আকিব শিকদার ছবি: সংগৃহীত
আধপোড়া সিগারেটে পুনরায় জ্বালাই আগুন, কাচফাটা চশমাটা
নাকের ডগায়, মুখময় বার্ধক্যের জ্যামিতিক রেখা।
কানের গোড়ায় সাদা চুল জানিয়ে দেয় বয়স। আমি যেনো
নিবিড় গুহায় নিদ্রিত বুড়ো সিংহ, পড়ে আছি অসহায়।
তবু অনাচার দেখলেই জ্বলে ওঠে গা, মনে হয়
শরীরময় এসিড, জামার ভেতর কেউ ছেড়েছে মুঠো ভরা বিষপিঁপড়ে।
নক্ষত্র খসে পড়লে আকাশের খুব বেদনা হয়। আমাদের
বেদনা হয় যখন স্বপ্নগুলো বালির বাঁধের মতো গড়িয়ে যায়।
যখন আশার শ্যামল ডগা নেতিয়ে পড়ে, বইয়ের পাতার ভাঁজে
গোলাপ-পাপড়ির মতো শুকিয়ে হয় কাঠ।
যখন আমাদের বালিশ-তলায় চাবির গোছার মতো
যত্নে আগলে রাখা সন্তানেরা
হয়ে যায় হায়েনার শিকার। আমাদের খুব বেদনা হয়...
চলার পথে শত্রুরা ছড়িয়ে রাখে কাঁটা, উটকো পাথর।
ওরা তো জানে, জল ঘোলা করলেই
মাছেরা পড়বে বিপাকে; হঠাৎ আলো নিভে গেলে
যেমন বিপাকে পড়ে পতঙ্গ।
শকুনের চোখ আর ঠোঁটের আঘাতে মুমূর্ষ জীবন, বরফে জাহাজ
এঁটে যাওয়ার মতো স্তম্বিত জীবনের সাবলীল গতি।
যেন কাশের গভীর অরণ্যে বালিহাঁসের
রক্তস্রোত বইয়ে দিলো একটা শিয়াল।
এক ফোঁটা স্নিগ্ধ শিশিরের জন্য, একটা ফুটন্ত গোলাপের জন্য
আমাদের চোখে অশ্রু। যেন আমরা কাচের বৈয়ামবদ্ধ তেলাপোকা
নিঃশ্বাসের যন্ত্রণায় ধুঁকছি ভীষণ।
কাল-গোখরার বিক্ষুব্ধ তান্ডবে ফুঁসে উঠবই একদিন, প্রতিবাদে
মারবো ছোবল। রক্ত জবার মতো লাল চোখ, রক্তিম দৃষ্টিতে
ঝরিয়ে আগুনের ফুলকি জ্বালাবোই সত্য আলোর শিখা।
মানবো না বেআইনি আইন। যতক্ষণ বাঁচি
চলবো তেজোদ্দীপ্ত ভঙ্গিমায়, যদি মৃত্যু আসে
করবো আলিঙ্গন মরণেরে অগ্নিমুখ পতঙ্গের মতো।
ঝাপসা পৃথিবী দেখতে চাই না আর, ছুঁড়ে ফেলে
ভাঙা চশমা, মুখ থেকে টেনে তুলে বার্ধক্যের ছাপ
পায়ের তলায় চাপা দিয়ে জ্বলন্ত সিগারেট, কালো ধোঁয়ার
কুন্ডলি ভেদ করে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছে করে আমার।