
রামগঞ্জে ফসলি জমিতে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন
আইন অনুযায়ী সড়ক, বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ, বনভূমি, শিক্ষাপ্র্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দীর, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, ব্রিজ, সড়কসহ সরকারের গুরুত্তপূর্ন কোনো স্থাপনা কিংবা আবাসিক এলাকা হতে সর্বনিম্ন ১ কিলোমিটারের মধ্যে পাম্প, ড্রেজিং কিংবা অন্যকোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা নিষিদ্ধ। কিন্তু এখানে তা মানা হচ্ছে না। প্রশাসনও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষি জমিতে চলছে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। গত কয়েক মাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শ্যালো মেশিনের ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে চলেছে স্থানীয় বালুদস্যুরা।
এতে একদিকে যেমন হুমকির মুখে পড়েছে গ্রামের শত শত বিঘা ফসলি জমি, বনভূমি, শিক্ষাপ্র্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দীর, ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, ব্রিজ, সড়কসহ সরকারের গুরুত্তপূর্ন স্থাপনা, অন্যদিকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসনের নীরবতায় বন্ধ হচ্ছে না অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। শিগগিরই বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে সামান্য মাত্রার ভূমিকম্পে ভূমিধস হয়ে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা, জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলার বিভিন্ন স্তরের লোকজন।
০৪ আগষ্ট শুক্রবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনয়িন ঘুরে দেখা যায়, রামগঞ্জ-নাগের হাট সড়কের চন্ডিপুর দাস বাড়ির রাধা গোবিন্ধ মন্দীরের ৫০ গজের মধ্যে ফসলি জমিতে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন কবির হোসেন। অথচ এর দক্ষিণ পাশেই রামগঞ্জ-নাগের হাট সড়ক। আর এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে চন্ডিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আল-আমিন মাদ্রাসা, মসজিদ ও এর চার পাশে রয়েছে জনবসতি। ব
কুলতলা বাজার থেকে চাঙ্গীরগাঁ বাজার মধ্যবর্তী স্থানে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে উপজেলা চেয়ারম্যানের সি.এ ফয়েজ আহম্মেদ। নাগের দিগীর পাড় এলাকার জনবসতিপূর্ন স্থানে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ইকবাল পাটওয়ারী ও তার ভাই মিলন পাটওয়ারী। এছাড়া উপজেলার কাঞ্চনপুর, নোয়াগাঁও, ভাদুর, ইছাপুর, চন্ডীপুর লামচর, করপাড়া, দরবেশপুর, ভোলাকোট, ভাটরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার পার্শ্বে, ফসলি জমিতে কিংবা জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে।
বালু ব্যবসায়ী ইকবাল পাটওয়ারী বলেন, নাগের দিঘীর পাড় এলাকায় যেখানে ড্রেজার বসিয়েছি তা রায়পুর উপজেলায় পড়ছে। সংশ্নিষ্ট সবাইকে ম্যানেজ করেই বালু উত্তোলন করছেন তিনি। আরেক বালু ব্যবসায়ী আলী হোসেন জানান, মাছ চাষের জন্য তিনি ড্রেজিং করে বালু বিক্রি করেন। কারও ক্ষতি করেন না তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যানের সি.এ ও ড্রেজার মলিক ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, সংশ্নিষ্ট সবাইকে ম্যানেজ করেই ড্রেজার ব্যাবসা চালাচ্ছেন তিনি। ড্রেজার মালিক নাছির, নুর আলমসহ কয়েকজন জানান, ফুট হিসেবে বালু উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তারা।
চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম সুমন বলেন, ফয়েজসহ ড্রেজার ব্যাবসায়ীদের বহুবার নিষেধ করেছি, কিন্তু তারা কোন কথা শুনছেনা। এবার তারা বন্ধ না করলে তাদের বিরুধে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রায়হান হায়দার বলেন, কৃষি জমিতে ড্রেজার দিয়ে খনন করে বালু বিক্রি করলে এ অঞ্চলে কৃষি জমির পরিমাণ কমবে এবং সেসঙ্গে উৎপাদন ক্ষমতাও কমে যাবে। এভাবে বালু বিক্রি করলে কৃষি জমির যে ক্ষতি হয় তা একশ বছরেও পুরন করা স¤ভব নয়। আগামীতে ফসল উৎপাদন বাড়াতে হলে ড্রেজিং করে বালু উত্তলন বন্ধ করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শারমিন ইসলাম বলেন, ড্রেজিং করে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন আইনগত নিষিদ্ধ। শিগগিরই এদের বিরুধে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেয়া হবে।