
ভাতাভোগীদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র
নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর অধিকাংশরই মাথায় হাত পড়েছে। ঈদ উপলক্ষে জুন ২০২৩ মাসে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ভাতার টাকা জমা হয়। অসহায় মানুষেরা ওই টাকা দিয়ে ঈদ করার জন্য অধির আগ্রহে বসে থাকে। তারা নিজেদের চিকিৎসা সহ সাংসারিক বিভিন্ন কাজে ওই টাকা ব্যায় করেন।
কিন্তু উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত একটি মঠোফোনের নাম্বার থেকে ভাতাভোগীদের কাছে কল দিয়ে তাদের কাছে হিসাব নম্বরের পিন কোড ও ওটিপি নাম্বার জানতে চায়। পরে সহজ সরল ভাতাভোগীরা অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়ায় তাদের পিন কোড ও ওটিপি নম্বর দিয়ে দেন। এর পরই প্রতারক চক্র ওই ভাতাভোগীর টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের পকেটস্থ করেন।
কেন্দুয়া উপজেলায় সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলা বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৪৪৩ জন, বিধবা ভাতাভোগীর সংখ্যা ৮
হাজার ৯৮৯ জন ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী ৫ হাজার ৬৪৫ জন। প্রতি তিনমাস, ছয় মাস এবং ক্ষেত্র বিশেষ ১ বছর পর পর তাদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নম্বরে এককালীন ওই টাকা জমা হয়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পুরনো এবং নতুন তালিকাভ‚ক্ত ভাতাভোগীদের টাকা চলতি জুন মাসে তাদের হিসাব নম্বরে জমা হয়।
টাকা জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারক চক্রটি অনেক ভাতাভোগীদের কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যাদের টাকা হ্যাক করা হয়েছে তাদের নগদ এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে তথ্য হালনাগাদ করতে হবে। অথবা নতুন একাউন্ট খোলা মোবাইল নম্বর দিয়ে সমাজসেবা অফিসে জমা দিতে হবে। নতুবা আবার টাকা আসলে প্রতারক চক্রটি আবার টাকা নিয়ে নিবে। সান্দিকোনা ইউনিয়নের আটিগ্রামের বাসিন্দা আবেদা খাতুন জানান, তার ছেলের
প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে এবারই প্রথম ১০ হাজার ২শ টাকা জমা হয়েছিল। কিন্তু গত ৬ জুন সমাজসেবা অফিসের
কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পিন কোড জানতে চায়।
আমি সরল বিশ্বাসে অফিসে কর্মকর্তা ভেবে পিন কোড নাম্বারটি তাকে দিয়ে দেই। পরে নদেখতে পাই হিসাবে আর কোন টাকা নেই। এখন আমি কি করব ভেবে পাচ্ছিনা। বৃদ্ধ নূরুল ইসলাম জানান, আমার মতো অনেক বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের টাকা প্রতারকরা নিয়ে গেছে। কৌশল একটাই পিন কোড নম্বর চাওয়ার আগে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পাইকুড়া ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইসলাম উদ্দিন, আশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুর আলী, গড়াডোবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খান সোহাগ, মাসকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বাঙ্গালী ও গন্ডা ইউনিয়ন পারিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম আকন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালালকে তার কার্যালয়ে ভাতাভোগীদের টাকা প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এরকম ঘটনা অনেক বলে জানান। তারা বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভাতাভোগীদের পিনকোড নিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে যান। এ বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালাল বলেন, তদন্তপূর্বক খতিয়ে দেখে দুই চারজনকে ধরে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। এদিকে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমানের ভাষা, প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকার জন্য তিনি সমাজ সেবা কার্যালয়ের ফেইজ থেকে ভাতাভোগীদের সতর্ক করেছেন। এর পরও পিনকোড নম্বর নিয়ে প্রতারক চক্রটি ভাতা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমরা তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।