
মোহনগঞ্জের শ্যামপুরের কুঁড় নামক উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরতে বাঁধা
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার "শ্যামপুরের কুঁড়" নামক একটি উন্মুক্ত জলাশয়ে এলাকার সাধারন লোকজনদেরকে মাছ ধরতে বাঁধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার বিকেলে এলাকাবাসীর পক্ষে ওই জলাশয়টির তীরবর্তী গেইরাহাইর গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল আলম অরফে আতিক মিয়া (৫৫) বাদি হয়ে একই এলাকার মাসুদ মিয়া (৫৫), ফারুক মিয়া (৪৮), হৃদয় মিয়া (২৬), জামাল মিয়া (৫২) সহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মোহনগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ, পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ডিঙ্গাপোতা হাওরের অধীনে থাকা শ্যামপুর মৌজায় প্রায় ৫ একর খাস জায়গা নিয়ে শ্যামপুরের কুঁড় নামক ওই উন্মুক্ত জলাশয়টির অবস্থান। জলাশয়টির আশপাশের সকল বোরো জমির মালিকগণ উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়নের শ্যামপুর, গেইরাহাইর, নওগাঁ ও নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
যুগ-যুগ ধরে ওইসব গ্রামের লোকজন এ উন্মুক্ত জলাশয়টি থেকে বোরো জমিতে সেচ দেওয়া, গরু-বাছুরকে গোসল করানোর পাশাপাশি এ জলাশয়টি থেকে মাছ ধরে তারা তাদের পরিবারের দৈনন্দিন মাছের চাহিদাও পূরণ করে আসছিলেন।
এছাড়াও এ জলাশয়টি গত ২০০৮ সালে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজারা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। পরে প্রশাসনের এ প্রস্তাবটি বাতিল চেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নেত্রকোনা যুগ্ন দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হলে বিজ্ঞ আদালতের বিচারক উক্ত জলাশয়টি জনস্বার্থে উন্মুক্ত ঘোষণা করে রায় প্রদান করেন।
চলতি বছর হাওর থেকে বর্ষার পানি কমার সঙ্গে-সঙ্গে গত প্রায় এক মাস ধরে শ্যামপুরের কুঁড় নামক ওই জলাশয়টি মাসুদ মিয়া, ফারুক মিয়া, হৃদয় মিয়াসহ এলাকার ২২ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি সেখানে বাঁশ ও কাটা পুঁতে জলাশয়টি দখলে নেন এবং তারা সেখান থেকে প্রতিদিন জাল দিয়ে হাজার-হাজার টাকার মাছ ধরে বিক্রি করে আসছেন।
এলাকার সাধারন লোকজন সেখানে মাছ ধরতে গেলে তারা তাদেরকে মাছ ধরতে বাধা দিয়ে আসছেন। এমনকি সাধারন লোকজনের জাল ও নৌকা আটকে রেখে দেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে তাদের হুমকিতে এলাকার সাধারন লোকজন ওই জলাশয়ে মাছ ধরতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে গেইরাহাইর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বলেন, আমরা এ জলাশয়টি জোর করে দখল করিনি। এ অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, মূলত এ জলাশয়টি আমাদের চার গ্রামের সম্পদ।
প্রতি বছর আমরা চার গ্রামের সকল শ্রেণী পেশার লোকজন বসে সেটি আমরা কয়েক মাসের জন্য ইজারা দেই এবং ইজারার টাকা চার গ্রামের মসজিদ-মাদরাসা উন্নয়ন কাজে ব্যয করার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট সংস্কার ছাড়াও প্রাকৃতিক দূর্যোগকালে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত কাজে ব্যয় করা হয়ে থাকে। কিন্তু গত দুই বছর আতিক মিয়া ওই জলাশয়টি গ্রামবাসীর কাছ থেকে ইজারা নিয়ে সে কোনো টাকা দেয়নি। এবারো সে এই কুঁড়টি ইজারায় নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে থানায় এ মিথ্যা অভিযোগটি দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উন্মুক্ত কোনো জলাশয় ইজারা দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। তবে অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুনঃ সিলেট মহানগর যুবলীগের দুই নেতা র্যাবের হাতে গ্রেফতার
হাফিজুর রহমান চয়ন