর ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রায়সহ মামলার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে, যা ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা সাজার রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন।
আরও পড়ুন: পার্সেন্টিস ছাড়া বিল পাশ করেন না হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা
হাফিজুর রহমান চয়ন