রোববার ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

দুর্জয় বাংলা || Durjoy Bangla

চেয়ারম্যান যখন শিক্ষক !

প্রকাশিত: ১৯:১৫, ১৯ অক্টোবর ২০২৩

চেয়ারম্যান যখন শিক্ষক !

চেয়ারম্যান যখন শিক্ষক !

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান মো.জাকির আলম ভূঞা। তিনি সময় পেলেই  ছুটে যান হাতের কাছে যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে ঢুকে পড়েন ক্লাসে। শুরু করেন পাঠদান। একজন পেশাদার শিক্ষকের মতোই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে  মজার সব গল্প শুনান পাশাপাশি শিক্ষাদানসহ পাঠদান করান তিনি।শুধু পড়ানোর ক্ষেত্রে নয়, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতেও নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। 

সুশিক্ষিত এই চেয়ারম্যান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভূগোল বিষয়ে প্রথম শ্রেণি প্রাপ্ত হয়ে এম এ পাস করেছেন পাশাপাশি রাজনীতিতে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পতাকাতলে তার রাজনীতির গোড়াপত্তন। বর্তমানে তিনি কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন।

লেখাপড়া শেষ করে উপজেলার গোপালাশ্রম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সুনামের সহিত শিক্ষকতা করে উপজেলার সমস্ত শিক্ষকের নেতা হিসেবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এক সময় অনুভব করেন সরকারি শিক্ষকতা এবং রাজনীতি দুটো এক সাথে করা সম্ভব নয়। অনেক চিন্তা ভাবনা করে তার স্ত্রী-সন্তানের কথা উপেক্ষা করে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের চাকুরী ইতি টেনে সরাসরি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে যান। 

গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন করেন। মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ অন্যান্য সদস্যবৃন্দ তার আবেদন যাচাই-বাচাই পূর্বক তাকে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক দেন। নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে নৌকা প্রতীককে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে উপহার দেন তিনি। তারপরও কিন্তু শিক্ষকতা করার সুপ্ত বাসনা এখনো হৃদয়ে ধারণ করেন তিনি। আর এজন্য চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই চলে যান কোনো স্কুলে।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, উপজেলার বড়তলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক  ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন তিনি। এসময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছাত্তার ও শ্রেণি শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

এবিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহুল মিয়া ও হেপী আক্তার বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের গণিত ক্লাস নিয়েছেন। ক্লাসে এসে আমাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন এবং মজার মজার গল্প বলেছেন।সেই সঙ্গে কীভাবে পড়া মনে রাখা যায়, সেই নিয়মও শিখিয়ে দিয়েছেন তিনি। 

বড়তলা সরকারি প্রাথমিক  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব সময় পেলেই মাঝে মধ্যে হঠাৎ করে স্কুলে আসেন। এটা উনার পুরানো অভ্যাস। বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে পাঠদান করান। স্কুল আঙিনা ঘুরে দেখেন। একই সঙ্গে শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শ দেন। মনে হয় যেন শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরাও নতুন কিছু শিখছি। শেষে তিনি ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মাঝে চকলেট বিতরণ করেন।

পাঠদানের বিষয়ে চেয়ারম্যান মো. জাকির আলম ভূঞা  বলেন, আমি নিজেও আগে শিক্ষক ছিলাম তাই বাচ্চাদের পড়াতে খুব ভালো লাগে। শিক্ষাজ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার মতো আনন্দ আর কিছুতে নেই। ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ানো অসাধারণ ব্যাপার। এতে দুটি লাভ হয়।  বাচ্চাদের পড়াতে পারছি আবার ওই স্কুলে কোনো সমস্যা আছে কিনা, সেটাও সরেজমিনে দেখতে পারছি। 

তিনি আরো বলেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী এবং দেশের একজন নাগরিক হিসেবে শিক্ষা খাতের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমি সুযোগ পেলেই বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়ে থাকি। 

আরও পড়ুন: কেন্দুয়ায় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ট্রাস্টের ৪০ হাজার টাকার পেল ৬ষ্ট শ্রেণির তৌহিদ 


Notice: Undefined variable: sAddThis in /home/durjoyba/public_html/details.php on line 808