
নেত্রকোনায় গৃহবধু ঝর্ণা হত্যায় বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
নেত্রকোনায় চাঞ্চল্যকর গৃহবধু ঝর্ণা হত্যায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যদের সঠিক বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।
গৃহবধূ ঝর্ণা হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবিতে নেত্রকোনা সদর উপজেলার বাংলা বাজারে এলাকাবাসী (২৪ আগস্ট) বৃহস্পতিবার সকালে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে সর্বস্তরের মানুষ স্কুল শিক্ষার্থীসহ নিহতের সন্তান ও স্বামী অংশ নিয়ে ন্যায় বিচারের দাবি তুলে ধরেন। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে এলাকার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
উল্লেখ্য,নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের আগমারকেন্ডা গ্রামের খোয়াজ খাঁর সাথে তার চাচাত ভাই আলম খানের নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। গত ২৬ মার্চ খোয়াজ খাঁ পারিবারিক বিষয় নিয়ে তার মেয়ে তামান্নাকে মারধর করার সময় ফিরাতে গিয়ে স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার মারধরের শিকার হন। পরে ওই বিরোধকে কেন্দ্র করে ২৭ মার্চ রাতে দুপক্ষে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে খোয়াজ খাঁর লোকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে আলম খানের স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার, ছেলে তামিম, ভাই পাপন,ভাইয়ের ছেলে মাহাবুব ও সাকিবকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে প্রতিপক্ষের লোকজন রাত ১১টার দিকে ফের আহতদের ওপর হামলা চালিয়ে ঝর্নাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।
প্রথমে তাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঝর্ণা আক্তার মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই নেত্রকোনা সদর উপজেলার সিংহের বাংলা গ্রামের রুহুল আমিন বাদী হয়ে পূর্বধলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মৃত্যুর পর ঝর্ণার লাশ বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়। এরপর ফিরোজ খাঁকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। মামলার অন্যতম আসামি এএসআই ফিরোজ খাঁ পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ময়মনসিংহে কর্মরত ছিলেন। কর্মস্থল থেকে ছুটি ছাড়াই বাড়ি এসে তিনি বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। মানববন্ধনে বক্তারা মামলার চার্জশিট থেকে অন্যতম আসামী পুলিশ সদস্য ফিরোজ খাকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ করে বলেন,পুলিশের আন্তরিকতার অভাব, দ্রুত তদন্তকাজ শেষ না করা সহ নানা কারণে এই মামলায় ন্যায় বিচার না পাওয়ায় আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। মামলায় জামিনপ্রাপ্ত আসামীরা বাদী পক্ষকে অব্যাহত হুমকি দিলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিখিত নির্দেশনার পরও ঝর্ণা আক্তারের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। এমনকি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কোন খবরও নেয়া হয়নি।
মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে মায়ের হত্যাকারীদের নাম উল্লেখ করে তাদের ফাঁসির দাবি জানালো ঝর্ণা আক্তারের অবুঝ শিশুরাসহ এলাকাবাসী। মামলায় ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত নিশ্চিত করতে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
নিহতের পরিবারের দাবি, বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার চার্জশিট দিতে হবে। তাহলেই কেবল সকল অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। ন্যায় বিচারের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এসময় মানববন্ধনে উপস্থিত এলাকাবাসীর মধ্যে বক্তব্য রাখেন,নিহতের স্বামী আলম খাঁ, নিহতের ভাই নুরুল আমিন, বাংলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজা আক্তার, উজ্জ্বল নাগ,হাজী মোঃ আব্দুল জলিল,রানা সরকারসহ অন্যান্যরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন,ঐ মামলার আসামী যেই থাকুকনা কেন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।