
দুর্গাপুরে বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি ৪৫ হাজার মানুষ
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটির নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩০-৪০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গত কয়েকদিনের পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিদৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় প্লাবিত হয়েছে এসব এলাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণের ফলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেকের ঘরের ভেতরেও পানি ঢুকে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সোমেশ্বরী নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ রবিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টায় ৫০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। নদীটিতে গড়ে ঘণ্টায় সাড়ে তিন সেন্টিমিটার পানি বাড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমেশ্বরী ও পার্শ্ববর্তী নেতাই নদীর পানি প্রবেশ করে উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের বন্দউষান, আটলা, পূর্বনন্দেরছটি, হাতিমারাকান্দা, ভাদুয়া, নাওধারা, জাগিরপাড়া, দক্ষিন জাগিরপাড়া, মুন্সিপাড়া, গাঁওকান্দিয়া, শ্রীপুর, জাঙালিয়াকান্দা, শংকরপুর, তাঁতিরকোনা, বিশ্বনাথপুর, আদমপুর, কান্দাপাড়া, কালাগোনা অপরদিকে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিলকাঁকড়াকান্দা, দৌলতপুর, পলাশগড়া, বংশীপাড়া, গাইমারা, কাকৈরগড়া ইউনিয়নের, গোদারিয়া, বিলাশপুর, লক্ষীপুর, রামবাড়ি, দুর্গাশ্রম এবং চণ্ডিগড় ইউনিয়নের সাতাশি, চারিখাল, নীলাখালী, ফুলপুরসহ ৪০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে বাকলজোড়া ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। রোববার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তা, মাঠ-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। স্কুল, মাদ্রাসা, ঘর-বাড়ির চারপাশেই পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষ।
অপরদিকে এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট।
গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের মুহাম্মদ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের চলাচলের রাস্তায় কোমর পানি, যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে ভয় হচ্ছে ঘরে না উঠে যায়।’
চণ্ডিগড় ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ফকির বলেন, ‘আমাদের গ্রামে অনেক মানুষ পানিবন্দি, হাট-বাজারেও যেতে পারছেন না।’
বাকলজোড়া ইউপি সদস্য মো. আবু তাহের বলেন, ফসলী জমি ৮০ শতাংশ পানির নিচে এখন। এ ছাড়া চলাচলের প্রায় সব রাস্তায় পানির নিচে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে ঘরে পানি ডুকে যাবে মনে হচ্ছে।
গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) শহিদুল ইসলাম জানান, পানি বেড়েই চলছে। ইতোমধ্যে অনেকের ঘরের পানি উঠে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ পানিবন্দি। গতকাল কাকৈরগড়া ইউনিয়নের পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ত্রাণ বিতরণ অব্যহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে সব জায়গা থেকেই খবর আসছে। আমরা দুপুরে একটি জরুরি মিটিং ডেকেছি সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে জেলার নদ-নদীর পানি বেড়ে চলেছে। গতকাল বিকেল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা ছিল। রাতে উজানে বৃষ্টি হয়েছে যার কারণে সোমেশ্বরী ও কংস নদীতে পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: জৈন্তাপুরে ১৯ বিজিবি’র অভিযানে কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় পন্য আটক
কলি হাসান