
ধর্মপাশায় পিআইসি কমিটি গঠনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজে পাউবো'র গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাউবোর নীতিমালা অনুযায়ী হাওরে জমি আছে এমন কৃষকদের সমম্বয়ে পিআইসি কমিটি গঠনের কথা থাকলেও এখানে জমি নেই এমন লোকজনদেরকে দিয়ে পিআইসি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এমন অভিযোগ এনে সোমবার বিকেলে উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের বানারশিপুর গ্রামের মজিবুর রহমান মজুমদার ৬৮ নম্বর প্রকল্প কমিটির বিরুদ্ধে এবং একই গ্রামের বাসিন্দা সুমন মজুমদার নামে অপর এক কৃষক বাদি হয়ে ৬৯ নম্বর প্রকল্প কমিটির বিরুদ্ধে পৃথক এ দুইটি লিখিত অভিযোগ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর দায়ের করেছেন।
জেলা প্রশাসক বরাবরে দায়েরকৃত পৃথক এ দু'টি অভিযোগ থেকে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পাউবো'র অধীনে থাকা ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সাতারিয়া-পাথারিয়া হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের ৬৮ নম্বর উপ-প্রকল্পের এলাকার অধীকাংশ বোরো জমির মলিক হলেন, উপজেলার বানারশিপুর গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান মজুমদার ও একই বাঁধের ৬৯ নম্বর প্রকল্পের অধিকাংশ জমির মালিক হলেন, একই গ্রামের সুমন মজুমদার নামে ওপর এক কৃষক।
উক্ত দু'টি প্রকল্পের বাঁধে মাটি ভরাটের জন্য কৃষক মজিবুর রহমান ও কৃষক সুমন মজুমদারদের পৈত্রিক জায়গা ছাড়া মাটি উত্তোলন করার কোনো সুযোগ নেই। প্রতি বছরই ওই দু'টি প্রকল্পের বাঁধের কাজের জন্য রবিশস্য ফলানোর উপযোগী সমতল উঁচু ভুমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ায় সেখানে বড়-বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ার ফলে তাদের ওইসব জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হয়নি।এতে মারাত্মকভাবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। আর এসব কারন দেখিয়ে তারা দুইজনই এবার চলতি বছরে সাতারিয়া-পাথারিয়া হাওরের ৬৮ ও ৬৯ নম্বর পৃথক এ প্রকল্প দুইটির পিআইসি হওয়ার জন্য উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির বরাবরে লিখিতভাবে আবেদন করেন।
সে অনুযায়ী গণ-শুনানিতেও তাদের আবেদনের এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় এবং এ দুইটি প্রকল্পের পিআইসি তাদেরকেই করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে উক্ত দুই ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে হাওরে জমি নেই এমন দুই ব্যক্তিকে পিআইসি করে প্রকল্প কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। যা সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূত।
এবিষয়ে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ৬৮ নাম্বার প্রকল্প কমিটির সভাপতি (পিআইসি) মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ ওই হাওরে আমার প্রায় ৮ একর বোরো জমি রয়েছে। গণশুনানির সময় আমার জমির কাগজপত্র দেখেই আমাকে পিআইসি করেছেন।
সুনামগঞ্জ পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এ দুটি অভিযোগ সঠিক নয় উল্লেখ বলেন, পিআইসি কমিটি গঠনে কোনো অনিয়ম হয়নি। উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি যাচাই-বাছাই এবং গণশুনানির মাধ্যমেই প্রকল্প কমিটি গঠন করা হয়েছে। এমনকি যারা অভিযোগ করেছেন, তাদেরই পরিবারের সদস্য আজিজুর রহমান মজুমদারকে ৬৭ নম্বর প্রকল্পের পিআইসিও করা হয়েছে।
উপজেলা কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্বায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো. ওয়ালিদুজ্জামান বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ইলিয়াস মিয়া বলেন, অভিযোগতো আমার কাছে অনেক আসে। তবে এ দুইটি অভিযোগ আমার নজরে আসার পর অবশ্যই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: ৩০ লক্ষ নয়, ৩ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে: মেজর ডালিম
হাফিজুর রহমান চয়ন