
কালিয়াকৈরে ভুমিহীন-বনবিভাগের মধ্যে সংঘর্ষ, উভয় পক্ষে আহত-২০
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে দফায় দফায় টাকা দাবী ও চাহিদা মতো টাকা না দিলে স্থাপনা ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুমিহীন লোকজন ও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার কালামপুর খাজারডেক এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী, ভুমিহীন পরিবার ও বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার কালামপুর খাজারডেক এলাকায় বেশকিছু সংখ্যালঘু ভুমিহীন পরিবার বনবিভাগের জমিতে বসবাস করে আসছে। তাদের সংসারের খরচ যোগাতে চন্দ্রা-কালামপুর-সুরিচালা সড়কের খাজারডেক এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত বনের জমিতে অবৈধভাবে ২০-২৫টি দোকানঘর করে। ওই সময় স্থানীয় দালাল ও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোটা অংকের টাকা দিয়েই ভুমিহীনরা এসব দোকানপাট করা হয়। এরপর এসব দোকানে কাপড়, মনোহারী, হার্ডওয়ার, ইলেকট্রনিক্স, কসমেটিক, সেলুন, চা ও মুদিসহ বিভিন্ন দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন এসব ভুমিহীন পরিবারের মানুষ। কিন্তু মাসখানেক আগে ওই সড়কের প্রশস্তকরন কাজ শুরু করে কালিয়াকৈর পৌরসভা।
পরে পৌর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে সংখ্যালঘু ভুমিহীন পরিবারের লোকজন তাদের দোকানপাটের উভয়পাশে ৪ ফুট করে পিছনে সরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে স্থানীয় অর্জুন নামে বনের দালাল ও চন্দ্রা বিট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একাধিকবার সেখানে যান। এরপর তারা পুনরায় দোকান ঘর বাবদ দফায় দফায় সর্বমোট ৫ লক্ষ টাকা দাবী করে।
ভুমিহীনদের অভিযোগ, তাদের হুমকির মুখে পড়ে দোকানের মালিকরা সবাই মিলে চাঁদা তোলে ৩ লক্ষ টাকা বিট অফিসে দেওয়া হয়। এরপর গত বুধবার পূণরায় বিট অফিসের লোকজন এক লক্ষ টাকা দাবী করে। ওই দাবীকৃত টাকা না পেয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হ্যামার, কাটার, সাবল ও লাঠি নিয়ে দোকান ঘর উচ্ছেদের জন্য ওই এলাকায় যায়।
এসময় তারা দোকানের মালিকদের টেনে-হেচড়ে বাইরে বের করে এবং দোকানপাট ভাংচুর চালায়। কিন্তু চোখের সামনে জীবিকার একমাত্র অবলম্বন এভাবে ভাংচুর করতে দেখে এগিয়ে যান ভুমিহীন পরিবারের লোকজন। এসময় দোকান ভাংচুর নিষেধ করতে গেলে নারী-পুরুষ সবাইকে মারধর করে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ভুমিহীন নারীদের পরণের কাপড়-চোপড় টেনে হেচড়ে ছিড়ে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে ভুমিহীন পরিবারের লোকজন ও বনবিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ভুমিহীনদের বেপরোয়া পিটুনীতে এসময় কোনো উপায় না পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে বনের ভিতর দিয়ে পালিয়ে যান বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সেখান থেকে পালিয়ে চন্দ্রা বিট কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান, স্টাফ আলী হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, আলা উদ্দিন, জামাল হোসেন, জহিরুল, আল মামুন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিলেও অবস্থার অবনতি হলে আলাউদ্দিন, আল মামুন ও জামাল হোসেনকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ওই বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং ভুমিহীনদের মধ্যে দিলীপ বিশ্বাস, মনির হোসেন, সুভা রানী, বাতাসী রানী, রাম বর্মনসহ প্রায় ২০জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন এলাকাবাসী। এরপর ওই ভুমিহীনরা উপজেলা নির্বাহী অফিসে অভিযোগ দিতে যান।
ভুক্তভোগী বাতাসী রানী সরকার বলেন, আমরা ভুমিহীন সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন। আমরা সরকারী বনের জমিতে বসবাস করে আসছি। আর সংসার চালানোর জন্য বনের জমিতে দোকানপাট করেছি। তখন স্থানীয় দালাল ও বন অফিসের টাকা দিয়ে এসব দোকানপাট করি। কিন্তু রাস্তার পাশ বাড়ানোর জন্য দোকান ভেঙ্গে একটু পিছনে নেয়। এ সুযোগে দালাল ও বনের লোকজন ৫ লক্ষ টাকা দাবী করলে ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছি। কালকে তারা আবার আরো ১ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা বলে। টাকা না দেওয়ায় দোকান ভাংচুর করে। এসময় এগিয়ে গেলে তারা আমাদের মারধর করে।
স্বপন মিয়া বলেন, আমি সেলুনের ব্যবসা করে খাই। তারপরও টাকা না পেয়ে দোকান থেকে টেনে-হেচড়ে বের করে আমারে পিটাইছে। কাপড়ের দোকানদার আবু বকর বলেন, দোকান প্রতি ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করে তোলে তাদের ৩ লক্ষ টাকা দিয়েছি। তারপরও তারা দোকানপাট ভাংচুর করেছে। তারা হামলা ও মারধরে আমাদের ভুমিহীন অনেকে আহত হয়েছেন। টাকা নেওয়া ও টাকা চাওয়ার কথা অস্বীকার করে স্থানীয় চন্দ্রা বিট অফিসের কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, তাদের স্থাপনার বিষয়ে উপরে অভিযোগ দিলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমরা সেখানে উচ্ছেদ করতে যাই। কিন্তু তারা অতর্কিত হামলা চালালে আমরা সাতজন আহত হয়েছি।
এদের মধ্যে একজনের মাথা ফেটেছে ও একজনের হাত ভেঙ্গে গেছে। কালিয়াকৈর থানার ওসি তদন্ত তরিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনাটি মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, ওই ঘটনাটি উভয়পক্ষ মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন : টাইগারদের অনুপ্রেরণায় ‘ডঙ্কা ভাইবস’
আফজাল হোসেন