ব্যবসায়ীর পণ্য জব্দ করে প্রার্থীর ঘাড়ে দোষারোপ
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জব্দকরার সময় ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল (লাক্স সাবান, তোয়ালে ও জর্দ্দা) কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সালমা আক্তারের, কিন্তু পুলিশী তদন্তে অই ৩৫ লাখ টাকার বিভিন্ন মালামাল মিল্টন স্টোরের প্রোপাইটার কবির আলম ভূঞার। এ নিয়ে সমাজে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
অনেকেই বলছেন এই ৩৫ লাখ টাকার মালামাল মিল্টন স্টোরের মালিক কবির আলম ভূঞার, তবে কেন নির্বাচনের একদিন আগে জব্দ করে সালমা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হলো? আবার অনেকেই বলছেন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উদঘাটন না হলেই সমাজে এরকম অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলবে।
গত ৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় ৪র্থ ধাপের কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। এর মধ্যে মোটর সাইকেল প্রতীক নিয়ে কোমড় বেধেঁ মাঠে ছিলেন চিরাং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সালমা আক্তার। জানাযায়, নির্বাচনের এক দিন আগে গোপন সূত্রে খবর পান উপজেলা প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, ঐ দিন খবর পেয়ে রাতে তারা ছুটে যান ছিলিমপুর নূরুল ইসলাম কওমি মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে। সেখানে গিয়ে দেখতে পান মজুদকৃত বিপুল পরিমাণ মালামাল (লাক্স সাবান, তোয়ালে, জর্দ্দার কৌটা) প্যাকেট করা হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতি দেখে বেশ কয়েকজন শ্রমিকরা দৌড়ে পালিয়ে যান। এক জন শ্রমিক ম্যাজিস্ট্রেটকে জানায়, মজুদকৃত মালামাল সালমা আক্তারের।
তিনি ভোটারদের মাঝে বিতরণের জন্য ছোট ছোট প্যাকেট আকারে তৈরি করছেন তৈরি করছেন বলে জানান ওই শ্রমিক। তার এ বক্তব্য ভিডিও করে মামলার সাথে জমা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদারের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করে ৩৫ লাখ টাকা মালামাল জব্দ করা হয়। সে সময়ে জব্দকৃত মালামাল চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল কবির খানের জিম্মায় দেওয়া হয়।
৬ জুন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১৬ এর ১৭(গ) ধারার পরিপন্থী নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘন ২০১৬ মোতাবেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: রাজিব হোসেন বাদী হয়ে সালমা আক্তারসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে কেন্দুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মালমা নং-৭(৬)২৪।
তিনি মামলা দায়েরের এজাহারে উল্লেখ করে বলেন, প্রার্থী সামলা আক্তারের মজুদকৃত পণ্য সমূহের নমুনা দেখে এটা স্পষ্টত প্রতিয়মান হয় যে তিনি ভোটারদের প্রলুব্ধ করার উদ্দেশ্যে মালামাল মজুদ করেছেন যা নির্বাচন আচরণবিধি ২০১৬ এর ১৭(গ) পরিপন্থী।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ দত্ত জানান, জব্দকৃত ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের লাক্স সাবান, তোয়ালে ও জর্দ্দার কৌটা ও তিনটি মোটরসাইকেল ৯ জুন থানায় এনে সংরক্ষণ করা হয়। ১১ জুন জামিনে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান সালমা আক্তার।
২৩ জুন মিল্টন স্টোরের মালিক কেন্দুয়া পৌর এলাকার ওয়াশেরপুর (চকবাট্টা) গ্রামের বাসিন্দা মো: কবির আলম ভূঞা নেত্রকোনা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতে দাবি করে আবেদন জানান ওই মালামাল তার ক্রয় করা।
আদালতের বিচারক আবেদনটির তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে ৩০ জুন আদালতে প্রতিবেদন জমাদেন তদন্ত কর্মকর্তা। তদন্ত কর্মকর্তার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলেন, কাগজপত্র যাচাই বাচাই করে দেখা যায় মিল্টন স্টোরের ।
পরে আদালতের বিচারক শাহরিয়ার শাসম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নেত্রকোনা ২৮ জুলাই জব্দকৃত মালামাল মিল্টন স্টোরের মালিকের অনুকূলে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে ২৯ জুলাই থানা থেকে মিল্টন স্টোরের মালিককে সব মালামাল বুঝিয়ে দেন তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলাটি কি পর্যায়ে আছে জানতে চাইলে মঙ্গলবার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) দেবাশীষ দত্ত বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। এর বেশি তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি। তবে সালমা আক্তার মালামাল জব্দের পর থেকেই বলে আসছিলেন ওই মালামাল মিল্টন স্টোরের। মাদ্রাসার সাথে চুক্তিপত্র করেই এখানে মালামাল রেখে ছিলেন।
সালমা