মুন্সীগঞ্জে বারেক হত্যা মামলার ৩ আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড
মুন্সীগঞ্জে হত্যা মামলায় মো. মিলন শিকদার (৩৪), মো. ফয়সাল জুয়েল শেখ (২৮), মো. নাজির হোসেন মোড়ল নামে ৩ আসামীর যাবজ্জীবন সশ্রম করাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডের রায় দিয়েছে আদালত। এছাড়াও অপর দন্ডবিধি ৩৯৪ ধারার অপরাধে আসামীদের দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের সশ্রম করাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ডের রায় দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারী) দুপুর ১২টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কাজী আবদুল হান্নান এ রায় দেন। এ সময় আসামীদের পুলিশ পাহারায় আদালতে হাজির করা হয়। গ্রেফতারের পর হতেই আসামিরা জেলহাজতে অন্তরীণ আছেন। আসামী মিলন শিকদার লৌহজং উপজেলার উত্তর মসদগাঁও গ্রামের মৃত নাজির আহমেদ শিকদারের ছেলে। মো. ফয়সাল (@ জুয়েল শেখ একই এলাকার মিলন খানের ছেলে। মো.নাজির হোসেন মোড়ল একই গ্রামের মৃত বাদশা মোড়লের ছেলে। আদালতের ব্রেঞ্চ সরকারী মোঃ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা গেছে, নিহত আঃ বারেক শেখ (৪৪) টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সহকারী উদ্যোক্তা ছিলেন। গত ০৭ জানুয়ারী ২০২১ই তারিখ সকালে আঃ বারেক শেখ বাসা হতে তাহার অফিসের উদ্দেশ্যে বাহির হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে টংগিবাড়ী থানা পুলিশ নিহতের বাবা মোস্তফা শেখ@ মোড়ল (৬০) কে জানায় আঃ বারেক শেখ জখম প্রাপ্ত হয়ে বলই টু তৌলকাই গামী ব্রিজের মাঝামাঝি রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বে থাকা বিদ্যুতের খুটির পাশে পড়ে আছে।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন ও তারিখে এই আসামীরা লৌহজং উপজেলা হতে পাশের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বালিগাঁও বাজারে মোটর সাইকেলযোগে এসে ব্যাংক এশিয়ার সামনে অবস্থান নেয়। তাদের একজন ব্যাংকে ডুকে বেশী টাকা উত্তোলনকারীকে সনাক্ত করতে থাকে। অপর দুই জন ব্যাংকের সামনে অবস্থান করতে থাকে। ওই সময় নিহত আবদুল বারেক শেখ ব্যাংক থেকে কাঁদে একটি স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে দ্রুত ওই ব্যাংক থেকে নেমে অটো রিকসা যোগে টংগীবাড়ী বাজারের দিকে রওনা করে। তখন আসামীগণ মোটর সাইকেলযোগে অটো রিক্সাটিকে অনুসরণ করতে থাকে। ভিকটিমকে বহনকারী অটো রিক্সাটি টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বলই টু তোলকাই গামী ব্রীজের মাঝামাঝি নির্জন স্থানে পৌঁছলে আসামীরা অটো রিক্সাটি থামিয়ে ভিকটিমকে অটো রিক্সা থেকে নামতে বলে।
নিহত নামতে না চাওয়ায় আসামী ফয়সাল তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে নিহতের কাঁদের বাম পার্শ্বে আঘাত করে। ভিকটিম অটোরিক্সা থেকে পড়ে গেলে আসামী মিলন ভিকটিমের পিঠের বাম পার্শ্বে আঘাত করে, ভিকটিমের সাথে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। আসামীদের আঘাতের ফলেঘটনাস্থলেই ভিকটিম মারা যায়। পরে ওই ঘটনায় নিহতের বাবা মোস্তফা বাদী হয়ে টঙ্গীবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করলে ওই মামলায় মোট ১৯জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে। এছাড়া আসামিরা গ্রেফতারের পর আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে। পরে এই ৩ আসামিকে ৩০২ ধারার অপরাধে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরো ০১ (এক) বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড। দন্ডবিধির ৩৯৪ ধারা অপরাধে ১০ (দশ) বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ২০,০০০/- (বিশ হাজার) টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ০৬ (ছয়) মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে।
এ ব্যাপারে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা কে.এম রিয়াজুল বলেন, সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি সনাক্ত করে এটি উদ্ধারের পর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামীদের বিভিন্ন কৌশলে গ্রেফতার করা হয় এবং আসামীদের দেওয়া তথ্যমতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি এবং খেলনা পিস্তলসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর আসামিরা ৩ জনই আদালতে বিচারকের কাছে ঘটনা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। আসামীরা গ্রেফতার হওয়ার পর হতে পুলিশ হেফাজতে আছে। এ ব্যাপারে ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পিপি আব্দুল মতিন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট প্রকাশ করছে।
আরও পড়ুন: অর্ধ কোটি টাকার মাটি বিক্রি করছে প্রভাবশালী মহল: প্রশাসন নীরব