মোহনগঞ্জে প্রতিপক্ষের বদলে মোটরসাইকেল চালক নির্যাতিত

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে প্রতিপক্ষকে না পেয়ে হোসেন মিয়া (৪০) নামে যাত্রীবাহী এক মোটরসাইকেল চালককে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার  হওয়া ওই মোটরসাইকেল চালককে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে  ভর্তী করা হলে তার অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন।

নির্যাতনের শিকার হোসেন মিয়া উপজেলার মান্দারবাড়ি গ্রামের মৃত নূরুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীবাহী মোটরসাইকেল  চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।

শুক্রবার উপজেলার মানশ্রী কান্দাপাড়া গ্রামের করিম মিয়ার বাড়িতে ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টা  থেকে শুরু করে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ওই মোটরসাইকেল চালককে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চোলানো হয়।

হাসপাতাল, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, উপজেলার মাঘান-সিয়াধার ইউনিয়নের মানশ্রী কান্দাপাড়া গ্রামের আব্দুল করিম (৫৫) ও একই গ্রামের শাস্তু মিয়া(৪৮) নামে তারা দুই ব্যক্তি লাড়-বর্শী দিয়ে মাছ শিকারী বেশ কিছুদিন যাবত একই ইউনিয়নের মান্দারবাড়ি গ্রাম সংলগ্ন ধনু নদে একটি ছোট নৌকায় করে লাড়-বর্শী দিয়ে মাছ শিকার করে আসছিলেন। 

নদীতে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার বিকেলে মান্দারবাড়ি গ্রামের আলেক মিয়া ও সাবুল মিয়ার সাথে তাদের কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে গাগলাজুর বাজারের ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিনের দোকানে বসে স্থানীয়রা মীমাংসা করে দেন। 

এ ঘটনার জের ধরে পরদিন শুক্রবার দুপুর ১২ টার দিকে আব্দুল করিম ও শাস্তু মিয়া মোহনগঞ্জ পৌর শহরের কাচারী রোডে মান্দারবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক হোসেন মিয়াকে দেখতে পান। সেখান থেকে তারা কৌশলে হোসেন মিয়ার মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে নিজ বাড়ি উপজেলার মানশ্রী কান্দাপাড়া গ্রামে যান। নিজেদের বাড়িতে যাওয়ার পরই তারা হোসেন মিয়ার হাত-পা বেঁধে তাকে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন। 

মারধরের এক পর্যায়ে হোসেন মিয়া প্রসাব করে দেন। এ ভাবেই তারা তাকে প্রায় সাড়ে ৪ঘন্টা ব্যাপী নির্মমভাবে নির্যাতন চালান। মারধরে হোসেন মিয়ার বাম হাতের উপরে অংশটি ভেঙে যায় এবং তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

পরে খবর পেয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখান থেকে হোসেন মিয়াকে উদ্ধার করে মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তী করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন।

মোহনগঞ্জ থানা রোডস্থ ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান জানান, হোসেন মিয়া একজন নিরীহ প্রকৃতির লোক এবং সে আমাদের সংগঠনেরই সদস্য। সে গত প্রায় ৬-৭ বছর যাবত মোহনগঞ্জ থেকে এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভাড়ায় যাত্রীবাহী মোটরসাইকেল চালিয়ে আসছে। একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে এমন নিষ্ঠুরভাবে মারধরের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার পার্থ সরকার বলেন, অতিরিক্ত মারধরে হোসেন মিয়ার বাম হাতের উপরে অংশটি ভেঙে গেছে। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে মমেক হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুরে ২ হাজার বন্যার্ত পেলো বিনামূল্যে চিকিৎসা